সৌন্দর্য হারাচ্ছে সুন্দরবন

Home Page » ফিচার » সৌন্দর্য হারাচ্ছে সুন্দরবন
সোমবার, ১৩ মে ২০১৩



char-dweller.jpgবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ   লবণাক্ততার প্রভাবে সুন্দরী গাছের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় সৌন্দর্য হারাচ্ছে সুন্দরবন। ভারতের ফারাক্কা বাঁধের কারণে মিঠে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় এবং সমুদ্রের নোনা পানি উচ্চতা বৃদ্ধি এবং এর প্রবাহ অনেক ভেতরে ঢুকে পড়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। মিষ্টি পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় একদিন সুন্দরবন হারিয়ে যাবে। এমন অভিমত খুবি’র এক শিক্ষকের। সুন্দরী গাছে ব্যাপকভাবে টপ ডাইং রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। আগামরা রোগের কারণে প্রায় ৫০ শতাংশ সুন্দরী গাছ হ্রাস পেয়েছে। ৩০ বছরে ১৫শ’ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ৪৫.২ মিলিয়ন সুন্দরী গাছ আগামরা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আগামরা রোগের পেছনে উদ্ভিদবিদরা ৭টি কারণ খুঁজে পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেষ্টি এন্ড উড টেকনোলজি ডিসিপি¬নের সূত্র জানান, এমন একটি বিশেষ প্রাকৃতিক পরিবেশ যেখানে নোনা এবং মিষ্টি পানির প্রবাহের একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় সম্মিলন ঘটে সেখানে ম্যানগ্রোভ বন সৃষ্টি । নোনা ও মিঠে পানির এই মাত্রা বা হেরফের ঘটলে ম্যানগ্রোভ বনের ক্ষতি হয়। এর মধ্যে নোনা পানির আধিক্য সুন্দরী গাছের জন্য প্রাণঘাতী। দুর্ভাগ্যবসতঃ সুন্দরবনে তাই ঘটেছে। এই কারণে সুন্দরী গাছে আগামরা রোগ প্রায় বনজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। সুন্দরবন বিভাগের সূত্র মতে, বনে ৩৩৪ প্রজাতির বৃক্ষরাজি রয়েছে। বনের কেওড়া, গেওয়া, গরান প্রজাতির গাছের পাশাপাশি সবশেষে জন্মেছে সুন্দরী গাছ। সুন্দরী স্টারকুলেসী পরিবারভূক্ত একটি সার্বজনীন বৃক্ষ। সুন্দরবনে সর্বত্র সুন্দরী গাছ দেখা যায়। সুন্দরী গাছে ব্যাপকভাবে টপডাইং রোগ ছড়িয়ে পড়ায় বন সৌন্দর্য্য হারাচ্ছে। যেসব কমপার্টমেন্টে টপডাইং রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, ৬, ১৪, ১৯, ২০, ২১, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০ ও ৪৬। এই সূত্র মতে, বনে ৪৫.২ মিলিয়ন সুন্দরী গাছ টপডাইং রোগে আক্রান্ত হয়েছে। সূত্র আরো জানান, এ রোগের কারণগুলো হচ্ছে, মিষ্টি পানির প্রবাহ হ্রাস, বনের অভ্যন্তরে নদ-নদীতে পলির আধিক্য, পুষ্টি সরবরাহ হ্রাস, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, স্বাভাবিক জোয়ার-ভাটা বাঁধাগ্রস্থ এবং জলবদ্ধতা-ঘনঘন জ্বলোচ্ছাস সহ নানাবিধ প্রাকৃতিক কারণ। সুন্দরী গাছের এই ভয়ানক সমস্যা ছাড়াও পশুরের হাটরট, কেওড়ার ডাইব্যাক, সুন্দরীর ক্যাংকর বা গলরক রোগ, সুন্দরবনের অর্থকারীর বৃক্ষের অন্যতম সমস্যা। টপডাইং এক ধরনের ফাঙ্গাল ডিজিস বা গাছের আগা আক্রমন করে প্রথমে। পরবর্তীতে ছড়িয়ে পরে গাছের সর্বত্র। গাছ নির্জীব হয়ে পড়ে। পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত তার এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, ফারাক্কার বিরুপ প্রভাব এবং মিঠে পানির অভাবে সুন্দরবনের সুন্দরী গাছ মারা যাচ্ছে। এক পরিসংখ্যান থেকে তিনি উল্লেখ করেন, বনে ৮৫ কোটি ৬৭ লাখ সুন্দরী গাছ রয়েছে। সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় ৩৮ শতাংশ সুন্দরী গাছ আগামরা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। বন বিশেষজ্ঞ ড. মাসুদুর রহমান জানান, বনের মধ্যম লবণাক্তাতা এলাকাতে সুন্দরী গাছে আগামরা রোগ বেশি দেখা দিয়েছে। প্রতিকূল ইকোলজিক্যাল অবস্থার কারণে সুন্দরী গাছে আগামরা রোগ ধরেছে বলে তিনি ধারণা করেন। সুন্দরী গাছ লবণাক্ততা সহিঞ্চু ক্ষমতা কম। আগামরা রোগ প্রতিরোধক সুন্দরী গাছ বাছাই করে বীজ সংগ্রহের মাধ্যমে নতুন সুন্দরী বাগান তৈরি করার সুপারিশ করেছেন এই বিশেষজ্ঞ। টিসু ক্যালচার করে চারা তৈরি করে বনের রোপণের পরামর্শ রয়েছে তার। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সিটিটিউট অব ফরেস্টার বিভাগের প্রফেসর ড. এম এ রহমান তার গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেন, ১৯১৫ সালে টপডাইং রোগের সূচনা হয়। বনের সৌন্দর্য্য সুন্দরী গাছে ব্যাপক টপডাইং রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ১৯৮৫ সালে বনে ১৫টি কমপার্টমেন্টে টপডাইং দেখা দিলেও ২৭ কমপার্টমেন্টে ছড়িয়ে পড়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেষ্টি এন্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক মোঃ কামরুজ্জামান জানান, পাহাড়ের পাদদেশ থেকে আসা বিশুদ্ধ পানি নানা কারণে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। মিষ্টি পানির প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে পুষ্টির অভাব দেখা দিচ্ছে। সাধু পানি স্বল্পতার কারণে লবণাক্ততা বৃদ্ধি ফলে পরিবেশগত বৃদ্ধির কারণে টপডাইং বিস্তার লাভ করেছে। মিষ্টি পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় একদিন সুন্দরবন হারিয়ে যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। টপডাইং আক্রান্ত গাছ নিলামে বিক্রির করার জন্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সুপারিশ করা হয়েছে। সুন্দরবন (পশ্চিম) বন বিভাগীয় কর্মকর্তা জহির উদ্দিন আহম্মেদ জানান, সুন্দরী গাছ নিলামে দেয়ার জন্য কোন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের নেই। সুন্দরী গাছে আগামরা রোগের বিস্তৃতি অনেকখানি কমে এসেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এর প্রতিরোধ করারও কিছু নেই। খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মোহাম্মদ জহুরুল হক জানান, শিবসা ও পশুর নদীর তীরে সুন্দরী গাছে আগামরা রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। তিনি জানান, খালের পাড়ের সুন্দরী গাছে আগামরা রোগ নেই। ১৮,১৯, ৪৩ ও ৪৪ কমপার্টমেন্টে সুন্দরী গাছে আগামরা রোগ নেই বলে তিনি দাবি করেন। সুন্দরবনে দীর্ঘদিন যাবৎ পশুর ও সুন্দরী কাঠ কাটা ও ব্যবহার নিষিদ্ধ রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০:০৩:৪৩   ৫৫২ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ফিচার’র আরও খবর


অ্যানেন্সেফ্লাই কী? - রুমা আক্তার
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়নের অগ্রদূত : স্পিকার ; ১০০০ নারী উদ্যোক্তা’র মধ্যে ৫ কোটি টাকার অনুদান প্রদান
“ম্রো’ আদিবাসীর গো হত্যা’ অনুষ্ঠাণ ” - তানিয়া শারমিন
আলোকিত স্বপ্ন নিয়ে তৃতীয় বর্ষে রবিকর ফাউন্ডেশন
নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন রক্ষায় প্রয়োজন জেন্ডার সংবেদনশীল নীতির পর্যালোচনা
জিনগত ত্রুটির অপর নাম “ডাউন সিনড্রোম”- রুমা আক্তার
মোহাম্মদ শাহ আলমের জীবন ও কর্ম
ইসফাহান নেসফে জাহান
সিলেটে গ্রুপ ফেডারেশনের কর্মশালায় বির্তকিত মুরাদ- আয়োজকদের দুঃখ প্রকাশ
ডলারের দাম যেভাবে বাড়ছে, টাকার দাম কেন কমছে

আর্কাইভ