বঙ্গনিউজ ডটকমঃ ঢাকা ও চট্টগ্রামের সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে সম্প্রতি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল দিতে অপারগতা প্রকাশ করে সংসদ সচিবালয় এক চিঠিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে এমন দাবি করেছে।এতে বিস্ময় প্রকাশ করে ইসি কর্মকর্তারা বলেছেন, এ ধরনের চিঠি কখনোই ‘কাম্য নয়’।
সংসদ সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সেকেন্দার হায়াত রিজভী স্বাক্ষরিত ওই চিঠি ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়।
এর অনুলিপি ইসি সচিবের কার্যালয়েও পৌঁছেছে বলে নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ সচিব সামসুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
৩০ মার্চ পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, সংবিধানের ৭৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জাতীয় সংসদের নিজস্ব সচিবালয় প্রতিষ্ঠিত। এর নিজস্ব আইনে কর্মকর্তা ও কর্মচারীও রয়েছে। তাছাড়া জাতীয় সংসদ সচিবালয় সরকারের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়গুলোর মতো নয়।
“এ কারণে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দায়িত্ব পালনের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর তালিকা পাঠানোর অনুরোধ এ কার্যালয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না মর্মে নির্দেশক্রমে জানানো হলো।”
ইসি সচিবালয়ের একজন উপ সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংবিধান ও নির্বাচনী আইন অনুযায়ী ইসিকে সহায়তা করা সবার দায়িত্ব। সংসদের অধিবেশন বা অন্যান্য কার্যক্রম চললে অতীতেও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভোটের কাজে লাগানো হয়নি। কিন্তু এ ধরনের চিঠি কখনো কাম্য নয়।”
তিনি জানান, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসাবে ৫০ হাজারেরও বেশি লোকবল অন্যান্য মন্ত্রণালয় বা সংস্থা থেকে নিয়োগ হবে। ইতোমধ্যে প্যানেলের তালিকাও সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে গেছে। সেখান থেকেই পরে দায়িত্ব বণ্টন হবে।
নির্বাচনী আইনে বলা রয়েছে, “কমিশন তার বিধানাবলী সাপেক্ষে ভোট অনুষ্ঠানে সব ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে।”
কমিশন এই দায়িত্ব পালনে সহায়তা দিতে ‘রাষ্ট্রের যে কোনো ব্যক্তি বা নির্বাহী কর্তৃপক্ষকে’ প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে পারবে এবং নির্দেশনা পেলে ওই ব্যক্তি বা নির্বাহী কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব পালনে সহায়তা করতে ‘বাধ্য থাকবে’।
গত ৪ মার্চ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জন্য প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার এবং অন্যান্য কর্মকর্তার প্যানেল তৈরির বিষয়ে ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা সংসদ সচিবালয়কে চিঠি দেন।
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগে সহায়তা দিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকেও ইসি থেকে চিঠি দেওয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসাইন ভূইয়া এ বিষয়ে সহায়তা দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন বলে ইসি কর্মকর্তারা জানান। কিন্তু সংসদ সচিবালয়ের চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, তারা এ নিয়মের বাইরে।
সংসদ সচিবালয়ের কেউ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শুরু এপ্রিলে
প্রায় ৫১ হাজার ৭৯৯ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দিতে ২ কোটি ৯২ লাখ ৩ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছে ইসি।
এপ্রিলের ১৭ ও ১৮ এপ্রিল এবং ২২ থেকে ২৫ এপ্রিল ছয় ধাপে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রামে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে ইসি কর্মকর্তারা জানান।
এর মধ্যে ঢাকা উত্তরে ১ হাজার ৯৩টি ভোটকেন্দ্রের বিপরীতে ৫ হাজার ৮৯২টি ভোট কক্ষ ধরে ৭ হাজার ৩৩৪ জন প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এবং ১২ হাজার ৩৭৩ জন পোলিং কর্মকর্তার হিসাবে ইসি প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ঢাকা দক্ষিণে ৮৮৯টি ভোটকেন্দ্রের বিপরীতে ভোটকক্ষ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৭৪৬টি । এ জন্য ৫ হাজার ৯১৭ জন প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এবং ৯ হাজার ৯৬৭ জন পোলিং কর্মকর্তা প্রয়োজন হবে।
চট্টগ্রামে ৭১৯টি ভোটকেন্দ্রের বিপরীতে ৪ হাজার ৯০৬ ভোটকক্ষে ভোট নেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে। এ জন্য ৫ হাজার ৯০৬ জন প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এবং ১০ হাজার ৩০৩ জন পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে।
ইতোমধ্যে তিন সিটিতে মনোনয়নপত্র বাছাই শেষ হয়েছে। ৯ এপ্রিল পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার শেষে ২৮ এপ্রিল তিন সিটিতে ভোট হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১:০৫:৩৫ ২৯৭ বার পঠিত