বরফে ঢেকে আছে চারপাশ তাই বলে কী কাজকাম বন্ধ, মোটেই তা নয় বরং একটু বেশীই ব্যস্ত মানুষ, সামনে ক্রিসমাস আয়োজন উৎসব। প্রতিদিনকার মতন ছুটে চলা। মন্ট্রিয়ল শহরে নামকরা ইউনির্ভসিটি প্রযুক্তি বিজ্ঞান, গবেষনার এক উন্নত শিক্ষালয়। মেধাবী শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখর অঙ্গন। ছেলে মেয়ের ভেদাভেদ নাই মেধায়। ইকলে পলিটেকনি মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাসে ষাটজন ছাত্র ছাত্রী তার মধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থি অনেক।সময়টা ১৯৮৯ ছয়ই ডিসেম্বর, বিকাল চারটা। দোতালার একটি ক্লাসরুমে ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাসের শিক্ষার্থিরা তাদের নতুন প্রযুক্তির উপস্থাপনা নিয়ে ব্যস্ত। হাসি ঠাট্টা আমোদে, ছেলে মেয়েরা সম্মিলিত গ্রুপে প্রত্যেকে নিজের কাজটি নিয়ে উৎসাহিত। এই সময় বন্ধ দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে পরে এক পঁচিস বৎসরের যুবক, তার হাতে একটি বন্দুক। সে হুকুম করে, কথা বলা বন্ধ করে ছেলে মেয়ে দুই ভাগে বিভক্ত হতে। এক নিমিশে মৃত্যুহীম নিরবতা নেমে আসে সবার মাঝে, আনন্দময় ক্লাস রুমে। ভয়ে ভয়ে দুই ভাগে সরে যায় ছেলে মেয়ে ওদের কাজ ফেলে। ছেলেদের ক্লাসরুম ছেড়ে চলে যেতে বলে যুবক। নয়জন মেয়েকে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে প্রশ্ন করে, তোমরা কী জানো কেন তোমরা এখানে?
একজন ভয়ে ভয়ে উত্তর দেয়, না
তখন সে বলে, আমি নারীবাদির বিরুদ্ধে। নাতালি প্রোভস্ট সাহস করে বলে দেখো, আমরা ইনজ্ঞিনিয়ারিং পড়ছি নারীবাদি নই। তোমরা একঝাঁক মেয়ে ইনঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হবে তোমরা সবকিছুর অধিকারী হবে আমি তা প্রতিরোধ করব। আমি ঘৃনাকরি নারীবাদিদের, তোমাদের বাড়তে দেয়া হবেনা। এরপরই সে তার বন্দুক থেকে ডানে বামে, এলোপাথারী গুলি ছুঁড়তে থাকে। সবাই মাটিতে পড়ে যায়।উজ্জ্বল মেধাকে স্তব্ধ করে দেয়া হয় একনিমিশে। ছয়জন মেয়ে সাথে সাথে মৃত্যুবরণ করে। রক্তে ভেসে যাওয়া মেয়েদের উপর আরো গুলি ছুঁড়ে নিশ্চিত মৃত জেনে ঐ রুম থেকে বের হয়ে প্রথম তলায় নেমে আসে ঘাতক। অন্যরুমে ঢুকে গুলি করে কিন্তু তার বন্দুকটি কাজ করে না। তখন সে সিঁড়ির নিচে লুকানো বন্দুক নিয়ে ফিরে আসে আবার কিন্তু মেয়েরা ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে রাখে তাই সে ঢুকতে পারে না। করিডোরে তিনজনকে হত্যাকরে নেমে আসে ক্যাফেটারিয়ায় যেখানে আনন্দমত্ত শতাধিক ছেলে মেয়ে। ঢুকেই সে একটি মেয়েকে গুলি করে। এভাবে সারা পলিটেকনিক কলেজ জুড়ে বিশ মিনিট সময় জুড়ে তান্ডব বিস্তার করে, ঘুরে বেড়ায় আর হত্যাকান্ড চালায়। পুলিশ আসার আগ পর্যন্ত শেষে আত্মহত্যা করে।
তখন নিরাপত্তা ব্যবস্থা এত কঠিন ছিল না। পরে জোড়দার করা হয়, পুলিশ র্যপিড় এ্যকসন, গ্যান কোন্ট্রল, ভ্যায়লেন্স এগেনস্ট ওমেন
এমন একটি কাজ কেউ করতে পারে কখনো ভাবা হয়নি এব্যাপারে। কিন্তু সবার অলক্ষে ক্ষোভ জমে উঠা মনে নৃসংশ হত্যা পরিকল্পনায় মনোনিবেশ করেছিল ল্যাপেইন” নামের ছেলেটি। দিনেদিনে পরিকল্পনা অনুযায়ী যোগার করেছিল হাতিয়ার। মেধাবী মেয়েদের নামের একটা লিস্ট করে। আত্মহত্যা করার একটা নোটও রাখে জ্যাকেটের পকেটে।
ছোটবেলা যার কেটেছে বাবার অত্যাচারে। বাবার অমানবিক ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে, মা ডির্ভোস নেয় ওর সাত বছর বয়সে। সন্তানের ভরণপোষনের প্রয়োজনে মা কাজ করে নার্সের। কিন্তু চাকুরীর জন্য সার্বক্ষনিক ছেলে মেয়ে দেখাশোনা সম্ভব হয়না মায়ের পক্ষে তাই সন্তানকে থাকতে হতো এবাড়ি ওবাড়ি ঘুরে ঘুরে।
বাচ্চার সুস্থ মানসিক বিকাশের জন্য বাবা, মা উভয়ের যত্ন, মননশীলতা, মানবিক সার্পোট অসম্ভব প্রয়োজন। তা না পাওয়া ল্যাপেইন, ইনজিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হয়েও নিজের মাঝে গুটিয়ে থাকত সারাসময়। কারো সাথে মিশতে পারত না সহজে। অবদমিত আকাঙ্ক্ষা, না পাওয়া ভালোবাসায় ভিতরে ভিতরে গুমড়ে উঠা মন নিয়ে ভয়ংকর চিন্তা ভাবনায় মেতে উঠত। ভয়ংকর আত্ম হনন আর মেধাবী মেয়েদের জীবননাশ যার পরিণতি হয়।
যারা ঐ অবস্থার সম্মুখিন হয়ে বেঁচেছিল। শারীরিক আর মানসিক ভাবে বিষাদ আর আতংক আক্রান্ত হয়েছিল ভয়ানকভাবে। অস্বাভাবিক একটি মানুষ নিজে চলে যাবার পরও। সত্যিকার ভাবে পঙ্গু করে দিয়ে ছিল অনেকের জীবন নাতালি প্রোভস্ট, নামের সাহসী মেয়েটি ছয় বছর পর্যন্ত কথা বলতে পারেনি।
প্রতিটি পরিবারের বাবা মাকে, যত্নে আদরে, ভালোবাসায় শিশুদের সুস্থ মানসিক বিকাশে মানবিক করে গড়ে তোলার আহ্বান জানাই।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:২৭:৪৩ ৪২১ বার পঠিত