বঙ্গ নিউজ ডটকমঃ বিশ্বকাপে দলের সাফল্যে আকাশে ভাসার কথা তাঁর। ছুটি শেষে বাংলাদেশে আসছেন সম্ভবত আগামী পরশু। তবে ফেরার আগেই চন্ডিকা হাথুরুসিংহের ‘ডানা’ ছেঁটে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বিসিবি। এখতিয়ারবহির্ভূত কথা বলায় চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে বাংলাদেশের কোচকে। শুধু নিজের কাজ নিয়ে থাকতেই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
চিঠি নিয়ে কিছু বলতে রাজি না হলেও কোচের প্রতি ক্ষোভ ও বিরক্তি লুকাননি বিসিবির পরিচালক ও ক্রিকেট পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান নাঈমুর রহমান। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযান শেষে গত ২৩ মার্চ সিডনিতে দল নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তো তুলেছেনই, অনেক খোলামেলা কথাও বলেছেন হাথুরুসিংহে। কোচ ওভাবে খোলামেলা কথা বলায় বোর্ডের অনেক কর্তাই বিস্মিত ও বিরক্ত ছিলেন। নাঈমুর তো কাল কোচের আচরণকে সরাসরি ‘অপরিপক্ব’ বলেছেন। আচরণবিধি ভঙ্গ ও নিজেকে বেশি করে ‘তুলে ধরার’ অভিযোগও এনেছেন কোচের বিরুদ্ধে।
গত ২৩ মার্চ সিডনিতে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলোচনায় বিশ্বকাপের দল নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন তোলেন হাথুরুসিংহে। নিজের পছন্দের দল পাননি, পেলে দল আরও ভালো করত বলেও দাবি কোচের। অস্ট্রেলিয়ার কোচ ড্যারেন লেম্যান ও নিউজিল্যান্ডের মাইক হেসনের উদাহরণ টেনে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচক কমিটিতে থাকার ইচ্ছেটাও জানিয়েছেন তখন।
কিন্তু বোর্ডকে না জানিয়ে সংবাদমাধ্যমে এসব বলায় খুবই বিরক্ত নাঈমুর, ‘সবকিছুতে সবাই একমত হবে না। তাঁর মতের সঙ্গে কিছু না মিললে বা কিছু পছন্দ না হলে তিনি তাঁর পর্যবেক্ষণ আমাদের জানাতে পারেন। এভাবে প্রকাশ্যে মন্তব্য করা ঠিক নয়। সবারই নিজের জায়গা নিয়েই থাকা উচিত। প্রটোকল মেনে চলা উচিত। কোচ যদি নির্বাচক কমিটির অংশ হতে চান, সেটা আমাকে বলতে হবে বা বোর্ডকে বলতে হবে। মিডিয়ায় বলে বা বোঝাতে চাইলে তো লাভ নেই! তিনি প্রস্তাব দিলে আমরা বিবেচনা করব। এই মুহূর্তে আমরা তেমন কিছু ভাবছি না।’কোচকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য নিজে কিছু বলতে চাননি ক্রিকেট পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান, ‘দেখুন, কোচের সাক্ষাৎকার যেহেতু সব সংবাদমাধ্যমে এসেছে, সবাই দেখেছে…আমরা সেটা দেখে আমাদের পর্যবেক্ষণ জানিয়েছি বোর্ডকে। চিঠি দেওয়া, না-দেওয়া সিইওর ব্যাপার।’ প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী অবশ্য মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বিসিবিরই একটি সূত্রে জানা গেছে, চিঠি দিয়ে কোচকে সতর্কও করা হয়েছে।নাঈমুর রহমান
চিঠি দিতে হয়েছে, কারণ মৌখিকভাবে আগে বলা হলেও কোচ কর্ণপাত করেননি। সেটির নমুনাও শোনালেন নাঈমুর, ‘আমি দায়িত্ব নিয়ে প্রথম দিনই কোচকে পরিষ্কার বলে দিয়েছি, আমার কমিটির ব্যাপার নিয়ে অন্য কমিটির চেয়ারম্যান বা কারও সঙ্গে কথা বললে কোনো লাভ হবে না। তিনি বিভিন্ন প্রয়োজনে বোর্ড প্রেসিডেন্টের কাছে সরাসরি যান। আমি বলেছি, আমাকে জানান, প্রয়োজন হলে আমি প্রেসিডেন্টের কাছে নিয়ে যাব। কিন্তু চেইন অব কমান্ড মেনে চলতে হবে।’
দল বিশ্বকাপে ভালো করার পর যখন দেশের ক্রিকেটে সুবাতাস, তখন কোচের মন্তব্যকে একরকম হঠকারী মনে হয়েছে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়কের, ‘তিনি যেসব বলেছেন, আমি বলব অপরিপক্বতা (ইমম্যাচিউরিটি)…এবং কোনো কোচেরই এটা উচিত নয়। আমার মনে হয় তাঁর ব্যক্তিগত কৃতিত্বটাকে হাইলাইট করার ইচ্ছা বেশি। হয়তো বোঝাতে চান যে আমি অনেক সফল কোচ। ওনার ওই সাক্ষাৎকারে বোঝা যায় যে উনি বলতে চেয়েছেন ওনার ইচ্ছামতো সব হলে হয়তো ট্রফি জিতে ফেলতাম!’
বিশ্বকাপের দলে লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেনকে চেয়েছিলেন কোচ। দল ঘোষণার আগে দেনদরবারও করেছেন অনেক। বিশ্বকাপ চলার সময়ও অনেকবার বুঝিয়ে দিয়েছেন নিজের অসন্তুষ্টি। দুজন বাঁহাতি স্পিনার দলে নেওয়াতেও ছিলেন বিরক্ত। কিন্তু এসব নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তোলার এখতিয়ার যে কোচের নেই, সেটা মনে করিয়ে দিলেন পরিচালনা কমিটির প্রধান, ‘এ রকম বলার কর্তৃত্ব তাঁকে দেওয়া হয়নি। এক দিক থেকে তিনি আচরণবিধি ভেঙেছেন। দল নির্বাচন করেন নির্বাচকেরা, সেটা ক্রিকেট অপারেশনসের চেয়ারম্যান সুপারিশ করেন বোর্ড প্রেসিডেন্টের কাছে, তিনি চূড়ান্ত অনুমতি দেন। দল নির্বাচন নিয়ে কোচের কথাগুলো বোর্ড এবং বোর্ড প্রধানের বিপক্ষে যায় সুস্পষ্টভাবেই। ক্রিকেটারদের জন্যও এসব ক্ষতিকর। কোনো ক্রিকেটার যখন দেখবে যে তাকে নিয়ে কোচ এতটা অন্ধ, আবার অন্য কেউ দেখবে যে তাকে একটু অবহেলা করছে বা নিতে চাচ্ছে না, এসব দলে প্রভাব ফেলে।’
বাংলাদেশ সময়: ১১:৪১:৫২ ৩৮৬ বার পঠিত