বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ লন্ডনে অনেকটাই নীরব হয়ে গেছেন তারেক রহমান। থেমেছে তার `ইতিহাসের পাঠদান’। রাজনৈতিক আশ্রয়ে থেকে যখন তথন দলীয় কর্মসূচির নামে দেশের সরকার বিরোধী, ইতিহাস ঐতিহ্য-চেতনা বিরোধী যেসব কথা-বার্তা সারাক্ষণই বলতেন বিএনপি’র এই সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তা বন্ধ হয়েছে।
ধারনা করা হচ্ছে, আইনের দৃষ্টিতে পলাতক আসামি বলে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার করা যাবেনা, দেশের সংবাদমাধ্যমকে উচ্চ আদালতের দেওয়া এমন নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতেই মুখ বন্ধ হয়েছে তারেক রহমানের।
লন্ডনে দলীয় নেতাদের বক্তব্যেও উঠে আসছে সে আভাস। তারাও ধারনা করছেন, দেশের সংবাদমাধ্যমে যদি কথা প্রকাশ নাই হয়তো কি ফায়দা।
তবে তারেকের এই আচরণে তারা নিজেদের কিছুটা বঞ্চিতও মনে করছেন।
যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে লন্ডনে অবস্থান করে দিন কয়েক আগেও নির্বিচারে ‘ইতিহাসের পাঠদান’ করে যাচ্ছিলেন তারেক রহমান।
ঘন ঘন সমাবেশ ডেকে নিজের মত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে, জাতির জনকের বিরুদ্ধে নিজের মনগড়া কথা বলতেন তিনি।
কিন্তু লন্ডনে দলীয় কর্মসূচিগুলোতেও এখন আর উপস্থিতি নেই বললেই চলে তারেক রহমানের।
সবশেষ কুইনসমেরি ইউনিভার্সিটির লেকচার থিয়েটারে সদ্যপ্রয়াত ছোটভাই আরাফাত রহমান কোকোর এক শোকসভায় সস্ত্রীক উপস্থিত হয়েছিলেন। কিন্তু সেদিনও নেতা-কর্মীদের হতাশ করে দিয়ে কোনো বক্তব্য রাখেননি।
সিটিজেন কন্ডোলেন্স নাম দিয়ে আয়োজিত ওই শোকসভায় তারেক রহমান বক্তব্য রাখবেন, সে প্রত্যাশা নেতাকর্মীদের ছিলো।
কিন্তু কোনও কথাই বলেননি তিনি।
এতে অবশ্য নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটু ক্ষোভও সৃষ্টি হয়। তাদের মতে, দেশের রাজনীতি নিয়ে না হয় নাই বললেন, ভাইয়ের মৃত্যুতে তাকে নিয়েও তো দুটি কথা বলতে পারতেন তারেক রহমান।
দেশে প্রচার না হলেও সেখানকার নেতা-কর্মীরাতো শুনতে পেতেন সে কথা।
ওই দিন দর্শক সারিতে স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে নিয়েই বসেছিলেন তারেক রহমান।
এ সময় অবশ্য ঘটে আরেকটি ঘটনা। ওই কর্মসূচিতে যারা বক্তব্য রেখেছিলেন তাদের মুখে সেদিন তারেক-বন্দনার চেয়ে বেশি বেশি ফুটছিলো জোবাইদা-বন্দনার খই।
এতে নতুন আলোচনার খোরাক দিয়েছে নেতাকর্মীদের মাঝে।
বিএনপি রাজনীতিতে জোবাইদাকে সামনে নিয়ে আসার পরিকল্পনা হচ্ছে! এমন একটি কথা আগে থেকেই গুঞ্জনে ছিলো। ওই দিন জোবাইদা বন্দনা যেনো সে ভাবনায় ইতিবাচক পেরেকই ঠোকা হলো, বলে মনে করছেন কর্মীরা।
এর বিচার-বিশ্লেষণও শোনা গেলো তাদের কথা-বার্তায়। কারো কারো জিজ্ঞাসা তারেক কি তাহলে বুঝে গেছেন বাংলাদেশে গিয়ে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ তার কমে আসছে?
প্রশ্নগুলো ওই বৈঠকের পরেও ঘুরপাক খাচ্ছে লন্ডনের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে।
দলীয় কর্মসূচিতে তারেক কেন আর যাচ্ছেন না? যুক্তরাজ্য বিএনপি’র একজন নেতাকে সে প্রশ্ন করা হলে, নাম প্রকাশে আপত্তি জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন উচ্চ আদালত। বক্তব্য যদি দেশবাসীর কাছে নাই পৌঁছালো তাহলে কেন আর বক্তব্য দেয়া’।
তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র ব্রিটেনের বাংলা সংবাদ মাধ্যমগুলোতে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার হলে তাতে দলের তেমন কোন লাভ নেই। বর্তমান ‘ক্রান্তিকালে’ দলের কর্মীরা তারেক রহমানের কথাই শুনতে চায়, এই কথা যদি তাদের কাছে না পৌছানো যায়, তাহলে বক্তব্য দিয়ে লাভ কি’।
তবে এই নীরব হয়ে যাওয়ার আগে প্রায় সব ধরনের দলীয় কর্মসূচিতে নিয়মিতই বক্তব্য রাখছিলেন তারেক রহমান। প্রতিটি বক্তব্যেই তিনি নিজের মত করে মুক্তিযুদ্ধের ‘ইতিহাস রচনা’ করে শোনাতেন নেতাকর্মীদের।
শুধু ইতিহাস পাঠ নয়, এইসব বক্তব্যে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে বিভিন্ন আপত্তিকর মন্তব্য করে বিতর্ক উস্কে দেয়ার এক খেলা শুরু করেছিলেন তিনি। এইসব আপত্তিকর মন্তব্যের পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি বিশেষ করে প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের নেতারা যখন তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়তেন, তারেক তখন বঙ্গবন্ধুর চরিত্র হণনে আরও নতুন নতুন মনগড়া বক্তব্য নিয়ে আসতেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:০৮:২০ ২৫৬ বার পঠিত