বঙ্গনিউজ ডটকম: খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারেনি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা নির্দেশনার পরও খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়নি তারা। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
গত বছরের ডিসেম্বর শেষে পাঁচ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণই ১০ শতাংশের ওপর ছিল। এর মধ্যে বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের এ হারকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে এর কারণ জানতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে চলতি মাসের শুরুর দিকে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা ও বেসিক ব্যাংকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে খেলাপি ঋণ আদায়ে কার্যকর ব্যবস্থাদি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার নির্দেশ ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ এ সময়সীমার মধ্যে থাকলেও তাতে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৪ সাল শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ২২৪ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ২৮.৫ শতাংশ।
রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা বা বিতরণ করা ঋণের ১০.৩১ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত আরেক ব্যাংক জনতার খেলাপি ঋণ ছিল ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১১.৪১ শতাংশ।
১৭ শতাংশের ওপর খেলাপি ঋণ রয়েছে অগ্রণী ব্যাংকেরও। তবে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে বেসিক ব্যাংক। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা, বিতরণ করা ঋণের যা ৫৩.৩২ শতাংশ।
বিরাজমান পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ উদ্বেগজনক পর্যায়ে থাকার কারণ ব্যাখ্যাসহ তা আদায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, সামগ্রিকভাবে খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে নেমে এলেও সরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তা হয়নি। এ কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তদারকির মধ্যে রাখা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের শেষ প্রান্তিকে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ঋণ নীতিমালায় বিশেষ ছাড় দেয়া হয়। সাম্প্রতিক অস্থিরতার কারণেও বড় অঙ্কের ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দেয়া হয়।
গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নিয়ে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় গভর্নর ড. আতিউর রহমান যে কোনো মূল্যে খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দেন।
২০১৪ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ৯.৬৯ শতাংশ; সেপ্টেম্বর শেষে যেখানে খেলাপি ঋণের হার ছিল ১১.৬ শতাংশ। যদিও ২০১৩ সালে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার ছিল বেশ কম ৮.৯৩ শতাংশ। আর ২০১২ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ছিল বিতরণ করা ঋণের ১০.৩ শতাংশ।
অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, ‘ঋণ আদায়ে জোন ও শাখাভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয়া হয়েছে। বড় গ্রাহকদের ঋণ আদায়ে আমি নিজেই আলোচনা করছি। এভাবে চললে চলতি বছরই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’
এক বছরে বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৫ হাজার ৭২ কোটি টাকা। ২০১৩ সাল শেষে ব্যাংকটির ১ হাজার ২৮২ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ থাকলেও ২০১৪ সাল শেষে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা অনিয়মের পর ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অপসারণ ও নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে।
২০১৪ সালে সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী শীর্ষ খেলাপিদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ও করতে পারেনি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সোনালী ব্যাংক আদায় করেছে ৭৩৮ কোটি টাকা।
এছাড়া ১ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অগ্রণী ব্যাংক ৪৪৫ কোটি, ১৫০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রূপালী ব্যাংক ১২৫ কোটি ও ৮০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে জনতা ব্যাংক আদায় করতে পেরেছে ৮৮৫ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘খেলাপি ঋণ কমিয়ে ব্যাংকটিকে ভালো অবস্থায় নেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এজন্য সব ধরনের তত্পরতায় চলছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে চলতি বছরেই ভালো অবস্থায় চলে যাবে রূপালী ব্যাংক।’
বাংলাদেশ সময়: ১৪:০৯:১৮ ৩৮৪ বার পঠিত