বঙ্গনিউজ ডটকমঃ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি আজ রাতেই কার্যকর করা হতে পারে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় কারাগারের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যার পর কারাগারের আশেপাশে পুলিশ-র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
সন্ধ্যা ৭টা ২০মিনিটে সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী ফের কারাগারে প্রবেশ করেন।
এরপর বিভিন্ন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে অবস্থান নিয়েছেন। পুলিশের লালবাগ বিভাগীয় উপকমিশনার মফিজউদ্দিন আহাম্মদ ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করেছেন।
রাত সোয়া আটটার দিকে কারাগারে প্রবেশ করেছেনে সিভিল সার্জন আহসান হাবীব। কারাগারের সামনে ইতোমধ্যেই দুটি অ্যাম্বুলেস মোতায়েন করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় কারাগারের আশেপাশে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। গাড়ি চলাচলেও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে।
এদিকে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
দৃশ্যত কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করার অংশ হিসেবেই এসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
কারা সূত্র জানিয়েছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি শুক্রবার রাতেই কার্যকর করা হতে পারে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুক্রবার রাত ১২টা ১মিনিট অথবা ভোর রাতে কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করা হবে।
এর আগে আজ সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করতে কারাগারে প্রবেশ করেন জ্যেষ্ঠ ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব জামিল ও তানভীর আজিম। বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে তারা কারাগার থেকে বের হয়ে জিপ গাড়িতে উঠে চলে যান।
তারপরই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, তিনি (কামারুজ্জামান) কিছুটা সময় চেয়েছেন। তবে তাকে দ্রুত সিদ্ধান্ত জানাতে বলা হয়েছে।
কারাগারের একটি সূত্র জানায়, জেল সুপার ও দুজন ম্যাজিস্ট্রেট কামারুজ্জামানের কাছে তার মতামত জানতে চান। তবে তিনি ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে কী জানিয়েছেন, তা জানা যায়নি।
তবে শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শিল্পকলা একাডেমীতে এক অনুষ্ঠান থেকে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যাওয়ার আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেট আজ গিয়েছিলেন, তার (কামারুজ্জামান) সঙ্গে কথা বলেছেন। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
কামারুজ্জামান প্রাণভিক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন কি না জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে আর সময় দেয়া হচ্ছে না।’
২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গত বছরের ৩ নভেম্বর তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন।
এরপর গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। এর পর ১৯ ফেব্রুয়ারি কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পৌঁছায়।
সর্বশেষ গত ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় কামারুজ্জামানের পক্ষে রিভিউ আবেদন করা হয়। কিন্তু তা খারিজ করে দেয় আদালত।
২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সেই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী সাতটি অভিযোগে ২০১২ সালের ৪ জুন কামারুজ্জামানের বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুটিতে মৃত্যুদণ্ড, দুটিতে যাবজ্জীবন ও একটিতে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৩৬:৫৩ ৩১১ বার পঠিত