বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ শুধু তা-ই নয়, এসংক্রান্ত প্রতিবেদন স্থায়ী কমিটিতে উপস্থাপন করা হলেও তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আলোচনাও হয়নি।অনিয়মের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের আড়াই হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা আত্মসাতের ঘটনা ফাঁস হলে গত বছর ব্যাপক তোলপাড় হয়।
হল-মার্ক গ্রুপকে দেয়া ওই ঋণ এবং সেই সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ঋণ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর সংসদীয় কমিটি একটি উপকমিটি করে।
তাজুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে গঠিত ওই উপ-কমিটির সদস্যরা হলেন এম এ মান্নান, গোলাম দস্তগীর গাজী ও এ কে এম মাঈদুল ইসলাম।
সংসদ সচিবালয় থেকে জানা গেছে, গত বছরের ১২ ডিসেম্বর সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেয়া হয়। এরপর গত এপ্রিল পর্যন্ত কমিটির তিনটি বৈঠক হলেও এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
উপ-কমিটির আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। তবে আলোচনার বিষয়ে কমিটির সভাপতি সিদ্ধান্ত নেবেন।”
কমিটির সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামালের মোবাইল নম্বরে সোমবার একাধিকবার কল করলেও তিনি ধরেননি। পরিচয় দিয়ে এসএমএস পাঠালেও তাতে সাড়া পাওয়া যায়নি।
তদন্ত প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা কাঠামো ভেঙে পড়েছে। এখানে পরিচালনা পর্ষদের নির্দেশনা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ মেনে চলে না। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) নির্দেশ তার অধস্তন কর্মকর্তারা মেনে চলে না।
সোনালী ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার দূর্বলতার কারণেই হল-মার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে বলে উপকমিটির মূল্যায়ন।
“ব্যাংকের তদন্ত ও নিরীক্ষা বিভাগ (আইএডি) রূপসী বাংলা শাখার বৈদেশিক কার্যক্রমের অনিয়ম গোপন করে শাখার ব্যবস্থাপক একেএম আজিজুর রহমানের ‘অনিয়মতান্ত্রিক ও অনৈতিক’ কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করেছে,” বলা হয় প্রতিবেদনে।
ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখার সাবেক ব্যস্থাপক একেএম আজিজুর রহমান সংসদীয় কমিটির কাছে তাদের দায় স্বীকার করেছেন। তাকে দুদকের মামলায় গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
উপকমিটি দেখতে পেয়েছে, সীমার চেয়ে ৪৭৮ শতাংশ বেশি ঋণ দেয়ার পরও আজিজুর রহমানকে কোনো প্রশ্ন করেনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া রূপসী বাংলা শাখার ঋণসীমা অতিক্রমের সঙ্গে সঙ্গে এর মুনাফা কীভাবে অভূতপূর্বভাবে বাড়ছিলো সে সম্পর্কেও কোনো প্রশ্ন করা হয়নি।
হল-মার্ক কেলেঙ্কারিতে নাম আসা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা পদমর্যাদার ব্যক্তির রূপসী বাংলা শাখায় একাধিকবার যাওয়া মানানসই নয়।
উপকমিটির সুপারিশ
নিয়ন্ত্রক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংককে পূর্ণ ক্ষমতা দিয়ে সংসদ ও সরকারে কাছে দায়বদ্ধ করার সুপারিশ করেছে তাজুল ইসলাম নেতৃত্বাধীন উপকমিটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোর সার্বিক কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে হওয়া উচিত। তাতে ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ, তদারকি, ব্যয় হ্রাস ও আয় বৃদ্ধি সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ফিট ও প্রপার টেস্ট’ অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।
এছাড়া যথাযথ অনুমোদন ছাড়া অবসরে যাওয়ার পর ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ঋণগ্রহীতার কার্যালয়ে যাওয়া বা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কাজে সংশ্লিষ্ট থাকার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকা উচিত বলে সুপারিশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৪৯:০৮ ৪৮৬ বার পঠিত