বঙ্গনিউজ ডটকম,জাহিদুল ইসলাম জাহিদঃ দুপুরের খাবার বিরতি শেষ হয়ে গেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে প্রায় সবাই নিজনিজ চেয়ারে বসেছেন। সবাই যথারীতি আবারো কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এর মধ্যেই গ্রাহকবেশে ৯/১০ জন একসঙ্গে ঢুকে পড়ে ব্যাংকের ভেতরে।গ্রাহকদের সহায়তা করতে কেউ কেউ নড়েচড়ে বসছিলেন। কিন্তু ওরা তো কোনো গ্রাহক নয়। মুহূর্তেই পাল্টে যায় পরিস্থিতি। আধুনিক অস্ত্রেশস্ত্রে রীতিমত সজ্জিত। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফেলে নিরাপত্তারক্ষীসহ সবাইকে।এরপর শুরু হয় তড়িৎ গতিতে লুটপাট, মারপিট। যেন ফিল্মের কোনো মাফিয়া চক্রের হামলার দৃশ্য। সাভারের আশুলিয়া এলাকায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যংকের কাঠগড়া বাজার শাখায় এভাবেই শুরু হয়েছিল ডাকাতি। তখন বিকেল সাড়ে তিনটা প্রায়।এ ঘটনা অবগত হয়ে ভয়ে আতঙ্কে কেউ বাংকের ভেতরে ঢুকতে পারেনি কিন্তুতারা বসে থাকেনি। স্থানীয়রা দৌড়ে গিয়ে মসজিদের মাইকে জানিয়ে দেন ব্যাংক ডাকাতির খবর। এ খবরে ডাকাতরা সতর্ক হয়ে ওঠে।নগদ টাকা লুটপাট করে দ্রুত ব্যাংক থেকে বের হয়ে আসে। এরপর তারা পালিয়ে যেতে উদ্যত হয়। কিন্তু চারপাশে পরিস্থিতি বেসামাল দেখে গুলিবর্ষণ করতে থাকে তারা। এতে ভয়ে কিছুটা পিছু হটে স্থানীয়রা। আতঙ্ক ছড়াতে ডাকাতরা কয়েকটি ককটেলআর গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায়।ডাকাত দলের নির্বিচারে গুলিতে বিদ্ধ হয় এলাকার নিরীহ চার বাসিন্দা। এরপর ক্ষোভে ফেটে পড়ে এলাকাবাসী। ডাকাতদের আটকানোর চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু আধুনিক অস্ত্রের মুখে পিছু হটে। নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে নিরাপদে পালিয়ে যাওয়া অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল ডাকাতদের কাছে।এর প্রমাণ মিলেছে কাঠগড়া বাজার পেরিয়ে আমতলা এলাকার জিরাবো-বিশমাইল সড়কে পৌঁছলেই। আধুনিক অস্ত্র উপেক্ষা করে এক ডাকাতকে আটক করে স্থানীয়রা। এরপর খানিক দূরে গিয়ে দুর্গাপুর এলাকা থেকে ডাকাত দলের আরো দুই সদস্যকে আটক করে এলাকাবাসী। ক্ষোভে ডাকাতদের গণপিটুনি দেয়া হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় এক ডাকাত।ঘটনার পরে স্থানীয়রা ব্যাংক শাখায়গিয়ে দেখতে পায় লোমহর্ষক মর্মান্তিক ঘটনা। পুরো কার্যালয়েছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে রক্ত আর রক্ত। মেঝেতে পড়ে যাওয়া রক্ত জমাট বেঁধেছে। কিন্তু ঘণ্টা দুয়েক আগেও ছিল প্রাণচঞ্চল।সেখানে নেমে আসে কবরস্থানের নিস্তব্ধতা। শুধু মেঝেতে ছোপ ছোপ রক্ত আর রক্ত। ডাকাতদের নির্বিচারে ছুরিকাঘাত আর ধারালো অস্ত্রের হামলায় ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কমবেশি সবাই রক্তাক্ত।প্রাণ হারিয়েছেন ব্যাংক ম্যানেজার ওয়ালিউল্লাহ (৪৫), নিরাপত্তা প্রহরী বদরুল (৩৮), বাংকের গ্রাহক ব্যবসায়ী পলাশ (৪৮), বাংক ভবনের নিচের ঝালমুড়ি বিক্রেতা মুনির (৬০), মার্কেটের পান দোকানি জিল্লুর রহমান (৪০)।পালিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাতদের গণপিটুনি দেয়ার খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে। তাদের উদ্ধার করার চেষ্টা করলে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয়দের মাঝে। সেসময় পুলিশের দুটি গাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়।ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় নিহতের তথ্যগণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন সাভারের এএসপি রাসেল শেখ। তিনি জানান, এ ঘটনায় মারা গেছে ৭ জন। পালাতে গিয়ে এলাকাবাসীর হাতে আটক হয়েছে দুই ডাকাত। এর মধ্যে গণপিটুনিতে একজন মারা গেছে। আরেকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অপারেশন বিভাগের ইনচার্জ ডা. নাসির হোসেন জানান, নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে। নিহতদের মধ্যে ওই ব্যাংকের ম্যানেজার, ক্যাশিয়ার, নিরাপত্তা কর্মী ও গ্রাহকসহ সাতজনরয়েছেন। লাশগুলো এনাম মেডিক্যালের মর্গে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় আহতদেরও এনাম মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ৩:১১:০৬ ৩০৩ বার পঠিত