যুবলীগ নেতার কাছে জিম্মি ৩০ হাজার মানুষ

Home Page » জাতীয় » যুবলীগ নেতার কাছে জিম্মি ৩০ হাজার মানুষ
রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৪



images2.jpgবঙ্গ-নিউজঃ ১৩টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও ইউনিয়ন যুবলীগের সহসম্পাদক নান্নু মৃধা ও তাঁর ভাই সেন্টু মৃধার কাছে। সেন্টু মৃধা ওই ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য।ওই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে পাঁচ শতাধিক কৃষক পরিবারের জমি দখল, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা, হত্যা এবং পুলিশের ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এমনকি ‘নান্নু বাহিনী’ নামে সশস্ত্র বাহিনীও গড়ে তুলেছেন তাঁরা। থানায় তাঁদের বিরুদ্ধে ২০টিরও অধিক মামলা রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
গৌরনদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম বলেন, হত্যা, মাদক ব্যবসা, লুটপাটসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের অভিযোগে নান্নু মৃধার বিরুদ্ধে ১২টি ও তাঁর ভাই সেন্টু মৃধার বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে। ফেনসিডিলের বড় চালানসহ পুলিশ ও র্যাব কমপক্ষে ২০-২৫ বার তাঁদের গ্রেপ্তার করে কারাগারেও পাঠিয়েছে। তবে সাক্ষীর অভাবে এবং আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বের হয়ে তাঁরা পুনরায় অপরাধ করেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বরিশালের পুলিশ সুপার (এসপি) এ কে এম এহসান উল্লাহ বলেন, ওই দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ, এলাকাবাসী এবং ভুক্তভোগী লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই দুই ভাই এলাকার পাঁচ শতাধিক কৃষক পরিবারের প্রায় ৪০০ একর জমি বেদখল করে মাছের ঘের তৈরি করেছেন। একটি মাদক মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার কারণে গত ১৬ অক্টোবর নান্নু মৃধার নেতৃত্বে তাঁর বাহিনীর লোকজন পরিকল্পিতভাবে নন্দনপট্টি আকসা মসজিদের সামনে খাদেম সরদার নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা এবং নিহতের ছেলে আসলাম সরদারকে গুরুতর জখম করেন। এর আগে গত ১ অক্টোবর ফেনসিডিলের চালান আমদানির খবর পেয়ে গৌরনদী থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) নুরুল ইসলাম একদল পুলিশ নিয়ে অভিযান চালান। তখন নান্নু বাহিনীর সদস্যরা পুলিশের ওপর হামলা চালান। তাঁরা নুরুল ইসলামকে মারধর করে ছেড়ে দেন।
একটি গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বার্থী ইউনিয়নের নন্দনপট্টি গ্রামের সফিজ উদ্দিন মৃধার ছেলে নান্নু ও সেন্টু মৃধা একসময় দিনমজুরের কাজ করতেন। সাত-আট বছর আগে তাঁরা ফেনসিডিল ব্যবসা শুরু করেন। এরপর রাতারাতি তাঁরা বিপুল অর্থের মালিক হয়ে যান। ২০০৮ সালে তাঁরা তাঁদের কিছু অনুসারীকে নিয়ে যুবলীগে যোগদান করেন। ওই বছর নান্নু বার্থী ইউনিয়ন যুবলীগের সহসম্পাদকের দায়িত্ব নেন। এর পর থেকে তাঁরা দাপটের সঙ্গে ফেনসিডিলের ব্যবসা চালাতে থাকেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, নান্নু ও সেন্টু মাদারীপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনাসহ দক্ষিণাঞ্চলে ফেনসিডিল সরবরাহ করে থাকেন।
সম্প্রতি সরেজমিনে ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামের ভুক্তভোগী লোকজনসহ শতাধিক মানুষের সঙ্গে কথা বলেন এ প্রতিবেদক। তাঁরা জানান, নান্নু টাকা ও ক্ষমতার জোরে গ্রামে নান্নু বাহিনী নামে সশস্ত্র বাহিনীও গড়ে তুলেছেন। প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করতে কয়েকটি আস্তানাও তৈরি করেছেন তাঁরা। সেসব আস্তানায় যৌনকর্মীও রাখা হয়েছে। তাঁদের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে তাঁরা নানাভাবে নির্যাতন করেন। তাঁদের হামলায় এ পর্যন্ত স্কুলছাত্রসহ ১৩টি গ্রামে দুই শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। এ কারণে বর্তমানে তাঁদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।
