বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের টানা হরতাল-অবরোধে ভেঙে পড়ছে শিক্ষাব্যবস্থা। একের পর এক পিছিয়ে যাচ্ছে পাবলিক পরীক্ষা, উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস বন্ধ, স্কুল-কলেজে ক্লাস হলেও নাশকতার ভয়ে উপস্থিতি কম।
এতে একাডেমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ছাড়াও মনস্তাত্ত্বিক বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছেন বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় পাঁচ কোটি শিক্ষার্থী।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষাজীবনকে রাজনীতির বাইরে রাখতে হবে। শিক্ষাজীবন ধ্বংস হলে পাকাপোক্ত হবে না গণতন্ত্র।
নতুন বছরে বই উৎসবের মাধ্যমে প্রথম থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার পর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে নতুন উদ্যোমে ক্লাস শুরু হয়। কিন্তু ৬ জানুয়ারি থেকে লাগাতার অবরোধ শুরু করেছে বিএনপি জোট। এরমধ্যে টানা হরতালে বোমাবাজিতে আতঙ্কিত শিক্ষার্থীরা।
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্কুল-কলেজে ক্লাস হলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম। বোমাবাজি ও নাশকতার ভয়ে অভিভাবকরা সন্তানদের নিয়মিত স্কুলে পাঠাচ্ছেন না।
বিষয়টি স্বীকার করেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (ডিজি) ফাহিমা খাতুন।
তিনি বঙ্গনিউজকে বলেন, সামগ্রিকভাবে শিক্ষাব্যবস্থায় একটা সংকট দেখা দিয়েছে। বোমায় আহত হওয়ার ভয়ে শিক্ষার্থীরা ঘর থেকে বের হতে চায় না। অঞ্চল ভেদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির তারতম্য ঘটছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), মাউশি, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রাপ্ত তথ্যমতে বর্তমানে বিভিন্ন স্তরে প্রায় পাঁচ কোটি শিক্ষার্থী রয়েছে।
এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরে চার কোটি ৪৪ লাখ ৫২ হাজার ৩৭৪ জন, উচ্চ মাধ্যমিকে ২৫ লাখ, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ২৩ লাখ ৫০ হাজার ৮৯৭ (ইউজিসি বার্ষিক প্রতিবেদন-২০১৩) শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।
এছাড়াও ইংরেজি মাধ্যম ও কওমি বোর্ডসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আরো কয়েক হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।
সারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউজিসি চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী) এ কে আজাদ চৌধুরী।
অবরোধে ক্লাস হলেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষায় ভাটা পড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবরোধের দিন ক্লাস হলেও হরতালে বন্ধ থাকছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধ রয়েছে ক্লাস-পরীক্ষা। অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষা কার্যক্রমে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে।
ইউজিসি চেয়ারম্যান বঙ্গনিউজকে বলেন, হরতাল-অবরোধ-বোমাবাজিতে শিক্ষাজীবন ধ্বংস হচ্ছে। এখনই এগুলো থামাতে হবে। কারণ শিক্ষা ধ্বংস হলে কীসের গণতন্ত্র?
হরতালের কারণে এসএসসি ও সমমানের দু’দিনের ১২টি পরীক্ষা পিছিয়ে নেওয়া হয়েছে। হরতালে পড়েছে রোব-মঙ্গলবারের পরীক্ষাও।
শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবও পড়ছে জানিয়ে মাউশির ডিজি বলেন, একজন শিক্ষক হিসেবে বলবো, আমাদের ভবিষতকে ধ্বংস করা হচ্ছে।
এসএসসিতে অংশ নেওয়া ১৫ লাখ শিক্ষার্থীকে আগামী ৩০ বছর দেশ পরিচালনার হাতিয়ার উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, এই প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হলে আগামী দিনে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে।
হরতাল-অবরোধ-সহিংসতা এখনই থামানোর জোর আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ১১:১৫:৪৫ ৩১৩ বার পঠিত