বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ বিনিয়োগে একই জায়গায় আটকে রয়েছে দেশ। রাজস্ব আদায়ও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী হচ্ছে না। রয়েছে অর্থনৈতিক সুশাসনের অভাব। এর মধ্যে দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক সংঘাতময় পরিস্থিতি। এ রকম একটা পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরের বাজেট করতে হচ্ছে, যার পুরোটা বর্তমান সরকার বাস্তবায়ন করবে না।এমতাবস্থায় দরকার সমঝোতার রাজনীতি। তা না হলে এর নেতিবাচক অভিঘাত ও দায়ভার অনেক দিন পর্যন্ত সাধারণ মানুষকে বয়ে বেড়াতে হবে। সুতরাং আগামী বাজেটকে যথেষ্ট বাস্তবসম্মত হতে হবে। দেশের রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, শিল্পপতি-ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকেরা এমন অভিমত ও পরামর্শই দিয়েছেন।
রাজধানীর একটি হোটেলে গত শনিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) এবং মাছরাঙা টেলিভিশনের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘বাজেট ২০১৩-১৪: আমাদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এমসিসিআইয়ের সহসভাপতি নিহাদ কবীর।
বাজেট প্রসঙ্গ: আলোচনায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘গত চার বছরে কী করেছি, আর কী পারিনি-সব হিসাব দেব।’ আগামীতে অগ্রাধিকার খাত আগের মতোই থাকবে উল্লেখ করে তিনি নতুন কর বাড়ানো হবে না বলে জানান। তিনি আরও জানান, সব মন্ত্রণালয়ের জন্য জেন্ডার বাজেট করা হবে। আর বাজেটের আকার বাড়বে ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ।
এমসিসিআইয়ের সভাপতি রোকেয়া আফজাল রহমান বলেন, সাধারণত নির্বাচনী বছরের বাজেটে নতুন কর বসানো হয় না, এবারও যেন তা না হয়।
সংগঠনটির সাবেক সভাপতি আনিসউদ্দৌলা বলেন, নতুন শিল্প শুরুর দিকে লোকসানও করতে পারে। অথচ তার কাছ থেকে অগ্রিম কর কেটে নেওয়া হয়। এটা বাদ দেওয়া উচিত।
ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস পত্রিকার সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আগামী বাজেটের আকার বাস্তবধর্মী করা উচিত।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘রাজস্ব আদায় ও ব্যয়ের মাঝখানে অপচয় হয়েছে কত, তা হিসাব-কিতাবের সময় চলে এসেছে’।
রাজনৈতিক প্রসঙ্গ: বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকে টাকা আছে, বিনিয়োগের সুযোগ নেই। পদ্মা সেতু, হল-মার্ক, বিসমিল্লাহ, ডেসটিনি, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি অর্থনীতিতে শুধু রক্তক্ষরণ দেখা গেছে। প্রতিটির ক্ষেত্রে সরকারি লোকেরা জড়িত। তিনি আরও বলেন, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত লাখ কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। দরকার গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নিশ্চয়তা।
গ্যাস-বিদ্যুৎ: জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, ছোট ছোট বিদ্যুৎকেন্দ্র করে শুধু ঠেকার কাজ চালিয়ে গেছে সরকার, দীর্ঘমেয়াদি কিছু নেই। শিল্পকারখানায় বেশি জরুরি হলেও রাজনৈতিক কারণে সম্প্রতি বাসাবাড়িতে গ্যাসের সংযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তেলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবর্তে কয়লানির্ভর বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব হোসেন বলেন, সার কারখানায় গ্যাস না দিয়ে উচ্চমূল্যে সার আমদানি হচ্ছে। এ জন্যই ভর্তুকি বাড়ছে।
পদ্মা সেতু: সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতুর অর্থায়নের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত যেন বঞ্চিত না হয়।
রোকেয়া আফজাল রহমান বলেন, পদ্মা সেতুর জন্য অর্থায়নের কারণে কৃষিসহ অগ্রাধিকার খাতগুলোকে ভুলে গেলে চলবে না।
প্রথম আলোর বার্তা সম্পাদক শওকত হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু এখন রাজনৈতিক সেতুতে পরিণত হয়েছে। মালয়েশিয়া বাদ দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নের চিন্তাটি তুলনামূলক ভালো। তবে এই সেতু নির্মাণ করা উচিত কি না, সেই প্রশ্নও তোলা যায়। তা ছাড়া দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের বিষয়টিও অমীমাংসিত রয়ে গেছে। যে বদনাম হলো, এখন তো বিদেশ থেকে অর্থ আনতে গেলেই প্রসঙ্গটি উঠবে।
বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি ফজলুল হক বলেন, শ্রমিক স্বার্থের ব্যাপারে প্রথম দায়টা মালিককে নিতে হবে। সরকার পরে এতে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২:২৭:৫১ ৪৫৩ বার পঠিত