বঙ্গনিউজ ডটকম: সময়মতো বকেয়া কর পরিশোধ না করার অভিযোগে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তলব করেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ।
সোমবার এক প্রতিবেদনে দৈনিকটি জানায়, রবিবার এনবিআরের কর অঞ্চল-৬ (ঢাকা)-এর ১১৪ নং সার্কেল থেকে তাকে তলব করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। বিষয়টি আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর- টিআইএন ১৭৯১০২৮৬৯৫) বকেয়া করের পরিমাণ ১৩ কোটি ৮৫ লাখ ২৫ হাজার ১২০ টাকা। ২০১১-১২, ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ করবর্ষের এ বকেয়া পরিশোধের জন্য এনবিআরের পক্ষ থেকে কয়েক দফা তাগাদা দেয়া হয় তাকে। এরপরও বকেয়া কর পরিশোধ না করায় কর অঞ্চল-৬-এর ১১৪ নং সার্কেলের পক্ষ থেকে তলব করা হয়েছে নোবেল বিজয়ী এ নাগরিককে। ২৯ মার্চ বেলা ১১টায় কর কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য তাকে অনুরোধ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কর অঞ্চল-৬-এর কর কমিশনার মো. মেফতাহ উদ্দিন খান বলেন, ৫০ লাখ টাকার উপরে যাদের বকেয়া আছে, তাদের ডাকা হচ্ছে। প্রতিদিনই বড় বকেয়া আছে, এমন করদাতাদের ডাকছি। বকেয়া আদায়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় পাওনা আদায়ে আইনগতভাবে যা যা করার, সবকিছু করা হবে। এরই অংশ হিসেবে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেও ডাকা হয়েছে। আশা করছি, তার কাছে থাকা বকেয়া আদায় করা সম্ভব হবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে তলবের বিষয়টি এরই মধ্যে এনবিআরে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে কর অঞ্চল-৬। চিঠির নথি নং ১-ই/ বকেয়া কর/২০১৪-১৫। এতে বলা হয়েছে, কর অঞ্চল ৬-এর ১১৪ নং সার্কেলে ৫০ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে বকেয়া কর পাওনা রয়েছে, এমন করদাতা ও তার প্রতিনিধিদের সরাসরি সাক্ষাতের দিন ও সময় ধার্য করা হয়েছে। করদাতাদের এ ব্যাপারে অবহিত করার জন্য সার্কেল কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। বকেয়া কর দ্রুত আদায়ের বিষয়ে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
এনবিআরের করনীতি বিভাগের সদ্যবিদায়ী সদস্য সৈয়দ আমিনুল করিম বলেন, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের করের বিষয়ে আমরা যখন দায়িত্ব পালন করেছি, তখনো কয়েক দফা খোঁজ নেয়া হয়। তখন কোনো বকেয়া কর পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করদাতাদের কাছে আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক বিভাগের বকেয়া প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা। সাধারণ করদাতারা যখন প্রতি বছর নিয়মিত কর পরিশোধ করছেন, তখন একটি বিশেষ শ্রেণী কর বকেয়া রাখছেন বছরের পর বছর। বিশেষ করে উচ্চ আদালতে মামলা করে বকেয়া রাখছেন তারা। এ অবস্থায় পুরনো পাওনা আদায়ে নতুন করে তৎপর হয়েছে এনবিআর। এর অংশ হিসেবে বকেয়া করের বিষয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এনবিআরের মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে।
এ বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক লামিয়া মোর্শেদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। বিস্তারিত জানতে ই-মেইল করার পরামর্শ দেন। কিন্তু ই-মেইল করা হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
এর আগে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠা করা গ্রামীণ ব্যাংক ও তার ৫৪ সহযোগী প্রতিষ্ঠানের আয়করের নথি তলব করে এনবিআর। কর বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলগুলোকে চিঠি দিয়ে হালনাগাদ তথ্য দিতে বলা হয়। সেখানে গ্রামীণ ব্যাংক ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠার পর থেকে যাবতীয় করসংক্রান্ত তথ্য দিতে চাওয়া হয়।
এ বিষয়ে এনবিআরের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব পালনকালে প্রতিষ্ঠানগুলোর কর ফাঁকি দেয়ার বিষয়টি যাচাই-বাছাই করার জন্য নথি তলব করা হয়েছিল। গ্রামীণ ব্যাংক বিভিন্ন সময় কর রেয়াত নিয়েছে। সেগুলোও বৈধভাবে নেয়া হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার জন্য তথ্য নেয়া হচ্ছে। এর বাইরে আর কোনো ফাঁকি আছে কিনা, তাও যাচাই করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৪১:৫৫ ৩৬৯ বার পঠিত