কাঞ্চন বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) ‘ত্রুটিপূর্ণ বিচার প্রক্রিয়ায়’ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামরারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে। এইচআরডব্লিউ’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবিলম্বে কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের রায় স্থগিত করা এবং মামলাটি স্বাধীনভাবে পুনর্বিবেচনা না করা পর্যন্ত তা কর্তৃপক্ষের মুলতবি রাখা উচিত।এতে বলা হয়, ‘গুরুতর ত্রুটিযুক্ত’ বিচারের পর ২০১৫ সালের ৬ এপ্রিল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডেরর রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে দেয়, যার অর্থ তিনি আসন্ন মৃত্যুদণ্ডের সম্মুখীন।
এইচআরডব্লিউ’র এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, মৃত্যুদণ্ড একটি অপরিবর্তনযোগ্য ও নিষ্ঠুর শাস্তি। বিচার বিভাগ যখন এ ধরনের শাস্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গরূপে পুনর্বিবেচনা করতে ব্যর্থ হন, তখন সেটি আরও গর্হিত পর্যায়ে উপনীত হয়। তিনি আরও বলেছেন, বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচারসমূহ নিরপেক্ষ বিচার প্রক্রিয়া লঙ্ঘনের পুনঃপুনঃ ও বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগের মহামারীতে বিপর্যস্ত, যেখানে পক্ষপাতহীন বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা আবশ্যক।
সোসবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নিজস্ব ওয়েবসাইটে ‘বাংলাদেশ: সাসপেন্ড ডেথ সেনটেন্স অব ওয়ার ক্রাইমস অ্যাকিউজড’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে এ আহ্বান জানানো হয়।
ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ১৯৭১ সালে ভয়াবহ যেসব যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছিল, তার ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার ব্যাপারে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দীর্ঘকাল থেকে সমর্থন জানিয়ে আসছে। কিন্তু, এ বিচারসমূহ আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থার মানদণ্ডে হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ন্যায়বিচার প্রদানের জন্য সর্বোচ্চ মানদণ্ডের নীতিতে অবিচল থাকা আবশ্যক, বিশেষ করে জীবন যখন বিপন্নপ্রায়। তিনি বলেন, কামারুজ্জামানের বিচার প্রক্রিয়া যেভাবে পরিচালিত হয়েছে, তাতে সে মানদ-সমূহ অনুসরণ করা হয়েছে, তেমনটা বলা যায় না।
একই সঙ্গে বাংলাদেশে অবিলম্বে মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করার দীর্ঘদিনের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংগঠনের মতে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে মৃত্যুদণ্ড সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ব্র্যাড অ্যাডামস আরও বলেন, বাংলাদেশে সরকারের উচিত আইন কার্যকরের মাধ্যমে মৃত্যুদ- স্থগিত করা এবং যে রাষ্ট্রগুলো ইতোমধ্যেই এ ধরনের বর্বরোচিত রেওয়াজের বিলোপ ঘটিয়েছে, অচিরেই সঙ্গে যোগ দেয়া।
কামারুজ্জামানের বিচার প্রক্রিয়ার বিবরণ দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, তার আপিল আবেদন আমলে না নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে সে আবেদন খারিজ করে দেয় এবং মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) নির্দেশে ২০১০ সালের জুলাইয়ের কামারুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৭১ সালে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের লক্ষ্যে গঠন করা হয় আইসিটি। ওই যুদ্ধের পর পাকিস্তান থেকে মুক্ত হয় বাংলাদেশ। কিন্তু, জামায়াতে ইসলামীর এ নেতাকে কেন গ্রেফতার করা হলো, সে সম্পর্কে তাকে কোন কারণ জানানো হয়নি। জাতিসংঘের ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ অন আরবিট্রারি ডিটেনশন’ তার গ্রেফতারকে বিধিবহির্ভূত ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত করে। বিচার চলাকালীন আদালত বিধিবহির্ভূতভাবে আসামী পক্ষের সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপনের সুযোগকে সীমিত করে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শী ও নথিপত্র উপস্থাপনেও এ সীমাবদ্ধতা কার্যকর ছিল। এভাবে কামারুজ্জামানের বিচার প্রক্রিয়ার আরও কয়েকটি অনিয়মের কথা তুলে ধরা হয় এইচডব্লিউ’র প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:২৪:২৯ ২৭৭ বার পঠিত