বঙ্গ-নিউজ:বাংলাদেশে আগামীকাল থেকে লাগাতার অবরোধের ডাক দিয়েছেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া।গুলশানে তার অবরুদ্ধ অফিস থেকে বেরুতে গিয়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়া খালেদা জিয়া সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের খালেদা জিয়া এই কর্মসূচীর কথা জানান।
মূল ফটকের মধ্যে আটকে থাকা অবস্থায় গাড়ীতে দাঁড়িয়ে প্রায় আধা ঘণ্টা বক্তব্য দেন তিনি।
টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত এ বক্তব্যে তিনি বলেন, “সমাবেশ হয়তো আজকে আমরা করতে পারিনি কিন্তু সারাদেশে জনগণ আজ কর্মসূচী পালন করেছে। আমাদের কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে। অবরোধ চলবে।”
মিসেস জিয়া বলেন “আমি গাড়ীতে বসে আছি। পুলিশ এখানে গেট বন্ধ করে রেখেছে। সব অবরুদ্ধ করে রেখেছে। আমি যদি বন্দী না হই তাহলে রাস্তাঘাট গেট সব বন্ধ করে রেখেছে কেন ? আমাকে কেন বের হতে দেয়া হচ্ছেনা। কেন আমাকে এখানে বন্দী করে রাখা হয়েছে? অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে দেশে যুদ্ধাবস্থা চলছে”।
তার প্রশ্ন, “আমি যদি অবরুদ্ধ না হই তাহলে আমার সাথে যারা দেখা করতে চান তাদের কেন আসতে দেয়া হচ্ছেনা ? আমি নিজে শুধু অবরুদ্ধ নই, গোটা দেশ অবরুদ্ধ”।
তিনি বলেন, “এখানে (তার কার্যালয়) জলকামান, বালুভর্তি ট্রাক-যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে নাকি। এ অবস্থার জন্য সরকারই দায়ী। এদের পায়ের নীচে মাটি নেই। পৃথিবীতে কোন একনায়কই এভাবে টিকতে পারেনি। তারা শুধু ক্ষমতা থেকেই সরেনি, আরও করুন পরিণতি হয়েছে, এগুলো যেন ভুলে না যায় সরকার”।
কার্যালয়ের বাইরের পুলিশের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “বেশি বাড়াবাড়ি করবেননা। এজেন্সির লোকজন বেশি বাড়াবাড়ি করছে। সব খুলে দিন, আমরা যাতে সমাবেশ করতে পারি”।
খালেদা জিয়া বলেন, “সরকার দেশকে কারাগারে পরিণত করেছে। এ অবস্থা চলতে পারেনা। দেশে অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত কর্মসূচী পালন করছে। আওয়ামী লীগের লোক অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে পুলিশের সহযোগিতায় আক্রমণ করেছে। কোন দেশে বাস করছি আমরা”?
তিনি বলেন, “তারা নিরাপত্তার কথা বলছে। এটা কোন ধরনের নিরাপত্তা? নিরাপত্তা হলে তো তারা আমার সাথে পল্টনে যেতো, নিরাপত্তা দিত”।
তিনি আরও বলেন, “শান্তি ফিরিয়ে আনতে, ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে একটা নির্বাচন করতে হবে। সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন হতে হবে। বর্তমান সরকার নির্বাচিত নয়। গুলি, টিয়ারশেল হামলা মামলা দিয়ে মানুষকে দমিয়ে রাখতে চাইছে।
খালেদা জিয়া বলেন, “তাদের দলের (আওয়ামী লীগের) লোকজন মিছিল করতে পারলে আমরা পারবোনা কেন ? তারা দেশটাকে পুলিশী রাষ্ট্র বানিয়েছে। তারা ভয় পেয়ে আমাদের সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। তারপরেও জনগণ বিচ্ছিন্নভাবে সারাদেশে কর্মসূচি চালিয়েছে। আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে”।
এই কর্মসূচী ঘোষণা করে খালেদা জিয়া আবার তাঁর অফিসে ঢুকে যান।
এর আগে বিকেল চারটার দিকে তিনি অফিস থেকে বেরিয়ে তার গাড়ীতে উঠেন। তার গাড়ীতে ছিল কালো পতাকা।
সঙ্গে থাকা বিএনপির নেতা-কর্মীরা এসময় শ্লোগান দিয়েছে।
গাড়ী নিয়ে বাড়ীর গেট দিয়ে বেরুতে গিয়ে পুলিশের বাধার মুখে তিনি আটকে পড়েন।
সেখানে পুলিশ দুবার তাঁর সমর্থকদের ওপর মরিচ মেশানো পানি স্প্রে করে।
চট্টগ্রামে ব্যাপক সংঘর্ষ
এদিকে চট্টগ্রামে বিএনপির এক সমাবেশ চলার সময় সেখানে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
চট্টগ্রামের কাজীর দেউরি এলাকায় বিএনপির এই সমাবেশ চলছিল।
পুলিশ সমাবেশটি ছত্রভঙ্গ করতে সেখানে হামলা চালায় বলে জানা গেছে।
দেশের আরও বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ এবং সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
ঢাকায় প্রেসক্লাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির একটি সভায় যোগ দিতে যান।
সেখান সরকার সমর্থকদের সঙ্গে বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষের অবস্থা তৈরি হয় বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
রাজশাহীতে পুলিশের গুলিতে একজন বিএনপি সমর্থক নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় সাংবাদিকরা খবর দিচ্ছেন।
তবে পুলিশের কাছ থেকে এখনো এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।
এর আগে নাটোরে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ কর্মীদের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:১৫:৫৫ ৩৩১ বার পঠিত