বঙ্গ-নিউজ: আর বিদেশ নয়, এখন নগরীর শেরেবাংলানগরের জাতীয় ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতালে স্বল্প খরচায় হচ্ছে মাথার এনজিওগ্রাম, স্টেনটিং ও কয়েলিং। দেশে প্রথম বারের মতো আধুনিক ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে ১২৮ স্লাইস বিশিষ্ট সি.টি স্ক্যানার দিয়ে এনজিওগ্রাম করা হচ্ছে।
এছাড়া হাসপাতালে রয়েছে সুসজ্জিত আন্তর্জাতিক মানের ২টি ক্যাথল্যাব (একটি বাইপ্ল্যানার) যেখানে এনজিওগ্রামের পাশাপাশি স্টেনটিং, কয়েলিংয়ের মতো ইন্টারভেশনাল নিউরোলজি বিষয়ক সেবা দেওয়া হচ্ছে।
জাতীয় ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতাল সূত্র জানায়, স্বল্প খরচায় এই সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এনজিওগ্রামের জন্য ৫ হাজার টাকা, স্ট্যান্টিংয়ের জন্য ১ লাখ ২০ হাজার ও কয়েলিংয়ের জন্য এক থেকে চার লাখ টাকা খরচা পড়বে।
দেশের মাটিতে এ ধরনের চিকিৎসার জন্য ব্যপক সাড়া পড়েছে। এর ফলে ৩০০ শয্যার এই হাসপাতালে অনেক সময় রোগীদের বেড দেওয়া হয় না। এছাড়া অবকাঠামোগত সমস্যাও রয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
জাতীয় ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতালের মেডিসিন, ডায়াবেটিস ও নিউরো-মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এম. এস. জহিরুল হক চৌধুরী বলেন, দেশেই এই প্রথম আধুনিক ও ডিজিটাল মেশিন দিয়ে মাথার এনজিওগ্রাম, স্টেনটিং ও কয়েলিং করা হচ্ছে। দেশের মাটিতে বিদেশি সেবা পাওয়ায় রোগীর ব্যাপক চাপ রয়েছে। ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে সেই চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। অবকাঠামো সমস্যাসহ শয্যার সংখ্যা আরো বাড়ানো দরকার।’
অপরদিকে হাসাপাতালে ফিজিক্যাল মেডিসিন এবং রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ আছে। একজন স্ট্রোক রোগীর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার পর রোগীর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার এবং তাকে কর্মক্ষম করে তোলার বাকি কাজও এখানে করা হচ্ছে।
হাসপাতালের ১৩ নাম্বার বেডে চিকিৎসাধীন আছেন ওমর ফারুক(৩০)। ওমর ফারুকের জন্মস্থান কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে।১৩ তারিখ রাতে হঠাৎ ব্রেন স্ট্রোক হয় তার। শরীরের ডান পাশ বিকল হয়ে যায়। এর পরে তাকে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখন তিনি অনেকটাই সুস্থ বলে জানান ওমর ফারুকের স্ত্রী শাহানা আক্তার ঝর্ণা।
হাসাপাতালের চিকিৎসা পদ্ধতিতে খুশি সবাই। প্রতিদিন বিনা খরচায় খাবার ও স্বল্প খরচায় ওষুধ দেওয়া হয়। নিয়মিত রোগীদের খোঁজ খবর নেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
অপরদিকে ১৮ নাম্বার বেডে চিকিৎসাধীন আছেন রেজিয়া খাতুন। মাথায় গাছের ডাল পড়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এসেছেন কুমিল্লার মুরাদনগর থেকে।
রেজিয়ার বড় মেয়ে বিলকিস আক্তার বলেন, গাছের ডাল পড়ায় মা জ্ঞান হারায়। প্রথমে আমাদের কাউকে চিনতো না। কিছু মনেও করতে পারতো না। তবে এই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কারণে অনেকটাই সুস্থ। এখানে প্রাইভেট হাসপাতালের মতো চিকিৎসা পাচ্ছি।’
নবনির্মিত এই হাসপাতালে ৬টি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, ১৬ শয্যা-আইসিইউ, ৬ শয্যা-রিকভারি ইউনিট এবং ১২ শয্যা-পোস্ট অপারেটিভ ইউনিট রয়েছে।
এখানে আরো রয়েছে রেডিওলজি ও ইমেজিং ডিপার্টমেন্ট, আধুনিক ডিটিআই’র জন্য দু’টি এমআরআই মেশিন, ফাংশনাল এমআরআই ও এমইসিজি পরীক্ষার ব্যবস্থা।
হাসপাতালটিতে একটি বিশেষায়িত মৃগী রোগ বিভাগ, শিশুদের নিউরোডিজেনারেটিভ, নিউরো-মেটাবলিক ও নিউরো চিকিৎসা এবং অটিস্টিক শিশুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা এবং জেনেটিক কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থাও রয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, পক্ষাঘাত, মৃগীরোগ, স্নায়ুতন্ত্রের সংক্রামক, মাথাব্যাথা, কোমরব্যাথা, ব্রেইন টিউমার ও মস্তিস্কে পানিজমাসহ নানা রোগের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে আধুনিক পদ্ধতিতে।
রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগ স্থাপন করা হয়েছে। এখানে রয়েছে ৩ ও ১.৫ টেসলা এমআরআই মেশিন, ১৬ ও ১২৮ স্লাইস সিটি স্ক্যান মেশিন, টিসিডিসিসহ অত্যাধুনিক ডিজিটাল ১০০০ ও ৫০০ এমএ এক্সরে মেশিন। ইলেকট্রো ফিজিওলজি বিভাগে স্থাপন করা হয়েছে অত্যাধুনিক ইইজি এবং ইএমজি মেশিন।
হাসপাতাল সূত্রে আরো জানা গেছে, বাংলাদেশে স্নায়ুতন্ত্র রোগের চিকিৎসার সুযোগ এতদিন সীমিত থাকায় প্রচুর রোগী বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাড়ি দিতো। এখন এই হাসপাতালে পুরোদমে চালু হয়েছে স্নায়ু রোগ ও স্নায়ু শৈল্যরোগ সংক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এই হাসপাতালের দক্ষিণ পাশের এফ-২ খালি প্লটটি বরাদ্দ দিলে অচিরেই শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। আরও আধুনিক অপারেশন সুবিধা সম্বলিত ব্রেইনল্যাব, গ্যামানাইফ সার্জারি, নিউরোনেভিগেশন, ফাংশনাল সার্জারি, সম্বনিত স্ট্রোক ব্যবস্থাপনা, ন্যানো টেকনোলজি, স্টেম সেল থেরাপি, ট্রান্সক্রেনিয়াল ম্যাগনেটিক স্টিমুলেশন, অটিজম ও অন্যান্য রোগের পুর্নবাসন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:৩২:২৯ ৫৪৫ বার পঠিত