যুদ্ধোত্তর জার্মানির সেরা লেখক গুন্টার গ্রাস প্রয়াত

Home Page » বিশ্ব » যুদ্ধোত্তর জার্মানির সেরা লেখক গুন্টার গ্রাস প্রয়াত
সোমবার, ১৩ এপ্রিল ২০১৫



82.jpgবঙ্গনিউজ ডটকমঃ প্রতিবাদী জার্মান কথাসাহিত্যিক গুন্টার গ্রাস তার মানবতাবাদী লেখনীর জন্য ছিলেন বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত। সমাজ ও রাষ্ট্রযন্ত্রের নেতিবাচক দিকগুলো স্পষ্ট হয়ে ফুটে ওঠে তার লেখায়। মতপ্রকাশে দুঃসাহসী এই কথাসাহিত্যিক সাধারণ মানুষের মনোভাব ও মানবতার জয়গান উপস্থাপনে কখনো‌ই আপোস করেননি।

শুধু সাহিত্যের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না গুন্টার গ্রাস, একাধারে তিনি ছিলেন চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর ও সৈনিক।

গুন্টার গ্রাসের পুরো নাম গুন্টার উইলহেম গ্রাস। ১৯২৭ সালের ১৬ অক্টোবর তৎকালীন জার্মান ডানজিগে (বর্তমানে পোল্যান্ডের ডানস্ক) জন্মগ্রহণ করেন তিনি। গুন্টারের বাবা উইলহেম গ্রাস ছিলেন একজন জাতিগত জার্মান প্রোটেস্ট্যান্ট আর মা হেলেনে গ্রাস (নী নফ) ছিলেন রোমান ক্যাথলিক।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৩ সালে ১৬ বছর বয়সে আরও অনেকের সঙ্গে বাধ্যতামূলকভাবে জার্মান বাহিনীতে যোগ দেন গুন্টারগ্রাস। দশম এসএস প্যানজার ডিভিশনের অধীনে যুদ্ধরত অবস্থায় ১৯৪৫ সালের এপ্রিলে মার্কিন সেনাদের হাতে আটক হন তিনি। বন্দিশিবির থেকে মুক্তি পাওয়ার পড়াশোনা করেন ভাস্করশিল্পের ওপর।

১৯৫৪ সালে তিনি বিয়ে করেন। কিন্তু দুই যুগ পর এই সংসার ভেঙ্গে যায় তার। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে আবার বিয়ে করেন তিনি।
প্রথম বিয়ের পর থেকেই পুরোপুরি লেখালেখির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে যান তিনি। ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত হয় তার অমর সৃষ্টি দ্য টিন ড্রাম। ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি বার্লিন একাডেমি অব আর্টসের সভাপতিত্ব করেন তিনি।

গুন্টার গ্রাস সবচেয়ে বেশি পরিচিত তার প্রথম উপন্যাস দ্য টিন ড্রাম-এর কারণে। এই বইটি ইউরোপীয় সাহিত্যের জাদু বাস্তবতা বা ম্যাজিক রিয়ালিজমের মূল গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি তার তিন পর্বের ডানজিগ সিরিজের প্রথম বই। এই সিরিজের বাকি দুই বই- ক্যাট এন্ড মাউস ও ডগ ইয়ার্স। এই বইগুলো ডানজিগ ট্রিলজি নামে পরিচিত।

দ্য টিন ড্রামের গল্প অনুকরণে একই নামে পরবর্তীতে একটি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়, যা ১৯৭৯ সালে পাম ডি’অর ও একাডেমি অ্যাওয়ার্ডে বিদেশি চলচ্চিত্র শাখায় পুরস্কার লাভ করে। ১৯৯৯ সালে সুইডিশ একাডেমি তাকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করে।

গুন্টারের তিন পর্বের এই ডানজিগ সিরিজে নাৎসিবাদের উত্থান ও যুদ্ধে তার অভিজ্ঞতা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। দ্য টিন ড্রামের ইংরেজি ভার্সন ডাই ব্লেকট্রোমেল বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলে সে সময়। এরই ধারায় এর পরবর্তী দুই পর্ব প্রকাশিত হয়। ক্যাট এন্ড মাউস (জার্মান ‘ক্যাটজ ‌আন্ড মাউস’) প্রকাশিত হয় ১৯৬১ সালে আর ডগস ইয়ার্স (জার্মান ‘হুন্ড জাহরে’) প্রকাশিত হয় ১৯৬৩ সালে।

