বঙ্গনিউজ ডটকমঃ রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, গত তিন মাসের রাজনৈতিক অস্থিরতায় কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও রপ্তানি সব খাতই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেবা খাত।
সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় শহরের পাশাপাশি ক্ষতির মুখে পড়েছে গ্রামীণ অর্থনীতিও। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে রাজনৈতিক অস্থিরতা।
বিশ্বব্যাংক তাদের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট, এপ্রিল ২০১৫’তে বলেছে, জানুয়ারি থেকে টানা তিন মাসের অবরোধ-হরতালে ক্ষতি হয়েছে জিডিপির ১ শতাংশ বা ১৫,০০০ কোটি টাকা। এ ক্ষতির কারণে চলতি অর্থবছর (২০১৪-১৫) বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৬ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের মতে, ২০১৩ সালব্যাপী রাজনৈতিক অস্থিরতায় যে ক্ষতি হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসের হরতাল-অবরোধে।
কারণ হিসেবে উন্নয়ন সংস্থাটি বলছে, ২০১৩ সালের চেয়ে এবার রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বেশি ছিল। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড তাই থমকে গিয়েছিল।
বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্ব অর্থনীতির ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ এ ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে উঠবে।
সরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এনে অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন করে অন্যান্য সুবিধা কাজে লাগালে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৬.৩ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬.৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হবে বাংলাদেশ।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ মোটামুটি ঠিকই। চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি ৫.৫ থেকে ৫.৭ শতাংশের মধ্যে থাকবে।
তিনি বলেন, হরতাল ও অবরোধের কারণে ক্ষতির পরিমাণ বিশ্বব্যাংকের অনুমেয় ক্ষতির কাছাকাছি হবে। এর চেয়ে খুব বেশি হবে না। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই দেড় লাখ কোটি টাকা ক্ষতির কথা বললেও সেটা অবাস্তব।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০১২ সাল থেকে দেশের সার্বিক বিনিয়োগে এক ধরনের স্থবিরতা ছিল। এর অন্যতম কারণ রাজনৈতিক অস্থিরতা। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে ব্যক্তিখাতে আস্থা ফিরে আসে। ফলে প্রথম ছয় মাসে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকে। কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এ খাতে আবারো অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ক্ষতির মুখে পড়ে দেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাক শিল্প। জানুয়ারি থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়লে নির্ধারিত সময়ে পণ্য জাহাজীকরণে ব্যর্থ হন শিল্প মালিকরা।
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ভাবমূর্তি সংকটেও পড়ে পোশাক খাত। বিদেশি ক্রেতারা নতুন ক্রয়াদেশ দেয়ার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। অনেকে বাংলাদেশ থেকে ক্রয়াদেশ ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, মিয়ানমার ও ইন্দোনেশিয়ায় স্থানান্তর করেন।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকেই অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছে বিশ্বব্যাংক। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার পাশাপাশি ব্যক্তিখাতের উন্নয়ন, অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো প্রস্তুত করে বিনিয়োগ নিশ্চিতকরণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে সংস্থাটি।
পাশাপাশি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) বাইরে শিল্প স্থাপনের জন্য জমি সহজলভ্য করার ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক খাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৪৬:০৪ ৩৭৫ বার পঠিত