বঙ্গনিউজ ডটকমঃ রিভিউ খারিজের সংক্ষিপ্ত আদেশ হাতে না পাওয়ায় ফাঁসির আসামি মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে তা জানাতে পারেনি কারা কর্তৃপক্ষ। এই যুদ্ধাপরাধী রাষ্ট্রপতির অনুকম্পা চাইবেন কি-না সে প্রশ্নের সুরাহা না হওয়ায় আটকে আছে তার দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক ফরমান আলী সোমবার রাত পৌনে ৮টায় সাংবাদিকদের বলেন, “আদালত থেকে কোনো আদেশ আমরা পাইনি। কামারুজ্জামান রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না- তাও তাকে জানাতে পারিনি।”এই অবস্থায় সোমবার আর রায় কার্যকর করার সুযোগ নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
দণ্ড কার্যকরের প্রস্তুতি জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সোমবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অর্ডার না গেলে আমি কী করে বলবো? আদেশটাতো যাইতে হবে। আদেশটা না গেলে ক্যামনে ফাঁসি দেয়।”
তবে কারা কর্তৃপক্ষ ‘সব প্রস্তুতি’ নিয়ে রেখেছে বলেও জানান মন্ত্রী।
এর আগে সকালে রায় হওয়ার পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা আগেই জারি হওয়ায় দণ্ড কার্যকরে নতুন করে আর কোনো আনুষ্ঠানিক আদেশের প্রয়োজন হবে না।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আইনমন্ত্রী বলেন, “নিশ্চয়ই যেতে হবে। নিশ্চয়ই যেতে হবে। আদেশটা যেতেই হবে।”
নিয়ম অনুযায়ী কামারুজ্জামান অপরাধ স্বীকার করে প্রাণভিক্ষা চাইলে রাষ্ট্রপতি তা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত দেবেন। ওই আবেদনের নিষ্পত্তি হয়ে গেলে অথবা কামারুজ্জামান প্রাণভিক্ষার আবেদন না করলে সরকার কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দণ্ড কার্যকরের ব্যবস্থা নেবে বলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছেন।
২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের ক্ষেত্রেও এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছিল। তবে সে সময় কাদের মোল্লা প্রাণভিক্ষার আবেদন করেননি বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
আইনমন্ত্রী দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে কামারুজ্জামানকে ‘কয়েক ঘণ্টা’ সময় দেওয়া হবে। ‘যতো দ্রুত সম্ভব’ এই রায় কার্যকর করা হবে।
“কাদের মোল্লার রিভউ পিটিশনের যে রায় বেরিয়েছিল সে রায়ে আপিল বিভাগ পরিষ্কার করে দিয়েছেন, এসব ক্ষেত্রে জেল কোড এপ্লিকেবল হবে না। সেক্ষেত্রে জেল কোডের যে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে- ক্ষমা প্রার্থনা করতে সাত দিন সময় পাবেন- সেসব বিষয় এই ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।”
তবে আদালতের রায় হাতে পেলে তবেই প্রাণভিক্ষার বিষয়টি কামারুজ্জামানকে জানানো যাবে বলে কারা তত্ত্বাবধায়ক জানিয়েছেন।
কামারুজ্জামানের অন্যতম আইনজীবী শিশির মনিরও বলেছেন, আপিল বিভাগের আদেশের অনুলিপি কারাগারে না পৌঁছানো পর্যন্ত দণ্ড কার্যকর করা যাবে না বলেই তারা মনে করেন।
সুপ্রিম কোর্টের নিবন্ধক সৈয়দ আমিনুল ইসলাম জানান, সংক্ষিপ্ত রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৌঁছেনি।
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে কামারুজ্জামানকে সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন সোমবার সকালে খারিজ করে দেয় প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ।
এরপর আইনজীবীরা প্রাণভিক্ষা চাওয়ার বিষয়ে আলোচনার জন্য কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চাইলেও কারা কর্তৃপক্ষ তা নাকচ করে দেয়। ফরমান আলী বলেন, এই পর্যায়ে এসে আইনজীবীদের সাক্ষাৎ করতে দেওয়ার সুযোগ নেই।
তবে কারাকর্তৃপক্ষ দুপুরে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়ে কামারুজ্জামানের পরিবারকে দণ্ড কার্যকরের আগে সাক্ষাতের সুযোগ থাকার বিষয়টি জানায়। সে অনুযায়ী সন্ধ্যায় কারাগারে গিয়ে কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করেন পরিবারের সদস্যরা।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ এ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর থেকেই জামায়াতের এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলকে এ কারাগারে রাখা হয়েছে।
রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পরপরই পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সন্ধ্যায় কারাগারের সামনে রাস্তায় যান চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২:১৯:৩৫ ৩৯০ বার পঠিত