ডেস্ক:
আজ ৬ ডিসেম্বর, গণতন্ত্র মুক্তি দিবস। স্বৈরাচার পতনের ২৪ বছর পূর্তি আজ। ১৯৯০ সালের এই দিনে ছাত্র-জনতার উত্তাল গণঅভ্যুত্থানের মুখে পতন হয় সামরিক স্বৈরশাসক এইচএম এরশাদের। আর এ পতনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের লেবাসে দীর্ঘ সামরিক শাসনের অবসান হয়, মুক্তি পায় কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্র।
১৯৮২ সালের এই দিনে জেনারেল জিয়াউর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে এইচএম এরশাদ অবৈধ পথে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে সামরিক শাসন কায়েম করেন। গুটিকয়েক রাজনৈতিক নেতা নিজেদের দল ছেড়ে ক্ষমতার ভাগ নিতে এরশাদের সঙ্গে যোগ দেন। ১৯৮৩ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে ছাত্রসমাজ শুরু করে এরশাদবিরোধী আন্দোলন। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন হয়েছে রাজপথে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ৮ দলীয়, বিএনপির নেতৃত্বে ৭ দলীয় এবং সিপিবি, জাসদ (ইনু), ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃত্বে ৫ দলীয় জোট সম্মিলিতভাবে ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। আন্দোলন করতে গিয়ে রাজপথে প্রাণ দিতে হয় নূর হোসেন, সেলিম, দেলোয়ার, ডা. মিলনসহ নাম নাজানা অনেক অকুতোভয় মানুষকে। উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকার রাজপথ। তীব্র হয় গণআন্দোলন, রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে। সামরিক শিকলে বন্দী গণতন্ত্র মুক্তির আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি হয় ১৯৯০ সালের ১৯ নভেম্বর। ওইদিনই তিনটি জোট ঐক্যবদ্ধভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করে। পতন হয় স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের।
দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছয় ডিসেম্বর গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ইতিহাসে এক তাত্পর্যপূর্ণ দিন। ১৯৯০ সালের এই দিনে স্বৈরাচারের পতন হয়। এ মহান দিবসে গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী সংগ্রামী দেশবাসীকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। তিনি বলেন, নব্বই পরবর্তী দুই দশকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার রক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অবৈধ ক্ষমতা দখলের পথ রুদ্ধ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ষড়যন্ত্রকারী ঘাতকরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে। পরবর্তীকালে অসাংবিধানিক ও অবৈধ সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। তারা জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে। মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে বিকৃত করে। দেশে নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বৈরাচারী শাসন উত্খাত করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, জনগণের ভোট ও মৌলিক অধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা দীর্ঘ সংগ্রাম করি। স্বৈরাচারী শাসক গণআন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় গণতন্ত্র। এ অর্জন ধরে রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর।
গণতন্ত্র এখনো শঙ্কামুক্ত নয়
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্র এখনো শঙ্কামুক্ত নয়। নিষ্ঠুর কর্তৃত্ববাদী একদলীয় শাসনের চরিত্রগুলো ক্রমশ ফুটে উঠছে বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর আচরণে।
‘স্বৈরাচার পতন দিবস’ উপলক্ষে শুক্রবার এক বিবৃতিতে খালেদা জিয়া একথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন গত ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের সমালোচনা করে বলেন, আবারও জাতিকে একদলীয় নিষ্ঠুর শাসনের শৃঙ্খলে বন্দী করে নাগরিক স্বাধীনতাকে করা হয়েছে বিপন্ন। তিনি গণতন্ত্রকে স্থায়ী রূপ দিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
বেগম খালেদা জিয়া বলেন, একদলীয় বাকশালী চেতনার দল ও আশির দশকের গণতন্ত্র হত্যাকারী স্বৈরাচার একত্রিত হয়ে দেশের সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্রমান্বয়ে ধংসস্তূপে পরিণত করছে। সকল দলের মিলিত ইচ্ছায় নিরপেক্ষ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এরা সংবিধান থেকে মুছে দিয়েছে। তিনি বলেন, এই অগণতান্ত্রিক অপশক্তি সংবিধান বর্ণিত জনগণের মৌলিক অধিকার ক্রমাগতভাবে হরণ করে যাচ্ছে। এই অপশক্তিকে প্রতিহত করে গণতন্ত্রকে স্থায়ী রূপ দিতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। খালেদা জিয়া বলেন, ৬ ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৯০ সালের এ দিনে দীর্ঘ ৯ বছরের অগ্নিঝরা আন্দোলনের পর পতন ঘটেছিলো সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদের।
বাংলাদেশ সময়: ১২:০৮:০২ ৩৫৭ বার পঠিত