ডেস্ক:
আজ বিশ্ব এইডস দিবস। বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার ব্যক্তি এইচআইভি সংক্রমিত। তবে সংক্রমিত সকলকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। শনাক্ত হওয়া তিন হাজারের বেশি মানুষ চিকিত্সা সেবার আওতায় রয়েছে। অর্থাৎ এইচআইভি সংক্রমিত অনুমিত ব্যক্তিদের ৭০ শতাংশ ওষুধ ও চিকিৎসা সেবার বাইরে আছেন।
বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের এইচআইভি/এইডস বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইউএনএইডস প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং বাংলাদেশে এইডস রোগীদের সেবায় কর্মরত সংগঠনগুলোর মোর্চা নেটওয়ার্ক অব পিএলএইচআইভি, বাংলাদেশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
‘ফাস্ট-ট্রাক টার্গেটস : এন্ডিং দ্য এইডস এপিডেমিক বাই ২০৩০’ প্রতিবেদনে ইউএনএইডস বাংলাদেশসহ পৃথিবীর এইচআইভি/এইডস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ২০৩০ সালকে নতুন লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে নির্ধারণ করেছে। একইসাথে এইচআইভি সংক্রমিত কিংবা এইডস রোগীদের চিকিত্সার সুযোগ বৃদ্ধি, নতুন সংক্রমণ প্রতিরোধ ও বৈষম্য কমাতে ২০২০ ও ২০৩০ সালের জন্য পৃথক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির দেয়া তথ্য মতে, ২০০৫ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে এইচআইভি সংক্রমণ ৬ শতাংশ কমেছে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি ঘটেনি। ২০০১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে এইচআইভি সংক্রমণ ২৫ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। গত ৫ বছরে দেশে শনাক্ত হওয়া এইচআইভি সংক্রমণ দেড় শতাংশ বেড়েছে। শনাক্ত হওয়া সংক্রমিত রোগীদের সংখ্যা দেশের মোট জনগোষ্ঠীর দশমিক শূন্য এক শতাংশেরও কম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এইচআইভি সংক্রমিত দুই-তৃতীয়াংশ ব্যক্তিই তাদের সংক্রমণ সম্পর্কে জানে না। তারা না জানলে পরিস্থিতি বদলাবে না। এ জন্য হাসপাতালগুলোসহ কমিউনিটিভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
পৃথিবীতে এইচআইভি নিয়ে বসবাস করছে তিন কোটি ৫০ লাখ মানুষ। এদের মধ্যে ওষুধ পায় মাত্র এক কোটি ৩৬ লাখ মানুষ। অর্থাৎ ৩৪ শতাংশ রোগী ওষুধ পায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই রোগ নির্ণয়, ওষুধ প্রাপ্তি এবং চিকিত্সার ক্ষেত্রে এইডস রোগীরা বৈষম্যের শিকার হয়। এইডস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে এ বৈষম্য দূর করে এইচআইভি সংক্রমিতদের চিকিৎসা ও সেবায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে প্রথম এইডস রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। বাংলাদেশে তিন হাজার ২৪১ জন রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। সংক্রমণের শিকার তিন হাজারের বেশি মানুষ চিকিৎসা সেবার আওতায় এসেছে। সরকারি হিসেব মতে, গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত দেশে শনাক্তকৃত এইডস রোগে আক্রান্ত ৪৩৫ জন মারা গেছেন। আজ সোমবার সর্বশেষ মৃতের সংখ্যা প্রকাশ করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বর্তমানে তিনটি সংগঠনের মাধ্যমে দেশে এইচআইভি আক্রান্ত রোগীরা ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেন। এগুলো হলো- আশার আলো সোসাইটি, মুক্ত আকাশ বাংলাদেশ এবং ক্যাপ।
এইডস দিবস পালনের উদ্যোগ
প্রতি বছরের মত এবারও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশে দিবসটি পালন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্ব এইডস দিবস ২০১৪-এর প্রতিপাদ্য হলো ‘দৃষ্টিপাত, অংশীদারিত্ব, অর্জন : একটি এইডসমুক্ত প্রজন্ম’। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী আলাদা বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাঁর বাণীতে এইডস বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর আহবান জানিয়েছেন। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, ২০১৫ সালের মধ্যে এমডিজি-৬ অর্জনের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মাঝে এইচআইভি/এইডস সনাক্তকরণ, চিকিৎসা, পরিচর্যা ও সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। পৃথক বাণীতে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন ২০৩০ সালের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণ দূর করার আহ্বান জানান।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে আজ সোমবার সেমিনারের আয়োজন করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস এন্ড গাইনী বিভাগ বর্ণাঢ্য পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনও দিবসটি পালন উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০:০০:২৯ ৩৬০ বার পঠিত