প্রথম পর্বঃ
এপ্রিল ২০০০। আমি তখন সবে ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষা দিয়েছি। কোন ভার্সিটিতে ভর্তি হব, কোন বিষয়ে পড়বো এসব নিয়ে মহাঝামেলায় দিন কাটাচ্ছিলাম। এমন ঝড়ো সময়ে একটু আনন্দের সংবাদে মন ভরে উঠলো। আমার বড়বোন আমাকে তার সাথে কুমিল্লায় এক বিয়ের দাওয়াতে যাওয়ার কথা বলছে। কোনরকম তেড়িবেড়ি না করে একবাক্যে রাজি হয়ে গেলাম।সাধারনত কেউ কোথাও যেতে বললে এতো সহজে রাজি হওয়ার পাএী আমি নই। তখন আমি ছিলাম আমাদের পরিবারের একমাত্র বেকার এবং অবিবাহিত ব্যক্তি A_©vr যার কিনা পড়াশোনা ছাড়া অন্য কোন কাজ ছিল না। তাই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রয়োজনে পরিবারের বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে আমার ডাক পড়তো। কোন কাজে আমার ডাক পড়লেই আমিও সুযোগটার সদব্যবহার করতাম।পরিবারে নিজের দাম বাড়ানোর খাতিরে বলতাম, এখন আমার সময় নাই, সামনে পরীক্ষা, এজাতীয় বিভিন্ন বেহুদা পেচাল। তারপর অনেকসময় ধরে তেল মালিশ করার পর তবেই রাজি হতাম।কিন্তু পরীক্ষার পর এতটাই হাঁপিয়ে উঠেছিলাম যে তেলমালিশ ছাড়াই রাজি হতে বাধ্য হয়েছি। যাহোক এবার মূল ঘটনায় আসি ।
পরেরদিন খুব ভোরে সাজগোজ করে আপার বাসায় রওনা দিলাম।খুব রূপবতি না হলেও দেখতে তেমন খারাপও নই আমি। সেদিন শাড়ি পরার পর আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই মুগ্ধ হই। সাড়েআটটার দিকে বাসে করে আমরা মেয়ের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। দুলাভাইয়ের এক বন্ধুর বিয়ের বরযাএা। জরূরি কাজে দুলাভাই ঢাকার বাইরে যাওয়ায় আমি দুলাভাইয়ের জায়গায় আপার সাথে যাচ্ছি। আমাদের এই বাসে বরের বন্ধুর সংখ্যাই ছিল বেশি। ওরা খুব হইহুল্লোড় আর আনন্দ করছিল। এমনিতে আমি খুব চুপচাপ না হলেও সেদিন ওদের হইহুল্লোড়ে কেন জানি চুপ মেরে গিয়েছিলাম। কারও সাথে পরিচয় নেই। এটাও একটা কারন হতে পারে। আমাদের সামনের সিটে বসা এক ছেলের দিকে হঠাৎ নজর যায়। বারবার ঘুরে আমাকে দেখছে। বেহায়া একটা! মনে মনে বললাম। আবার চোখ পড়তেই একটা ভেংচি কেটে দেই। আচ্ছা শাস্তি হয়েছে,মনে প্রশান্তি নিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকি।
বেলা প্রায় দেড়টার দিকে আমরা মেয়ের বাড়ি নামলাম। বর আগের বাসেই পেীছে গিয়েছিল তাই আর আমাদের দল নিয়ে এত হইহুল্লোড় হয়নি। কনে বাড়িটা অনেক বড়। বাড়ির সামনে বিশাল উঠোন। এখানেই খাওয়ার জন্য সামিয়ানা করে টেবিল বসানো হয়েছে। মনে হয় গ্রামশুদ্ধলোক দাওয়াত করেছে। এক ব্যাচ উঠছে তো সংঙ্গে সংঙ্গে আর এক ব্যাচ বসে যাচ্ছে। আমাদের চিন্তা নাই, কারণ বরপক্ষের লোকের জন্য একপাশে স্পেশাল করে জায়গা রাখা হযেছে। আমি আপাকে নিয়ে তাড়াতাড়ি একটা টেবিলে বসে পড়লাম। আপা খানিক রাগ দেখিয়ে বললো, খাওয়ার জন্য এতো অস্হির হয়েছিস কেন, খাবার কি উড়ে যাবে, আগে কনেটাকে দেখে নিতাম। ‘আমি হেসে বিজ্ঞের মতো উওর দেই,”আপা,সবসময় মনে রাখবে খাওয়ার আগে মাইরের পিছে”। খাওয়া দাওয়া শেষ করে আপা ভিতরে কনে দেখতে যায় আমাকেও বলেছিল কিন্তু কনের চাইতে বাড়িটা ঘুরে দেখাই আমার কাছে বেশি আনন্দদায়ক মনে হচ্ছে।আপা আমাকে পইপই করে বলে দিল ‘দূরে কোথাও যাস নে অচেনা জায়গা’।আমিও লক্ষ্ণী মেয়ের মতো বলেছি ‘আচ্ছা ঠিক আছে’।
—————
বাংলাদেশ সময়: ৫:১০:০৭ ৬২৭ বার পঠিত