ক্রীড়া ডেস্ক: গত সেপ্টেম্বরে চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে প্যারিস সেইন্ট জার্মেইনের (পিএসজি) মাঠে ৩-২ গোলে হেরেছিল বার্সেলোনা। এবার সে হারের প্রতিশোধটা ভালোমতোই নিল স্প্যানিশ জায়ান্টরা। টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে ফ্রান্সের দলটিকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে এক পা রেখেছে কাতালানরা।
বার্সার জয়টাও এসেছে আক্রমণভাগের ত্রয়ী মেসি-নেইমার ও সুয়ারেজের দারুণ নৈপুণ্যে। প্রথমে মেসির সহায়তায় নেইমার দলকে এগিয়ে দেওয়ার পর জোড়া গোল করেন উরুগুইয়ান তারকা সুয়ারেজ। ২০১১-১৩ মৌসুমের পর এই প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগে টানা সাত ম্যাচে জয়ের স্বাদ নিল বার্সা।
বুধবার প্যারিসে অনুষ্ঠিত ম্যাচের ১৪ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারতো বার্সা। ডি বক্সের বাঁ দিক থেকে মেসিকে বল বাড়ান সুয়ারেজ। ডি বক্সের ঠিক সামনে বল পেয়ে দ্রুতই বাঁ পায়ের জোরালো শট নেন আর্জেন্টাইন তারকা। কিন্তু তার শটটি পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ১৬ মিনিটে ডি বক্সের ভেতর বল পান নেইমার। তবে বল পোস্টের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারেন তিনি।
১৮ মিনিটে আর ভুল করেননি নেইমার। দারুণ এক ফিনিশিংয়ে বার্সাকে ১-০ গোলে এগিয়ে দেন ব্রাজিল তারকা। এই গোলে মেসির অবদানও কম ছিল না। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড দ্রুতগতিতে বল নিয়ে গিয়ে ডি বক্সের ভেতর নেইমারকে দেন। বল জালে জড়াতে কোনো ভুল করেননি নেইমার। ডান পায়ের শটে পিএসজির গোলরক্ষক সিরিগুকে পরাস্ত করেন তিনি।
গোল হজমের পর ২১ মিনিটে থিয়াগো সিলভাকে উঠিয়ে আরেক ডিফেন্ডার ডেভিড লুইজকে মাঠে নামান পিএসজি কোচ। ২৬ মিনিটে পিএসজির তিন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে শট নেন নেইমার। তবে শট দুর্বল হওয়ায় সহজেই ধরে ফেলেন স্বাগতিক গোলরক্ষক।
২৮ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে যায় পিএসজি। ডি বক্সের সামনে বল পান এডিনসন কাভানি। তবে তিনি শট নেওয়ার আগেই তা প্রতিহত করেন বার্সার রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার হাভিয়ের মাশচেরানো। এরপর প্রথমার্ধে অবশ্য দুই দলের কেউই আর কোনো ভালো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি।
বিরতির পর ৪৯ মিনিটে আক্রমণে যায় পিএসজি। ডি বক্সের সামনে বল পেয়ে জোরালো শট নেন পাস্তোরে। তবে বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে তা ঠেকিয়ে দেন বার্সা গোলরক্ষক টের স্টেগেন। দুই মিনিট পর মিডফিল্ডার রাবিওর শট ধরে ফেলেন বার্সা গোলরক্ষক। এ সময় ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়েন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। তার বদলে মাঠে নামেন জাভি।
৬৭ মিনিটে দারুণ এক গোলে বার্সার ব্যবধান ২-০ করেন সুয়ারেজ। ডি বক্সের ডান দিক থেকে পিএসজির তিন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে বল জালে জড়ান এই উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার। পরের মিনিটে গোল হতে পারতো পিএসজির। তবে এ যাত্রায় আবারও অতিথিদের ত্রাতা গোলরক্ষক স্টেগেন। কাভানির জোরালো শট ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন তিনি।
৭৩ মিনিটে পোস্টের বাইরে দিয়ে বল মারেন মেসি। ৭৯ মিনিটে নিজের জোড়া গোলে স্কোরলাইন ৩-০ করেন সুয়ারেজ। গোলটিও ছিল দেখার মতো। ডি বক্সের সামনে পিএসজির ডিফেন্ডার লুইজের দুপায়ের মাঝে দিয়ে বল বাড়িয়ে আরেকটু সামনে গিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন বার্সা ফরোয়ার্ড।