১৯৯৯ সালে প্রকাশিত মেইন জারহান্ডার্ট (ইংরেজি অনুবাদ- মাই সেঞ্চুরি) আবারো সাড়া ফেলে পুরো বিশ্বে। এই বইটিতে বিংশ শতাব্দীর সহিংস চিত্র স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে।

২০১২ সালে আবার আলোচনায় চলে আসেন গুন্টার। এবার তিনি গ্রিসের ব্যাপারে ইউরোপের বর্তমান নীতির সমালোচনা করে একটি কবিতা লেখেন। এই কবিতায় তিনি ইউরোপকে গ্রিসের দারিদ্র্যের জন্য দায়ী করেন।

এছাড়া ইসরায়েলের ফিলিস্তিন নীতিরও তিনি ছিলেন ঘোর সমালোচক। ‘যে কথা বলতেই হবে’ শীর্ষক কবিতা লিখে তিনি ইসরায়েলের জায়নবাদী শাসক চক্রের কোপানলে পড়েন তিনি। তাকে সে সময় ইসরায়েলে ঢুকতে না দেয়ার ঘো্ষণা দেয় তেল আবিবের ইহুদিবাদী সরকার।

সাহিত্যিক হিসেবে গুন্টার বহু পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৯৯ সালের নোবেল প্রাইজ ছাড়াও ১৯৬৫ সালের জর্জ বাকনার পুরস্কার ও ১৯৯৫ সালের হার্মেন কেস্টেন পুরস্কার উল্লেখযোগ্য। ১৯৯৩ সালে গুন্টারকে রয়্যাল সোসাইটি অব লিটারেচারের পক্ষ থেকে ফেলোশিপও দেওয়া হয়।

বাংলাদেশের সঙ্গেও ছিলো গুন্টার গ্রাসের সংযোগ। ১৯৮৬ সালের ২ ডিসেম্বর ঢাকায় আসেন গুন্টার গ্রাস। ছিলেন এক সপ্তাহ। প্রখ্যাত ফটোগ্রাফার নাসির আলি মামুন ও কবি বেলাল চৌধুরীর সঙ্গে ঢাকা শহরের অলি গলি ঘুরে বেড়ান গুন্টার গ্রাস। শাখারি বাজার থেকে জেনেভা ক্যাম্প,পুরান ঢাকার অলিগলি,সদরঘাটের ভাসমান রেঁস্তোরা সবখানেই ছিলো গুন্টারগ্রাসের পদচারণা।

২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল ৮৭ বছর বয়সে ইহলোক ত্যাগ করলেন গুন্টার গ্রাস। জার্মানির উত্তরাঞ্চলীয় লুবেক শহরের একটি ক্লিনিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। গুন্টার গ্রাসের মৃত্যুতে তার প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা

বাংলাদেশ সময়: ১৮:৩১:৪২   ৪৩৯ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

বিশ্ব’র আরও খবর


বিয়েবর্হিভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ: প্রতিবাদে বিক্ষােভ ইন্দোনেশিয়ায়
সউদী আরব তৈরি করবে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবন্দর
আজ মেসির জন্য মেক্সিকোর বিরুদ্ধে খেলাটি ‘বাঁচা-মরার লড়াই’
শুরুর বাঁশিতে ফুটবলের পৃথিবী
উত্তর কোরিয়া দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালালো জাপান সাগর লক্ষ্য করে
মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা : ন্যান্সি পেলোসি
চাঁদের উদ্দেশ্যে ছুটল ‘আর্টেমিস-১’
জার্মানি, পোল্যান্ড রাশিয়ার গ্যাস সম্পদকে রাষ্ট্রীকরণ করেছে
বাংলাদেশ গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে : মার্টিন রাইজার
ইউক্রেন থেকে গম নিয়ে “ম্যাগনাম ফরচুন” চট্টগ্রাম বন্দরে

আর্কাইভ