বঙ্গ-নিউজঃ সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেমে হরতাল-অবরোধে থাকলেও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এই ভোটে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নাকচ করেনি বিএনপি।
বিএনপির যুগ্মমহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন বুধবার রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, “বিএনপি জনগণের দল, কোনো নির্বাচনকে তারা ভয় পায় না।
“যে কোনো নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিএনপি নেবে। আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়া, না নেওয়ার বিষয় দলীয় ফোরামেই সিদ্ধান্ত হবে।”
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক পদে পুনর্নির্বাচিত হয়ে দলীয় চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করতে যান সাবেক সংসদ সদস্য খোকন।
সমিতিতে পুনর্নির্বাচিত সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেনের সঙ্গে যান তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব সাংবাদিকদের বলেন, “বিএনপি যে কোনো নির্বাচনে অংশ নিলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে।”
২৮ এপ্রিল ভোটের দিন রেখে বুধবার দুপুরেই ইসি ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম এই তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে ঢাকায় তাদের দুই মেয়র প্রার্থী ঠিক করেছে। চট্টগ্রামে কয়েকজন নির্বাচনী দৌড়ে থাকলেও প্রার্থী এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
বর্তমান ইসিকে সরকারের ‘আজ্ঞাবহ’ বলে আসছে বিএনপি। তবে এই ইসির অধীনেই কয়েকটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপি নেতারা বিজয়ী হয়েছেন।
দশম সংসদ নির্বাচন বয়কটের পর নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগাম নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। এই দাবিতে গত ৫ জানুয়ারি লাগাতার অবরোধ ডাকেন খালেদা জিয়া।
সেই কর্মসূচির সঙ্গে ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে হরতালও চলছে। তবে বিএনপির দাবির প্রতি সরকারের কোনো সাড়া নেই।
এই আন্দোলনের মধ্যে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হলে বিএনপি নেতারা প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি ফেরাতেই ভোটের আয়োজন করছে সরকার।
আন্দোলনের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা কারাগারে রয়েছেন। গ্রেপ্তার এড়াতে অনেক নেতাই আছেন অপ্রকাশ্যে। খালেদা জিয়া নিজে রয়েছেন কার্যালয়ে ‘অবরুদ্ধ’।
তবে স্থানীয় পর্যায়ের বিএনপি নেতাদের মনোভাব নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষেই বলে তাদের আলোচনায় জানা যায়।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ভাঙার আগে অবিভক্ত কর্পোরেশনের সর্বশেষ মেয়র ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিদায়ী মেয়র এম মঞ্জুর আলমও বিএনপির। দুই কর্পোরেশনের অধিকাংশ কাউন্সিলরও বিএনপির।
সুপ্রিমে কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে বিএনপির জয়ের দিকটি দেখিয়ে তৃতীয় বার সভাপতি নির্বাচিত হওয়া খন্দকার মাহবুব বলেন, “বিএনপি আইনের শাসন ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। ব্যাপক জনসমর্থন এই দলের রয়েছে। নির্বাচনকে আমরা ভয় পাই না।
“সুপ্রিম কোর্টসহ সারাদেশে আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ৮০ ভাগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের প্যানেল বিজয়ী হয়েছে। এটাই তার প্রমাণ।”
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তার এই উপদেষ্টা বলেন, “আমরা আইনজীবী। এই বিষয়ে কোনো আলোচনা আমাদের সঙ্গে হয়নি।
“তবে আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, বিএনপি নির্বাচনকে ভয় পায় না। যে কোনো নির্বাচন অংশ নিলে বিএনপি তাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।”
৫ জানুয়ারি নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে গুলশানে নিজের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া। পরে পুলিশ বেষ্টনি সরালেও তিনি কার্যালয় ছাড়েননি। ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ওই কার্যালয়ে ঢোকা-বের হওয়া পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করছে।
রাত ৮টার দিকে খন্দকার মাহবুব ও মাহবুবউদ্দিন খোকন ওই কার্যালয়ে গেলে ফটকের সামনে পুলিশের বিশেষ শাখার সদস্যরা নাম-ঠিকানা তাদের খাতায় লিখে ঢুকতে দেয়।
খালেদা জিয়া শুভেচ্ছা জানাতে ফুল নিয়ে আসেন দুই আইনজীবী নেতা। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর বেরিয়ে আসেন তারা।
দলীয় কার্যালয়ে অবস্থানের মধ্যে জিয়া ট্রাস্টের দুই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা হয়। এরপর তিনি আর আদালতে হাজিরা দেননি।
খালেদা জিয়ার হাজিরার বিষয়ে জানতে চাইলে খন্দকার মাহবুব বলেন, “আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনি প্রক্রিয়া মেনে যেসব কাজ করা দরকার, আমরা সে ধরনের ব্যবস্থা নেব।”
খালেদা জিয়া কবে আদালতে যাবেন- প্রশ্ন করা হলে তিনি এ বিষয়ে আর কিছু বলতে রাজি হননি।
বাংলাদেশ সময়: ০:০২:০০ ৪৪২ বার পঠিত