বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ একটি লাইটার জাহাজে ডাকাতি ও এর সাত শ্রমিক নিখোঁজ হওয়ার পর বিভিন্ন দাবিতে নৌ শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে দেশের প্রধান দুই সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম ও মংলায় অভ্যন্তরীণ ও বহির্বাণিজ্যের সব কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। নদী পথে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ডাকাতি বন্ধ এবং নৌযানে কাজ করা শ্রমিকদের নিরাপত্তার দাবিতে শনিবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের এ কর্মসূচির ডাক দেয় লাইটার (ছোট আকারের পণ্যবাহী) জাহাজের শ্রমিকরা।
পরে এতে সমর্থন জানিয়ে দেশব্যাপী কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয় লাইটার জাহাজ শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন।
লাইটার জাহাজ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নবী আলম বঙ্গ-নিউজ ডটকমকে বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম থেকে সার বোঝাই এমভি কর্ণফুলী-৫ বাঘাবাড়ি যাচ্ছিল। পথে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার কমলগঞ্জ থানার বাতির শাইল এলাকায় পৌঁছালে জাহাজটি ডাকাতদের কবলে পড়ে। মালামাল লুট করে ১০ জন নৌ শ্রমিকের মধ্যে তিন জনকে কেবিনে আটকে রাখে ডাকাতরা। এরপর থেকে বাকি সাত শ্রমিক নিখোঁজ।
“শনিবার সকালে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশের শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরাও তাতে সমর্থন জানাই।”
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, “যতক্ষণ শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না হবে এবং নিখোঁজ শ্রমিকদের খোঁজ না মিলবে ততোক্ষণ কর্মবিরতি চলবে।”
ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম বঙ্গ-নিউজ ডটকমকে বলেন, মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর, গজারিয়া, ষাটনল থেকে মেঘনা সেতু, নারায়ণগঞ্জের বৈদ্যেরবাজার থেকে হাটকান্দা মাঝেরচর, নরসিংদী মরিচা থেকে মানিকনগর এবং ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রতিনিয়ত নৌ ডাকাতির ঘটনা ঘটছে।
বিষয়টি নৌপুলিশ, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডকে জানানো হলেও জলদস্যুদের ধরার ব্যাপারে তাদের উদ্যোগ দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
“প্রশাসন ওই জলদস্যু বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় নৌ শ্রমিকরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে,” বলেন তিনি।
আন্দোলনকারী শ্রমিকরা সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাট সড়কের গ্যাসর্যালিঘাট এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করছে।
শ্রমিকদের এ কর্মবিরতিতে সকাল থেকে সারাদেশে জাহাজে অভ্যন্তরীণ পণ্য পরিবহন বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে থাকা বড় জাহাজ থেকে পণ্য খালসের কাজও বন্ধ হয়ে গেছে।
দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ পথে প্রায় দুই হাজার চারশ লাইটার জাহাজ চলাচল করে। সারাদেশে লাইটার জাহাজের শ্রমিক সংখ্যা প্রায় দুই লাখ।
বন্দর কাজে সংশ্লিষ্টরা জানান, লাইটার জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় বন্দরের বহির্নোঙরে থাকা বড় আকারের জাহাজ থেকে পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে যায়।
পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ ১৬টি পথে লাইটার জাহাজে করে পণ্য পরিবহনও বন্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) গোলাম সারওয়ার বঙ্গ-নিউজ ডটকমকে বলেন, “ঘটনার বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই। বর্হিনোঙরে শুক্রবারও কাজ হয়েছে। আজ (শনিবার) কাজ হচ্ছে কি না সেটা বিকালে বর্হিনোঙরের জাহাজের এজেন্টরা ফিরলে বলা যাবে বঙ্গ-নিউজ ডটকমের বাগেরহাট প্রতিনিধি জানিয়েছেন, শ্রমিকদের কর্মবিরতির ফলে মংলা বন্দরে অবস্থান নেওয়া সব পণ্যবাহী জাহাজে পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের মংলা উপজেলা শাখার সভাপতি আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বঙ্গ-নিউজ ডটকমকে বলেন, কর্মবিরতির কারণে শনিবার সকাল থেকে মংলা বন্দরের জাহাজের পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, শুক্রবারের ওই ঘটনা ছাড়াও গত এক মাসে এরকম শতাধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
“দেশের নদী পথে গত পাঁচ বছর ধরে জলদস্যুরা সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি ও ডাকাতি চালিয়ে আসছে। বিষয়টি প্রশাসনকে বারবার অবহিত করলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তাই আমরা বাধ্য হয়ে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছি। আমাদের এই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।”
চট্টগ্রাম বন্দরের মতো মংলা বন্দর এবং সিলেট, নারায়ণগঞ্জ থেকেও কোনো নৌযান পণ্য নিয়ে দেশের কোথাও ছেড়ে যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:৩৩:৪৩ ৩৪১ বার পঠিত