বঙ্গ-নিউজঃমামলা দিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলন স্তব্ধ করা যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিএনপি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক আলোচনা সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, এ দেশের ১৬ কোটি মানুষের রাজনীতি ধারণ করে বলেই আওয়ামী লীগ তারেক রহমানকে এতো বেশি ভয় পায়। তারা তার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়েছে। সমন জারি করছে। আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, মামলা দিয়ে কিংবা নেতা-কর্মীদের কারাগারের পাঠিয়ে চলমান আন্দোলনকে স্তব্ধ করা যাবে না। সরকার হটানোর আন্দোলনের জন্য সকলকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়ার আহবান জানান ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম আওয়ামী লীগের ইমাম। কারণ ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে ইমাম সাহেব আওয়ামী লীগের সকল জারি জুরি ফাঁস করে দিয়েছেন। কিন্তু পরে তিনি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নিজের বক্তব্যের বিষয়ে বললেও দেশের মানুষ তা বিশ্বাস করেনি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসকাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ ছাত্র ফোরাম ও উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরাম আয়োজিত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫০তম জন্মদিন উপলে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন- ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শওকত মাহমুদ, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, বিএনপি নেতাদের মধ্যে- ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, রুহুল কবির রিজভী, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, চাষী নজরুল ইসলাম, আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জল, হাবিবুর রহমান হাবিব, হাবিব উন নবী খান সোহেল, ফরহাদ হোসেন আযাদ, সাবেক ফুটবলার আমিনুল ইসলাম, ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসান, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, নাজমুল হাসান প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আ হ ম ওবায়দুর রহমান চন্দন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, দেশে আজ গণতন্ত্র নেই। কথা বলার স্বাধীনতা নেই। সত্য উচ্চারণ করলেই তার বিরুদ্ধে সরকার মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে, কারাগারে আটকিয়ে রাখে।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমামের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের সব ফাঁস করে দিয়েছেন। কীভাবে দলীয় বংশবদ নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে ভোট কেন্দ্রে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে সরকার ভোটার বিহীন নির্বাচন করেছে, তিনিই (এইচটি ইমাম) তা প্রকাশ করে দিয়েছেন।
মন্ত্রীত্ব ও দল থেকে বহিষ্কৃত আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, এইচ টি ইমামের মতো আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীও সরকারের দুইটি জিনিস ফাঁস করে দিয়েছেন। একটি হচ্ছে- আওয়ামী লীগ যে ধর্মে বিশ্বাস করে না, তা লতিফ সিদ্দিকীর কথায় প্রকাশ পেয়েছে। আরেকটি হচ্ছে- প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় প্রতিমাসে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা বেতন নিয়েছেন-এই তথ্য মন্ত্রী ফাঁস করে দিয়েছেন। লতিফ সিদ্দিকীর চাকুরিও চলে গেছে। আমরা জয়ের বেতন সংক্রান্ত লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের বার বার ব্যাখ্যা চাইলেও সরকার এখনো কিছুই বলছে না।
তিনি বলেন, দেশ আজ এক কঠিন সময় অতিক্রান্ত করছে। সরকার গোটা দেশ, গণতন্ত্র , অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করে দলীয় সমানের রূপান্তরিত করেছে। এই অবস্থায় আমারদের আন্দোলন ছাড়া আমাদের কোনো গত্যন্তর নেই। বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে না। আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য এই আন্দোলন করছি।১/১১ সরকারের আমলে তারেক রহমানের ওপর নির্মম নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, জাতীয়তাবাদী রাজনীতি ধারণ করেন বলেই তারেক রহমানের ওপর এতো নির্যাতন চালানো হয়েছে। তিনি এখন লন্ডনে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন। দেশে এখন ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতায়। এদের হটিয়ে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমরা তার আগমনের প্রতিক্ষায় আছি।
তিনি বলেন, তারেক সেই গর্বিত পিতার সন্তান যিনি দেশকে স্বাধীনতার স্বাদ পাইয়ে দিয়েছিলেন। আর সেই মাতার সন্তান যিনি দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। তারেকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এ জন্য যে, তিনি জনহিতকর কাজের মাধ্যমে দেশের মানুষের মনিকোঠায় ঠাঁই করে নিয়েছিলেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রদলের নেতৃত্বে বয়স্কদের আসার সমালোচনা করে বলেন, ছাত্রদলের ৫০ বছরের ছেলেরা নেতা হতে চান। কেনো এটা হবে। ৫০ বছরের নেতাদের বলব, আপনারা ছাত্রদল ছাড়ুন। বিএনপি ও যুব দলের আপনারা যান, রাজনীতি করুন। আন্দোলনকে চাঙ্গা করতে হলে ছাত্রদলকে সক্রিয় করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২২:১৫:০২ ৩৩৪ বার পঠিত