বঙ্গ-নিউজঃ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সহজেই হারিয়ে এবারের বিশ্বকাপের প্রথম ‘অঘটন’ ঘটাল আয়ারল্যান্ড। বড় লক্ষ্য তারা করতে নেমে পল স্টার্লিং, এড জয়েস ও নায়াল ও’ব্রায়েনের নৈপুণ্যে ৪ উইকেট হাতে রেখেই পৌঁছে গেছে আইরিশরা।ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেয়া ৩০৫ রানের লক্ষ্যে ২৫ বল হাতে রেখেই পৌঁছে যায় আয়ারল্যান্ড। আইসিসির সহযোগী দেশটির অধিনায়ক উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড অবশ্য আগেই বলেছিলেন জিতলে তা কোনো বিস্ময়ের বিষয় হবে না। অঘটন হয়েছে বোঝার সুযোগ ছিল না তাদের উদযাপন দেখেও।তবুও টেস্ট খেলুড়ে একটি দলকে ওয়ানডে র্যা ঙ্কিংয়ে সবার নিচে থাকা দলটির হারানোটা ‘অঘটন’ হিসেবেই ধরা যায়।
‘জায়ান্ট কিলার’ আয়ারল্যান্ডের বিশ্বকাপ সাফল্যের মুকুটে আরেকটি পালক যোগ হল এবার। এর আগে পাকিস্তান, ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশকে হারানোর কৃতিত্ব রয়েছে তাদের।
লেন্ডল সিমন্সের শতকে আয়ারল্যান্ডকে বড় লক্ষ্যই দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলা অলরাউন্ডার ড্যারেন স্যামিরও দারুণ অবদান ছিল এতে।
বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে স্কটল্যান্ডকে ৩১৩ রানের বড় লক্ষ্য দিয়ে কোনোমতে ৩ রানের জয় পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এবার আর শেষরক্ষা হয়নি তাদের।
সোমবার নেলসনের স্যাক্সটন ওভালে ‘বি’ গ্রুপের খেলায় টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেটে ৩০৪ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাবে ৪৫ ওভার ৫ বলে ৬ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌছে যায় আয়ারল্যান্ড।
পোর্টারফিল্ডের সঙ্গে ৭১ রানের জুটিতে আয়ারল্যান্ডকে ভালো সূচনা এনে দেন স্টার্লিং। ক্রিস গেইল আয়ারল্যান্ডের অধিনায়ককে বিদায় করলেও দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন তিনি।
দ্বিতীয় উইকেটে জয়েসের সঙ্গে ১০৬ রানের আরেকটি চমৎকার জুটি উপহার দেন ম্যাচ সেরা স্টার্লিং। অষ্টম ওভারে জেরোম টেইলরের বল তার হেলমেটে লাগে। এই পেসারের করা ২৫তম ওভারে ১৮ রান তুলে নেন স্টার্লিং।
দলকে জয়ের পথে নিয়ে গেলেও স্টার্লিংকে (৯২) ফিরতে হয়েছে শতক না পাওয়ার হতাশা নিয়ে। মাত্র ৮ রানের জন্য শতক পাননি তিনি। তার ৮৪ বলের আক্রমণাত্মক ইনিংস গড়া ৯টি চার ও ৩টি ছক্কায়।
তৃতীয় উইকেটে নায়ালের সঙ্গে জয়েসের ৯৬ রানের আরেকটি জুটি দলকে ২ উইকেটে ২৭৩ রানে পৌঁছে দেয়। ৮৪ রান করা জয়ের ৬৭ বলের ঝড়ো ইনিংসটি ১০টি চার ও ২টি ছক্কা সমৃদ্ধ।
জয়েসের বিদায়ের পর অ্যান্ড্রু ব্যালবারনি, গ্যারি উইলসন ও কেভিন ও’ব্রায়েন দ্রুত ফিরে গেলেও জয় পেতে কোনো সমস্যা হয়নি আয়ারল্যান্ডের।
দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন নায়াল। ৭৯ রানে অপরাজিত থাকেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তার ৬০ বলের ইনিংসটি সাজানো ১১টি চারে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার টেইলর ৩ উইকেট নেন ৭১ রানে।
