বিশেষ প্রতিনিধিঃগত এক মাস ধরে বাংলাদেশে চলছে নজিরবিহীন রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতা। তবে এ সঙ্কটে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্ব শেখ হাসিনা সরকারের পাশে থাকতে প্রস্তুত। বিজেপির প্রথম সারির নেতারা সেরকমই ইঙ্গিত দিয়েছেন।বিজেপির নেতারা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার মতো ‘পরীক্ষিত বন্ধু’র পাশ থেকে সরে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তবে একান্ত আলোচনায় তারা এটাও স্বীকার করছেন, বিরোধী বিএনপির সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ আছে । কিন্তু সেটা স্বাভাবিক রাজনৈতিক সম্পর্কের বাইরে কিছু নয়।
বাংলাদেশে গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বর্ষপূর্তি থেকে বর্তমান সঙ্কটের শুরু, সেই নির্বাচনকে বলিষ্ঠভাবে সমর্থন করেছিল প্রতিবেশী ভারত। তার কয়েক মাসের মধ্যে খোদ ভারতেই ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে, কিন্তু কংগ্রেসকে হটিয়ে যারা দিল্লির ক্ষমতায় এসেছে সেই বিজেপি নেতৃত্বও শেখ হাসিনার ওপর পুরোপুরি ভরসা রাখতে রাজি বলেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থ নাথ সিংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনীতিকদের নিয়মিত যোগাযোগ আছে। বিজেপি নেতৃত্ব যে শেখ হাসিনার ওপর পুরোপুরি ভরসা রাখতে রাজি সেটি তিনি একরকম স্বীকারও করে নিচ্ছেন।
সিদ্ধার্থ সিং বলেন, ‘ভারতের সম্পর্কটা যদিও বাংলাদেশের সঙ্গে, তারপরও কোন দল সেখানে ক্ষমতায় সেটাও কিন্তু একটা ফ্যাক্টর। আর সে দিক থেকে বলতেই হবে, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের স্বার্থের প্রতি, আমাদের উদ্বেগের প্রতি দারুণ বিবেচনা দেখিয়েছেন। আর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে ভারত যে জাতীয় স্বার্থকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দেবে, তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।’
বিজেপি নেতারা বলছেন, শেখ হাসিনার ব্যাপারে ভারতের মোটেই কোনো ধৈর্যচ্যুতি হয়নি। বরং তাদের যুক্তি, ‘গণতন্ত্রের ওপর আস্থা রাখতে গেলে শেখ হাসিনাই কিন্তু আমাদের একমাত্র অপশন। কারণ ভারত মনে করে তিনি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি সরকারের প্রধান।’
তবে বাংলাদেশের এই মুহূর্তে যে সঙ্কট চলছে, তা সমাধানে হস্তক্ষেপ করতে রাজি নয় ভারত। বিজেপির পক্ষ থেকে তাদের জাতীয় মুখপাত্র এম জে আকবর বাংলাদেশ-সংক্রান্ত অনেক বিষয় দেখাশোনা করেন। তিনিও বলেন, ‘ভারত চায় সেখানে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হোক। কিন্তু তার জন্য ভারত আদৌ কোনো হস্তক্ষেপ করতে রাজি নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় চাই, আমাদের দেশে ও প্রতিবেশী দেশে শান্তি থাকুক। কিন্তু প্রতিবেশী দেশে পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠলেও সেখানে নাক গলানো বা হস্তক্ষেপ করাটা কিন্তু ভারতের নীতি নয়। সেটা ভারত কখনও করেনি, করবেও না।’
বিজেপি নেতারা দাবি করছেন, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটা পুরোপুরি সত্যি কথা। কারণ বাংলাদেশের এ পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করে ভারত শেখ হাসিনার সমস্যা বাড়াতে চায় না।
তবে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ভারতের ক্ষমতাসীন নেতৃত্বের ধারণা, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে সামরিক অভ্যুত্থানের কোনো আশঙ্কা নেই। ফলে অভ্যুত্থান হলে তারা শেখ হাসিনাকে সমর্থন করবেন কি না সে প্রশ্নও অবান্তর।
হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিলেও বিজেপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা কিন্তু স্বীকার করছেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতির দিকে তাদের সতর্ক নজর আছে। এমন কী বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গেও গত আট মাসে ধীরে ধীরে তাদের একটা রাজনৈতিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
বিগত ইউপিএ আমলে বিএনপির সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ একরকম থেমেই গিয়েছিল। সেটা আবার নতুন করে শুরু হয়েছে। তবে প্রসঙ্গটা এমনই স্পর্শকাতর, যে বিজেপি নেতারা বিএনপির সঙ্গে তাদের সম্পর্কর বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতেও চান না। আবার অস্বীকারও করতে পারছেন না।
এই পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতারা একটা কথাই শুধু জোর দিয়ে বলছেন, বাংলাদেশ সঙ্কটের সমাধান খুঁজতে হবে গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যেই। তার অর্থ যেভাবেই করা হোক না কেন, গণতন্ত্রের বাইরে এই সঙ্কটের অন্য কোনো সমাধান নেই। সেটাও তারা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন।
তথ্যসূত্র : বিবিসি বাংলা
বাংলাদেশ সময়: ১৬:০১:৩৪ ২৮৭ বার পঠিত