বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ আগামী বছর জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে ডিসেম্বরে গণশুনানি করবে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনার জন্যই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।অক্টোবরের মাঝামাঝিতেই বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির জন্য বিইআরসির কাছে প্রস্তাব দেয়। একই মাসে গ্যাসের দাম বৃদ্ধিও জন্য বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) বিইআরসির কাছে প্রস্তাব পাঠায়। এর আগে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় তা পেট্রোবাংলার কাছে পাঠায়। তবে সে সময় পৃথক পৃথক প্রস্তাব জমা না দেয়ায় দাম বাড়ানোর বিষয়ে বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানিগুলোকে তা ফেরত পাঠিয়ে দেয় বিইআরসি।
বিইআরসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, নির্দিষ্ট করে কবে, কখন মূল্যবৃদ্ধির জন্য গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে তা বলা না গেলেও শিগগির এ বিষয়ে জাতীয় দৈনিকগুলোতে বিজ্ঞাপন দেয়া হবে।
অক্টোবরে বিইআরসির কাছে ইউনিটপ্রতি প্রায় ১৮ দশমিক ১২ শতাংশ বা ৮১ পয়সা দরে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এতে পিডিবি দেশের যে বড় বড় বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করছে তাদের কাছে বর্তমান মূল্য চার টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ টাকা ৫১ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আগামী বছরের শুরু থেকে প্রস্তাবিত বিদ্যুতের দাম কার্যকর করার আবেদন করেছে পিডিবি।
সূত্র জানায়, পিডিবির পক্ষ থেকে পাইকারি পর্যায়ে ১৮ শতাংশ দাম বৃদ্ধির জন্য বিইআরসির কাছে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
এদিকে জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্যাসের দাম বৃদ্ধির অনুমোদন দিয়েছেন। এর ফলে সব ধরনের গ্যাসের দাম আবারো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাড়ছে আবাসিক খাতের গ্যাসের দাম। আবাসিক খাতে দুই চুলার ক্ষেত্রে দাম বাড়বে সর্বোচ্চ ১২২ দশমিক ২২ শতাংশ পর্যন্ত। এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরো বাড়বে। আবাসিক খাতে দুই চুলার গ্যাসের বর্তমান দাম ৪৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হচ্ছে। আর এক চুলার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের ৪০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা করা হতে পারে। এক্ষেত্রে দাম বৃদ্ধির হার হবে ১১২ দশমিক ৫০ শতাংশ। আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে যারা মিটার ব্যবহার করেন, তাদের প্রতি এক হাজার ঘনফুট গ্যাসের বর্তমান দাম ১৪৬ টাকা ২৫ পয়সা। নতুন প্রস্তাবে এটা ২৩৫ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে দাম বৃদ্ধির হার ৬০ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
আবাসিক খাতের পরই গ্যাসের সবচেয়ে বেশি দাম বাড়বে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনে। অন্যদিকে শিল্পে বর্তমানে এক হাজার ঘনফুট গ্যাসের মূল্য ১৬৫ টাকা ৯১ পয়সা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২২০ টাকা হতে পারে। বাণিজ্যিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ২৬৮ টাকা থেকে বেড়ে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এ ছাড়া সিএনজি খাতে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ৬৫১ টাকা ২৯ পয়সা থেকে ৯০৫ টাকা ৯২ পয়সা এবং চা-বাগানে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ১৬৫ টাকা ৯১ পয়সা থেকে ২০০ টাকা করা হতে পারে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের প্রতি এক হাজার ঘনফুটের বর্তমান দাম ৭৯ দশমিক ৮২ টাকা থেকে হবে ৮৪ টাকা। আর সার উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ৭২ দশমিক ৯২ টাকা থেকে হতে যাচ্ছে ৮০ টাকা। এর আগে সর্বশেষ চলতি বছরের ১২ মার্চ গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে প্রতি ইউনিট ৪০ পয়সা করে অর্থাৎ ছয় দশমিক ৯৬ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, মহাজোট সরকার এ নিয়ে ২০০৯ সাল থেকে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য সাতবার ও পাইকারি পর্যায়ে ছয়বার বৃদ্ধি করেছে। অন্যদিকে বর্তমান সরকার গত মেয়াদে গ্যাসের (সিএনজি) মূল্য দুবার বৃদ্ধি করে এবং এর আগে ২০০৯ সালের ১ আগস্ট বিইআরসি আবাসিক গ্রাহকদের জন্য ১১ শতাংশ হারে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করে।
বাংলাদেশ সময়: ১১:১৮:১১ ৩৫২ বার পঠিত