ডেস্ক রিপোর্ট : নারীশিক্ষা আন্দোলনকর্মী পাকিস্তানের কন্যা মালালা ইউসুফজাই ও ভারতের শিশু অধিকারকর্মী কৈলাস সত্যার্থী যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। নরওয়ের রাজধানী অসলোতে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বুধবার তাদের হাতে নোবেল পুরস্কার তুলে দেয় নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি।বিবিসি অনলাইনের এক খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে নোবেল কমিটি বলে, মালালা ও কৈলাশ উভয়েই ‘শান্তির চ্যাম্পিয়ন’।
পুরস্কার গ্রহণের আগে ১৭ বছর বয়সি মালালা বিবিসিকে জানায়, দেশ সেবার উত্তম উপায় যদি রাজনীতিই হয়, তাহলে ভবিষ্যতে তিনি রাজনীতি করতে চান। প্রয়োজনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতেও তার আপত্তি নেই।
এদিকে পুরস্কার গ্রহণের পরে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কৈলাস সত্যার্থী (৬০) বলেন, এই পুরস্কার (নোবেল) ভবিষ্যতে শিশু-দাসত্বের বিরুদ্ধে কাজ করার সুযোগ আরো বাড়াবে।
পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান থর্বজর্ন জাগল্যান্ড ও নরওয়ের রাজা পঞ্চম হ্যারল্ডের উপস্থিতিতে নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করেন মালালা ও কৈলাস।
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিজয়ী দুজনই ‘নোবেল বক্তৃতা’ দেন। পুরস্কার গ্রহণের দিন বিজয়ীরা যে বক্তব্য দেন, তা নোবেল বক্তৃতা হিসেবে পরিচিত।
মালালার শিক্ষা আন্দোলনের গুরুত্ব সম্পর্কে নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান জাগল্যান্ড বলেন, গণতন্ত্র ও মুক্তির পথ প্রশস্ত করে জ্ঞান।
এ ছাড়া জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করে যাওয়ায় কৈলাস সত্যার্থীর প্রশংসা করেন জাগল্যান্ড। কৈলাস সত্যার্থীর প্রচেষ্টায় হাজার হাজার শিশু-শ্রমিক আলোর পথে হাঁটতে শিখেছে। এ কাজ করতে গিয়ে তাকে বারবার মৃত্যুর হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। তার দুজন সহকর্মী নিহতও হয়েছেন। তবু তার উদ্যোগ থেমে থাকেনি।
পাকিস্তানে তালেবানের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অল্প বয়সে মালালা মেয়েদের শিক্ষার জন্য যে উদ্যোগ নেয়, সে সম্পর্কে জাগল্যান্ড বলেন, ‘শিক্ষার জন্য তার সাহস, এক কথায় বর্ণনাতীত।’
নারীশিক্ষার অধিকারের পক্ষে কথা বলা ও তালেবানের হুমকি উপেক্ষা করায় পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকায় ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে তার মাথায় গুলি করে তালেবান সদস্যরা। সেই থেকে বিশ্বে আলোচিত হয়ে ওঠে মালালা। বর্তমানে সপরিবারে সে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছে এবং সেখানে তার পড়াশোনা চলছে।
১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। সেই হিসেবে এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে প্রচলিত থাকা এই পুরস্কার-গ্রহীতাদের মধ্যে মালালাই সবচেয়ে কম বয়সি এবং ১৮ বছরের নিচে, অর্থাৎ শিশু অবস্থায় এই পুরস্কার পাওয়া একমাত্র ব্যক্তি।
স্কুলপড়ুয়া একদল মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে মালালা নরওয়ের অসলোতে পুরস্কার গ্রহণ করতে যায়। এর মধ্যে তার সেই দুই সহপাঠী বান্ধবী রয়েছে, যারা মালালাকে গুলি করার সময় তার পাশে ছিল।
‘শিশু ও তরুণদের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং শিশু-শিক্ষার অধিকারের পক্ষে আন্দোলন করায়’ নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি ২০১৪ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য যৌথভাবে মালালা ও কৈলাসের নাম ঘোষণা করে।
স্বর্ণপদক ও সনদের পাশাপাশি নোবেল শান্তি পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় ১৪ লাখ মার্কিন ডলার। এবার যেহেতু দুজন এ পুরস্কারের ভূষিত হয়েছেন, ফলে ১৪ লাখ মার্কিন ডলার দুজনের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।
নোবেল পুরস্কার ঘোষণার পর নোবেল কমিটি এক বিবৃতিতে বলেছিল, একজন পাকিস্তানি মুসলিম ও একজন ভারতীয় হিন্দু প্রায় একই ধরনের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিজ নিজ দেশে কাজ করার জন্য যে স্বীকৃতি পেল, তা চিরবৈরী দেশ দুটির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একই সময় মালালা এক বক্তব্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের নওয়াজ শরিফকে যুদ্ধের পথ পরিহার করে শান্তির জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়েছিল।
শান্তিতে নোবেলজয়ীদের কিছু তথ্য
১. ১৯০১ থেকে এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে
২. মালালাসহ ১৬ নারী এই পুরস্কার পেয়েছেন
৩. ১৭ বছরে নোবেল পাওয়া মালালাই বিজয়ীদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট
৪. পুরস্কার পাওয়ার সময়ের হিসাবে বিজয়ীদের গড় বয়স ৬২ বছর
৫. কারারুদ্ধ অবস্থায় তিনজন এ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তারা হলেন :
কার্ল ভন ওসিৎস্কি (জার্মানি), অং সান সু চি (মিয়ানমার) এবং লিউ জিয়াওবো (চীন)
বাংলাদেশ সময়: ৭:০৬:৫২ ৩৯৮ বার পঠিত