এলাকাবাসী জানান, মাদক, অস্ত্র ও দেহব্যবসা পরিচালনার জন্য বেজগাতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনে, কামরাঘাট মৎস্যঘেরের পাড়ে, বেজগাতি অমূল্য দাসের বাড়িতে, গোরক্ষডোবায় সিদ্দিকুর রহমান নামের এক ব্যক্তির আধাপাকা ভবন এবং বেজগাতি গ্রামের গির্জাঘর চত্বরসহ ছয়-সাতটি স্থানে মাদক ও জুয়ার আড্ডা বসিয়ে জমজমাট ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন নান্নু। এই বাহিনীর হুমকির মুখে সিদ্দিকুর রহমান বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। এরপর ওই বাড়িটাও মাদকের আস্তানা বানানো হয়।
নির্যাতিত হারুন আর রশিদ বলেন, ‘সাত-আট মাস আগে র্যাব নান্নুর বাড়ি ঘেরাও করে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল উদ্ধার করে। আমি র্যাবকে তথ্য দিয়েছি-এ সন্দেহে পরের দিন নান্নু ও সেন্টু রামদা, চাকুসহ ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমার ওপর হামলা চালায় এবং কুপিয়ে জখম করে। আমাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালেও যেতে দেয়নি তারা।’
এলাকাবাসী জানান, পাঁচ-ছয়টি গ্রামের দুই শতাধিক কৃষক পরিবারের প্রায় ৪০০ একর জমি বেদখল করে নান্নু ঘের করে মাছ চাষ করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা বলেন, এর প্রতিবাদ জানানোয় নান্নু বাহিনীর লোকজন তাঁদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। তাঁরা এ ব্যাপারে গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মো. হারিছুর রহমানের কাছে বিচার চেয়েছেন।
হারিছুর রহমান বলেন, অবৈধ মাছের ঘের বন্ধের জন্য নান্নুকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁদের দলীয় অবস্থান সম্পর্কে মেয়র বলেন, নান্নু ও সেন্টু বর্তমানে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কোনো কমিটিতে নেই। হত্যা মামলায় বর্তমানে পলাতক থাকায় নান্নু ও সেন্টু মৃধার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। নান্নুর বাড়িতে গিয়ে তাঁর মা রিজিয়া বেগমের কাছে ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে মোর পোলায় এ ব্যবসা করত, এ্যাহন আর করে না। শত্রুরা মিথ্যা কথা ছড়ায়।’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গৌরনদীর পরিদর্শক রায়হান আহম্মেদ বলেন, কিছুদিন আগে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালাতে গেলে নান্নু মৃধার গ্রুপের লোকজন হামলা চালিয়ে পরিদর্শক সিরাজুল ইসলামসহ দুই কনস্টেবলকে দা দিয়ে কুপিয়ে জখম করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২:৪২:১২   ৩৬৭ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জাতীয়’র আরও খবর


সালাম, আমান, রিজভী, খোকন, শিমুল ও এ্যানিসহ গ্রেফতার শতাধিক
ভারতকে হারিয়ে টাইগারদের সিরিজ জয় নিশ্চিত
 নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ,নিহত ১
বিয়েবর্হিভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ: প্রতিবাদে বিক্ষােভ ইন্দোনেশিয়ায়
আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
কোয়ার্টারে ব্রাজিল ক্রোয়েশিয়া মুখোমুখি
ব্যাংকে টাকা নিয়ে গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির লটারি ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর
২০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ
সউদী আরব তৈরি করবে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবন্দর

আর্কাইভ