বঙ্গ-নিউজ ডটকম: আগামী ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তি। ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ হিসেবে দিনটি পালন করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি নিচ্ছে দলটি।
একই দিনকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ আখ্যায়িত করে নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। দিনটিকে ঘিরে মুখোমুখি হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।
দুই জোটের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর অনড় অবস্থানে ৫ জানুয়ারি কী ঘটতে যাচ্ছে! এ নিয়ে উৎকণ্ঠায় দেশবাসী। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন- যতোটা আশঙ্কা করা হচ্ছে, কার্যত তেমন কিছুই হবে না। বিএনপিকে সমাবেশ করতে না দিলে বড়জোর হরতালের মতো কর্মসূচি আসতে পারে।
সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে প্রতিরোধ করতে রাজধানীর মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৬টি গ্রুপ। সেদিন সকাল থেকে রাজধানীর ১৬ পয়েন্টে কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরীর ১৪ দলের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেবেন।
‘গণতন্দ্রের বিজয় দিবস’-এর সারাদেশের কর্মসূচির অংশ হিসেবে সেদিন রাজধানীতে শোভাযাত্রা এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করবেন। জনসভায় প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় সংসদ সদস্যরাও ১৬টি পয়েন্টে উপস্থিত থাকবেন। ১৪ দলের নেতা-কর্মীদের এসব গ্রুপে অন্তর্ভূক্ত করতে শুক্রবার আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে যৌথসভায় আলোচনা করবেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শাপলা চত্বর বা নয়াপল্টন এ তিন জায়গার যেকোনো একটি টার্গেট করে সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। তারা ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’-এর কর্মসূচি যে কোনো মূল্যে সফল করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। যদিও তারা এখনো সমাবেশের অনুমতি পাননি।
অনুমতি না পেলেও ৫ জানুয়ারি ঢাকায় জনসভা করবে বলে জানিয়েছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। জনসভা নিয়ে পুলিশ টালবাহানা করছে বলেও বৃহস্পতিবার রিজভী অভিযোগ করেন।
বিএনপি সমাবেশের অনুমতি পাবে কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়। শুক্রবার স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, নাশকতার আশঙ্কা থাকলে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি না-ও দেওয়া হতে পারে। এরআগে গাজীপুরে সমাবেশ ডেকেও ছাত্রলীগের বাধার মুখে সমাবেশ করতে পারেনি বিএনপি।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ২০ দলীয় জোট এক বছর কার্যত ঘরোয়া রাজনীতি করেছে। রাজনৈতিক নানান হিসাবনিকাশ থেকে এবার এই জোট মাঠ গরম করতে মরিয়া। অন্যদিক ক্ষমতাসীন দল চাইছে, ২০ দলের আন্দোলন যাতে কোনোভাবেই শক্তি সঞ্চার করতে না পারে। তবে এবারের আন্দোলনকে লড়াই হিসেবে দেখছে বিএনপি। এমন মনোভাব নিয়েই আন্দোলনের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে আন্দোলন শুরুর চিন্তা করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। অল্প সময়ের মধ্যেই আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই তারা এগোচ্ছেন।
অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, সরকারের কঠোর অবস্থানের মুখে বিএনপির সমাবেশ করার সাংগঠনিক শক্তি কতটুকু আছে, তা নিয়ে সংশয় আছে। দলগতভাবে বিএনপিকে প্রতিরোধের পাশাপাশি প্রশাসনকে কেও আওয়ামী লীগ ব্যবহার করতে পারে বলে তাদের ধারনা। তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের সাম্প্রতিক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের প্রশ্নে ‘নমনীয়’ বলে মনে হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য মনে করেন, ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচি দিয়ে যেভাবে বিএনপি পিছিয়ে গিয়েছিল, এ সংবাদ সম্মেলনও আবার বিএনপিকে পিছিয়ে দিয়েছে। ৫ জানুয়ারি সামনে রেখে আন্দোলনের যে গতি তৈরি হচ্ছিল, খালেদা জিয়ার ‘নরম সুরের বক্তব্য’ আন্দোলনের গতিকে শ্লথ করে দিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:০৯:৩০ ৩৩৬ বার পঠিত