বঙ্গ-নিউজ:কারাগারে ছোট ভাইকে দেখতে গিয়েছিলেন খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান জনি (৩০)। কারা ফটক থেকে পুলিশ পরিচয়ে তাকে তুলে নেয়া হয়। গতকাল ভোরে তার লাশ পাওয়া যায় খিলগাঁওয়ের জোড়পুকুর পাড়ের বালুর মাঠে। পুলিশ বলেছে, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ জনি নিহত হয়েছে। অপর দিকে, জনির পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, জনিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। জনির বাবা-মা এবং ভাই দাবি করেছেন, জনির বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে তার সবই রাজনৈতিক। জনি কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত নয়।নিহত জনি খিলগাঁওয়ের ২০১, তিলপাপাড়ার বাসিন্দা ইয়াকুব আলীর ছেলে। গতকাল সকালে পরিবারের সদস্যরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে জনির লাশ শনাক্ত করেন। ইয়াকুব আলী বলেন, গত সোমবার সকালে ছোট ভাই মনিরুজ্জামান হিরাকে খিলগাঁও থানা পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। আদালতের মাধ্যমে হিরাকে কারাগারে পাঠানো হয়। গত সোমবার বিকেলে জনি তার সহকর্মী ছাত্রদল কর্মী মঈনকে নিয়ে ছোট ভাই হিরাকে দেখার জন্য কেন্দ্রীয় কারাগারের গেটে যান। ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ শেষে বের হওয়ার সময় কারা ফটক থেকে সাদা পোশাকের লোকজন নিজেদেরকে গোয়েন্দা সদস্য পরিচয় দিয়ে জনিকে তুলে নিয়ে যায়। গতকাল সকালে তিনি জানতে পারেন তার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ইয়াকুব আলী বলেন, ভোরে স্থানীয় বাসিন্দা ও থানা পুলিশ তাদেরকে জানায়, জনির গুলিবিদ্ধ লাশ জোড়পুকুর পাড়ের বালুর মাঠে পড়ে আছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা লাশ না পেয়ে হাসপাতাল মর্গে ছুটে যান। সেখানে তারা লাশটি শনাক্ত করেন।
ইয়াকুব আলী বলেন, তার ছেলের কি দোষ? তার ছেলে তো কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত নয়। তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে, সে বিএনপি করে বলে। তিনি বলেন, রাজনীতি সবাই করতে পারে। সে অধিকার সংবিধানে দেয়া আছে। কিন্তু কেউ রাজনীতি করলে তাকে মেরে ফেলতে হবে এমন অধিকার কে দিয়েছে? তার দোষ থাকলে আদালত বিচার করবেন। তিনি বলেন, বিকেলে ধরা হলো, আর রাতেই তাকে গুলি করে মেরে ফেলা হলো? এটা কোন দেশে বাস করছি? তিনি এই ঘটনার বিচার দাবি করে বলেন, ঘটনার ব্যাপারে তিনি আদালতে মামলা করবেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিল এমন প্রমাণ দিতে পারলে আমার হাতের কব্জি কেটে ফেলব।’ জনির মা বলেন, তার ছেলেকে কোথাও বের হতে দিতেন না। সারা দিন ঘরেই আটকে রাখতেন। তিনি তার ছেলেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, জনির বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো আছে তা রাজনীতি করার কারণে। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।
এ দিকে, ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ‘জনিকে পুরান ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে সে মৎস ভবনের সামনে পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা বর্ষণের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে। এরপর রাতে তাকে নিয়ে অস্ত্র ও বোমা উদ্ধারে বের হলে খিলগাঁও জোড়পুকুর পাড় এলাকায় আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় পাল্টা গুলি চালালে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জনিকে থানার এসআই আলাউদ্দিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’এ দিকে, জনিকে পুলিশ সন্ত্রাসী হিসেবে উল্লেখ করলেও তার বিরুদ্ধে ক’টি মামলা আছে তা বলতে পারেনি থানার ডিউটি অফিসার এসআই ইফতেখার। এ ব্যাপারে ওসির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বারবার ফোন কেটে দেন।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৩০:২২ ১০৯৫ বার পঠিত