এর আগে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি প্রথম দুই আসরের চ্যাম্পিয়নদের। অষ্টম ওভারেই ৩১ রানে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে তারা।
কেভিনের বলে জন মুনিকে ক্যাচ দেন ডোয়াইন স্মিথ। সেই ওভারেই শূন্য রানে ফিরে যান ড্যারেন ব্র্যাভো। রান আউট হন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
গেইল ও মারলন স্যামুয়েলসের ৪৭ রানের জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দেখেশুনে খেলা এই দুই ব্যাটসম্যানকে তিন বলের মধ্যে ফিরিয়ে বড় একটা ধাক্কা দেন জর্জ ডকরেল।
কেভিনের হাতে ধরা পড়েন গেইল। ৩৬ রান করতে ৬৫ বল খেলেন এই বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। ৪১ বলে ২১ রান করে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন স্যামুয়েলস।
নিজের পরের ওভারে দিনেশ রামদিনকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপদ আরো বাড়ান বাঁহাতি স্পিনার ডকরেল।
৮৭ রানে প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঘুরে দাঁড়ায় স্যামি, সিমন্সের ব্যাটে। পাল্টা আক্রমণে ১৫৪ রানের জুটি গড়ে দলকে আড়াইশ’ রানের কাছাকাছি নিয়ে যান এই দুই জনে। বিশ্বকাপে ষষ্ঠ উইকেটে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি।
স্যামির বিদায়ে ভাঙে ২১.১ ওভার স্থায়ী ষষ্ঠ উইকেট জুটি। মুনির বলে ডকরেলের তালুবন্দি হওয়ার আগে ৮৯ রান করেন স্যামি। ওয়ানডেতে এটাই অলরাউন্ডারের সর্বোচ্চ। তার ৬৭ বলের আক্রমণাত্মক ইনিংসটি ৯টি চার ও ৪টি ছক্কা সমৃদ্ধ।
স্যামির বিদায়ের পর আন্দ্রে রাসেলকে সঙ্গে নিয়ে দলের সংগ্রহ তিনশ’ পার করেন সিমন্স। সিমন্স-রাসেল মাত্র ৩১ বলে ৬১ রানের জুটি গড়েন।
সিমন্স, স্যামি ও রাসেলের দাপটে শেষ ২০ ওভারে ১৯৮ রান সংগ্রহ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে তিন অঙ্কে পৌঁছান সিমন্স। ৮৪ বলে খেলা তার ১২৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংসটি গড়া ৯টি চার ও ৫টি ছক্কায়।
শেষ পর্যন্ত ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন রাসেল। তার ১৩ বলের ইনিংসটি সাজানো ৩টি চার ও ১টি ছক্কায়।
৫০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে আয়ারল্যান্ডের সেরা বোলার ডকরেল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ৩০৪/৭ (স্মিথ ১৮, গেইল ৩৬, ব্র্যাভো ০, স্যামুয়েলস ২১, রামদিন ১, সিমন্স ১০২, স্যামি ৮৯, রাসেল ২৭*, হোল্ডার ০; ডকরেল ৩/৫০, মুনি ১/৫৯, সরেনসেন ১/৬৪, কেভিন ১/৭১)
আয়ারল্যান্ড: ৪৫.৫ ওভারে ৩০৭/৬ (পোর্টারফিল্ড ২৩, স্টার্লিং ৯২, জয়েস ৮৪, নায়াল ৭৯*, ব্যালবারনি ৯, উইলসন ১, কেভিন ০, মুনি ৬*; টেইলর ৩/৭১, স্যামুয়েলস ১/২৫, গেইল ১/৪১)
ম্যাচ সেরা: পল স্টার্লিং।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৩০:০৬ ৪৭১ বার পঠিত