তিন মিনিট পরেই একটি গোল শোধ করে পিএসজি। অবশ্য নিজেদের ডিফেন্ডার জেরেমি ম্যাথিউয়ের ভুলেই গোলটি হজম করে বার্সা। স্বাগতিক খেলোয়াড় ভান দের উইয়ের শট প্রতিহত করতে চেয়েছিলেন ম্যাথিউ। কিন্তু বল তার পায়ে লেগে নিজেদের জালেই জড়িয়ে যায়।
৮৮ মিনিটে ব্যবধান কমানোর আরেকটি ভালো সুযোগ পেয়েছিল পিএসজি। বক্সের ভেতরে জটলায় বল পেয়ে শট নেন কাভানি। তবে তার শট ম্যাথিউয়ের গায়ে লেগে প্রতিহত হয়। পরের মিনিটে ফ্রি-কিক পায় বার্সা। অবশ্য মেসির ফ্রি-কিক ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন পিএসজির গোলরক্ষক। তবে ঠিকই ৩-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন মেসি-নেইমার-সুয়ারেজরা।
আগামী ২২ এপ্রিল ক্যাম্প ন্যুতে কোয়ার্টার ফাইনালের ফিরতি লেগে মুখোমুখি হবে বার্সা-পিএসজি। সে ম্যাচে বড় ব্যবধানে না হারলেই সেমিফাইনালের টিকিট হাতে পাবে বার্সা।
রাতের অন্য খেলায় পোর্তোর কাছে ৩-১ ব্যবধানে হেরে মাঠ ছাড়ে বায়ার্ন মিউনিখ
আগে মাত্র একবারই বায়ার্ন মিউনিখকে হারাতে পেরেছিল পোর্তো। ১৯৮৭ সালের ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনালে জার্মানির দলটিকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল পর্তুগিজ ক্লাবটি। ২৮ বছর পর বায়ার্নকে আরেকটি হারের লজ্জা দিল পোর্তো।
বুধবার চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে পোর্তোর কাছে ৩-১ গোলে হেরেছে পেপ গার্দিওলার বায়ার্ন। এই হারের ফলে ইউরোপের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে ওঠার লড়াই বেশ কঠিন হয়ে গেল জার্মানির শীর্ষ দলটির জন্য।
অপরদিকে পোর্তো ঘরের মাঠে কতটা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে পারে, তা আরেকবার দেখিয়ে দিল। ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় ঘরের মাঠে এ নিয়ে টানা দশ ম্যাচ অপরাজিত থাকল পর্তুগিজ দলটি। ঘরের মাঠে শেষ আটটি ম্যাচের সাতটিতেই জয় তুলে নিল পোর্তো।
বুধবারের এই ম্যাচে সহজেই জিততে আরিয়েন রোবেন, ফ্রাঙ্ক রিবেরি ও বাস্তিয়ান সোয়াইনস্টেইগারকে মাঠে নামাননি বায়ার্ন কোচ গার্দিওলা। যদিও তারা সবাই কিছুটা ইনজুরিতে ভুগছিলেন। ম্যাচে দলের সেরা তারকাদের অভাব ভালোমতোই টের পেলেন বায়ার্ন কোচ।
ম্যাচের মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে বায়ার্ন। দ্বিতীয় মিনিটে পোর্তোর স্ট্রাইকার মার্টিনেজকে বক্সের ভেতর ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন অতিথি গোলরক্ষক ম্যানুয়েল ন্যুয়ার। আর পেনাল্টি পায় স্বাগতিকরা। পেনাল্টি থেকে গোল করে স্বাগতিক দর্শকদের আনন্দের জোয়ারে ভাসান রিকার্ডো কুয়ারেসমা।
দশম মিনিটে নিজেদের ডিফেন্ডার দান্তের ভুলে আরেকটি গোল হজম করে বায়ার্ন। ডি বক্সের খানিকটা ওপরে বল নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যর্থ হন দান্তে। বল পেয়ে বক্সে ঢুকে ন্যুয়ারকে ফাঁকি দিয়ে স্কোরলাইন ২-০ করেন কুয়ারেসমা। সঙ্গে নিজের জোড়া গোলও পূরণ করেন এই পর্তুগিজ স্ট্রাইকার।
এরপর ২৮ মিনিটে একটি গোল শোধ করেন বায়ার্নের থিয়াগো আলকানতারা। সতীর্থ জেরমি বোয়েটাংয়ের বাড়ানো বলে পা ছুঁয়ে গোলটি করেন তিনি। ফলে প্রথমার্ধে স্কোরলাইন থাকে পোর্তো ২-১ বায়ার্ন।
দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন বায়ার্নের খেলোয়াড়রা। কিন্তু গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তারা। উল্টো ৬৫ মিনিটে তৃতীয় গোল হজম করে অতিথিরা। পোর্তোকে ৩-১ গোলে এগিয়ে দেন মার্টিনেজ। শেষ পর্যন্ত আর ম্যাচে ফেরা হয়নি বায়ার্নের।
আগামী ২২ এপ্রিল নিজেদের মাঠে শেষ আটের ফিরতি লেগ খেলবে বায়ার্ন। সেমিতে উঠতে হলে সে ম্যাচে বড় ব্যবধানে জিততে হবে তাদের। আর তা না পারলে বিদায় নিয়ে হবে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৫২:৫৬ ৩৪১ বার পঠিত