ক্রীড়া ডেস্ক: মাহমুদউল্লাহর টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে ২৮৮ রানের বড় পুঁজি। বল করতে নেমে শুরুতেই সাকিবের স্পিন ঘূর্ণিতে একই ওভারে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও কেন উইলিয়ামসনের বিদায়। শেষ পর্যন্ত কোনো কিছুই কাজে দিল না। জয়ের আশা জাগিয়েও নিউজিল্যান্ডের কাছে ৩ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ।
শুক্রবার হ্যামিলটনে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে আগে ব্যাট করে মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরিতে ৭ উইকেটে ২৮৮ রানের লড়াকু স্কোর গড়ে বাংলাদেশ। জবাবে ৩ উইকেট ও ৭ বল হাতে রেখে জয় তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড।
২৮৯ রানের লক্ষ্যে খেলতে নামা নিউজিল্যান্ডের ৩৩ রানের মধ্যেই ২ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। সাকিবের স্পিন ঘূর্ণিতে একই ওভারে সাজঘরে ফেরেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম (৮) ও কেন উইলিয়ামসন (১)। তবে তৃতীয় উইকেটে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন মার্টিন গাপটিল ও রস টেলর। সেঞ্চুরিও তুলে নেন গাপটিল। তবে সেঞ্চুরির পরই গাপটিলকে (১০৫) ফিরিয়ে ১৩১ রানের জুটি ভাঙেন সাকিব।
দলীয় ২০৪ রানে গ্র্যান্ট এলিয়টকে (৩৯) তাসকিনের ক্যাচে পরিণত করেন রুবেল হোসেন। দলীয় ২১৯ রানে রস টেলরকে (৫৬) বিদায় করেন নাসির। এরপর দলীয় ২৪৭ রানে লুক রনকিকে (৯) নাসিরের ক্যাচ বানান সাকিব। তবে আক্রমণাকত্মক ব্যাটিংয়ে নিউজিল্যান্ডকে জয়ের দিকে এগিয়ে নিতে থাকেন কোরি অ্যান্ডারসন।
শেষ ১৮ বলে নিউজিল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ২৬ রান। আর বাংলাদেশের ৪ উইকেট। ৪৮তম ওভারে বোলিংয়ে আসেন নাসির। তার প্রথম বলে ছক্কা মারের অ্যান্ডারসন। তবে পরের বলেই অ্যান্ডারসনকে (৩৯) বোল্ড করে বাংলাদেশের জয়ের আশা জাগিয়ে তোলেন নাসির। কিন্তু ড্যানিয়েল ভেটোরি ও টিম সাউদির কল্যাণে ৩ উইকেটের জয় তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড।
বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন আজকের ম্যাচে মাশরাফির বদলে অধিনায়কত্ব করা সাকিব।
এর আগে মাহমুদউল্লাহর ১২৮* রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংসের সুবাদে বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহর ১২৩ বলের ইনিংসে ছিল ১৩টি চার ও ৩টি ছক্কার মার। অভিষেক ওয়ানডে ফিফটি করা সৌম্য সরকারের ব্যাট থেকে আসে ৫১ রান। এ ছাড়া মাত্র ২৩ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৪০ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন সাব্বির রহমান।
যদিও টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভাল হয়নি বাংলাদেশের। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে দলীয় ৪ রানে ট্রেন্ট বোল্টের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন ইমরুল কায়েস (২)। ইমরুলের অফ স্ট্যাম্প উপড়ে কয়েক হাত পেছনে ফেলেন কিউই পেসার বোল্ড। এদিন মাত্র ২ রান করেন ইমরুল। এনামুল হকের ইনজুরিতে বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া এই ওপেনার আগের ম্যাচেও ২ রান করেছিলেন।
এরপর দ্বিতীয় উইকেটে সৌম্যর সঙ্গে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন তামিম। ইনিংসের দশম ওভারে ওই বোল্টের বলেই দ্বিতীয় স্লিপে কোরি অ্যান্ডারসনের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন এই ওপেনার। এদিন তামিমের সংগ্রহ ১৩ রান। তামিম-সৌম্য জুটিতে আসে ২৩ রান।আগের ম্যাচের মতো এদিনও তৃতীয় উইকেটে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন সৌম্য ও মাহমুদউল্লাহ। দলীয় ১১৭ রানে সৌম্যকে ফিরিয়ে তাদের ৯০ রানের জুটি ভাঙেন ড্যানিয়েল ভেটোরি। বিদায় নেওয়ার আগেই ক্যারিয়ারের অভিষেক ওয়ানডে ফিফটি তুলে নেন সৌম্য। কোরি অ্যান্ডারসনের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৫৮ বলে ৭ চারে ৫১ রান করেন তিনি।
এরপর দ্রুতই রান তুলে দলীয় ১৫১ রানে কোরি অ্যান্ডারসনের বলে লুক রনকির গ্লাভসবন্দি হন সাকিব। ১৮ বলে ৩ চারে ২৩ রান করেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। সাকিবের বিদায়ের পর পঞ্চম উইকেটে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিক। তবে দলীয় ১৮২ রানে মুশফিক ওই কোরি অ্যান্ডারসনের বলেই লুক রনকির গ্লাভসবন্দি হন। ২৫ বলে ২ চারে ১৫ রান করেন মুশফিক। পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ-মুশফিক জুটিতে আসে ৩১ রান।
মুশফিকের বিদায়ের পর সাব্বিরের সঙ্গে জুটি বাঁধেন এক প্রান্ত আগলে রাখা মাহমুদউল্লাহ। এ জুটিতে দুজন সেডন পার্কে চার-ছক্কার বৃষ্টি নামান। সেই সঙ্গে আসরে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন মাহমুদউল্লাহ। দলীয় ২৬০ রানে বিদায় নেন সাব্বির। ষষ্ঠ উইকেটে মাত্র ৪৮ বলে ৭৮ রানের জুটি গড়েন মাহমুদউল্লাহ-সাব্বির।
এরপর ইনিংসের এক বল বাকি থাকতে সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিদায় নেন নাসির হোসেন। ৭ বলে এক ছক্কায় ১১ রান করেন নাসির। আর শেষ পর্যন্ত ১২৮ রানে অপরাজিত থেকে বাংলাদেশকে লড়াকু পুঁজি এনে দেন মাহমুদউল্লাহ।
নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ট্রেন্ট বোল্ট, কোরি অ্যান্ডারসন ও গ্র্যান্ট এলিয়ট নেন ২টি করে উইকেট।
ম্যাচ-সেরার পুরস্কার জিতেছেন মার্টিন গাপটিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৩৬:৪২ ২৫৬ বার পঠিত