বঙ্গনিউজ ডটকমঃফলটি প্রথমে দেখতে থাকে বুনো কোনো ফলের মতো। বাইরে রয়েছে সবুজ একটি আবরণ। সেটি খুললে বোঝা যায় আসল রূপ। যে কেউ দেখে তখন টমেটো বলে ভুল করতে পারেন। কিন্তু পুষ্টিকর এ ফলটি বিশেষ কোনো টমেটো নয়, টমাটিলো।রাজধানীর শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স অ্যান্ড প্লান্ট ব্রিডিং বিভাগের অধ্যাপক ড. নাহিদ জেবার উদ্যোগে দেশে প্রথমবারে মতো চাষ করা হয়েছে এ সবজিজাতীয় ফলটি। কীটনাশক ও বিষমুক্ত পরিবেশবান্ধব পুষ্টিকর মেক্সিকান টমাটিলোর ভালো ফলনও পাওয়া গেছে এদেশের আবহাওয়ায়।
টমাটিলোর গায়ে বৃতির আবরণ থাকায় দেখে মনে হবে ফোসকা পড়েছে। কিন্তু এটি বিষাক্ত কিংবা বুনো ফল নয়। খোসা ছাড়ানো হলে মনে হবে টমেটো। সুবিধা হলো, খোসার আবরণ থাকায় পোকা-মাকড় ও টমেটোর মতো পাতা মোড়ানো রোগ, পাতার মোজাইক ভাইরাস রোগ হয় না। স্বাদ টমেটোর চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। ওজনও বেশি।
টমাটিলোর উৎপত্তি মেক্সিকোতে হলেও আমাদের দেশীয় জলবায়ু টমাটিলোর অনুকূলে থাকায় উৎপাদন দ্বিগুণ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
প্রচলিত টমেটো চাষে প্রয়োজন হয় মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক। তবে টমাটিলো চাষে কীটনাশক ছাড়াই নামমাত্র রাসায়নিক সার ব্যবহার করে ফলন পাওয়া যাচ্ছে প্রতি হেক্টরে প্রায় ৬০ টন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা মাঠে কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই টমাটিলো উৎপাদন করায় পরিবেশ যেমন অপরিকল্পিত বিষাক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের হাত থেকে রক্ষা পাবে, তেমন কৃষকের উৎপাদন খরচও কমবে।
টমাটিলো সম্পর্কে প্রফেসর ড. নাহিদ জেবা বাংলানিউজকে বলেন, টমাটিলোতে ফ্ল্যাভিনয়েড থাকায় এটি লাং ও মুখ গহ্বরের ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া পেক্টিনের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি এন্টিকনস্টিপেশন, এন্টিডায়রিয়া উপাদান হিসেবে কাজ করে।পাশাপাশি রক্তে গ্লুকোজ ও কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়।
আর্ন্তজাতিক বাজারে এ সবজির অধিক চাহিদা থাকায় চেরি, স্ট্রবেরি, ড্রাগন ফল, প্যাশনের মতো এটিও বাণিজ্যিক চাষাবাদ করে করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
জানা যায়, প্রতিটি টমাটিলো গাছে আড়াই থেকে তিন কেজি ফল ধরায় গাছ সোজাভাবে দাঁড় করিয়ে রাখতে প্রয়োজন হয় খুঁটির। স্থানীয়ভাবে ‘খোসা টমেটো’ নামের এ সবজির পুষ্টিগুণ প্রোটিন ও ক্যারোটিন সমৃদ্ধ। ক্যানসার প্রতিরোধসহ ভিটামিন-সি’র অভাব পূরণ করতেও সক্ষম টমাটিলো।
টমাটিলো আমাদের দেশীয় টমেটোর সোলানেসি গোত্রের একটি সবজি। এর বৈজ্ঞানিক নাম Physalis ixocarpa।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স অ্যান্ড প্ল্যান্ট ব্রিডিং বিভাগের অধ্যাপক ড. নাহিদ জেবা দেশে প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার মাঠে এই সবজি চাষ করেন।
টমাটিলোর উপকারী দিক সম্পর্কে অধ্যাপক ড. নাহিদ বাংলানিউজকে বলেন, দেশীয় টমেটোর আদলে টমাটিলো চাষ করা হলেও দেশি টমেটোর চেয়ে এক মাস আগেই গাছে ফুল ধরে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই ফল সংগ্রহ করা সম্ভব।
এছাড়া এটি দেশীয় টমেটোর মতো একগুচ্ছে না হয়ে আলাদা আলাদাভাবে জন্মে। একটি গাছ থেকে আড়াই থেকে তিন কেজি টমাটিলো পাওয়া যায়।
টমাটিলো সালাদ, সস ও সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। কাঁচা অবস্থায় বেশ সুস্বাদু।
মাঠ পর্যায়ে টমাটিলোর চাষে কৃষক যেমন লাভবান হবেন, তেমন পরিবেশও থাকবে ক্ষতিকর কীটনাশক মুক্ত।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:১৩:৫০ ১৭৮৪ বার পঠিত