নবাব আলিবর্দীর মাতৃভূমি ইরান (১৬৭৪-১৯সেপ্টেম্বর জন্ম), নবাব সিরাজউদ্দৌলা (১৭২৭-১৯ সেপ্টেম্বর জন্ম) ও তাঁর প্রান প্রিয় স্ত্রী লুৎফুন্নিসার (১৭৩৪-১৯ সেপ্টেম্বর জন্ম) জন্মভূমি এই রূপসি বাংলা, তবে নবাব আলিবর্দী, সিরাজউদ্দৌলা ও লুৎফুন্নিসার জন্মের তারিখ ও মাস একই অর্থাৎ ১৯ শে সেপ্টেম্বর। নবাব আলিবর্দীর মৃত্যু হয়েছে ১০ই এপ্রিল ১৭৫৬ সালে, বাংলার সর্ব কালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বীর সন্তান সিরাজউদ্দৌলা শহীদ হন ২ জুলাই, আর দীর্ঘকাল তার শোকে থেকে কবরের পরিচর্যা করে ১০ই নভেম্বর ১৭৮৬ সালে সিরাজ পত্নী লুৎফুন্নিসা বেগম ইন্তিকাল করেন। এই তিন জন ছিলেন একে অন্যের প্রান প্রিয়, তাঁদের ভালোবাসা ছিল হৃদয়ের বন্ধনে। নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরিবারের অজানা সব কথা নিয়ে উক্ত বইটির আয়োজন।
পাঠক সমাজের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়, বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব ও বাংলার ইতিহাসের অন্যতম ব্যক্তিত্ব নবাব সিরাজউদ্দৌলা অবলম্বনে বর্তমান সময়ের তরুণ প্রজন্মের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক জনাব এস.জি. আববাস আরেব তাঁর হৃদয়ের ক্যানভাসে উদিত সহস্র কথামালাকে যথার্থ রূপ দিয়েছেন তাঁর এই বইটিতে।
এতদিন আমরা শুধু নবাব সিরাজউদ্দৌলা রাজত্ব, যুদ্ধ বিগ্রহ ও পরাজয় সম্পর্কে জেনেছি। কিন্তু প্রেম ভালোবাসা ছাড়া কোন ইতিহাসই পূর্ণতা পায় না। এই অসম্পূর্ণ ইতিহাসকে পূর্ণতা দিতেই এই গ্রন্থের লেখক আমার অত্যন্ত প্রিয় এবং আদর্শবান ব্যক্তি জনাব এস.জি. আববাস আরেব তার এই গ্রন্থটিতে সত্য গল্প বর্ণনা করেছেন।
তিনি শুধু এই গল্পের লেখক নন, নবাব বংশের নবম বংশধরও। লেখকের এই গল্প পাঠকের হৃদয়ের পূর্ণ স্থানটি পূরণ করবে বলে আমি আশা করি। এই গ্রন্থের মাধ্যমে আমরা নবাব সিরাজউদ্দৌলার হৃদয়ের পটভূমিতে যে প্রেমের সঞ্চার ছিল, ভালোবাসার নিকুঞ্জ ছিল সেই সম্পর্কে অবহিত হতে পারবো।
প্রাচীন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের হৃদয়ে কি প্রকৃত প্রেম ভালোবাসা ছিল? এমন প্রশ্নের উত্তর আমরা খুঁজে পাব এই গ্রন্থের মাধ্যমে। তাই বাংলার পাঠক সমাজের জন্য এই গ্রন্থ নিবেদন করছি।
সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব। তিনি ছিলেন নবাব আলীবর্দী খানের দৌহিত্র। নবাব আলীবর্দীর কোন পুত্র সন্তান ছিল না। তিনি তাঁর তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন বড় ভাই হাজী আহমেদের তিন ছেলের সঙ্গে। ছোট মেয়ে আমিনা বেগমের বিয়ে হয়েছিল জায়েন উদ্দীনের সাথে। সিরাজ ছিলেন জায়েন উদ্দিন ও আমিনা বেগমের বড় ছেলে। সিরাজকে তাঁর পিতামহ আলীবর্দী খাঁন খুবই ভালবাসতেন।
বাংলা তথা ভারতের ইতিহাসে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠা লাভ। নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাথে তাদের বিরোধ। এরই পথ ধরে সংঘটিত তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, পলাশীর যুদ্ধ, পরাজয়ের কারণ এসব বিষয়গুলো এক সুতায় করে ছবি নির্মাণ এবং বেশ কয়েকটি বই বের হলেও সবার জন্য আনন্দের বিষয় হল এই প্রথম সিরাজ বংশের নবম পুরুষ এস.জি. আববাস আরেব তার কলমের কালিতে মানব মনের চিরন্তন বোধ প্রেম ভালোবাসার যে মায়াজাল সিরাজ পরিবারে পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়েছে, মূলত সেটাই সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন আপন দক্ষতায়।
পাঠক সমাজ নবাব সিরাজের শাসন, যুদ্ধ, জয়-পরাজয় এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়েছে। এর বাইরে যে স্নেহ-মমতা, ভালোবাসায় ঘেরা আরেকটি জগৎ আছে, যা হয়তো এতদিন অজানা ছিল। কোন সন্দেহ নেই, অজানা সেই জগতের রহস্য সম্ভার সম্পর্কে জানতে এই বইটি প্রিয় পাঠকদের সাহায্য করবে আশা করি।
ব্যক্তি হিসাবে এস.জি. আববাসকে যতটুকু জানি অনেক ভাল মনের স্বপ্নীল মানুষ। যখন কথা বলার সুযোগ হয় নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে হয়। অসম্ভব ভাল লাগে তার স্বপ্নময় শুভ চিন্তা-ভাবনার কথামালা শুনতে। ”ওঔইঈ” তেমনি একট সংগঠন যেখানে প্রতিনিয়ত সুন্দর স্বপ্নের চাষাবাদ হচ্ছে।
যে কথা না বললে নয়, বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবকে যাতে পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারে, তার ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষার জন্য সিরাজউদ্দৌলা একাডেমী করার স্বপ্ন লালন করেছেন এস.জি. আববাস অনেকদিন যাবত। যা সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এই শুভ উদ্যোগের সফল বাস্তবায়নের জন্য সরকারী ও বেসরকারী সাহায্যের হাত এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করি। পরিশেষে বইটি পাঠকদের কাছে আদরণীয় হয়ে উঠুক এমন কামনা করি।
১৭৫৭ সালের ২ জুলাই বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল।
অনেকের স্মৃতিতে না থাকলেও নবাব সিরাজউদ্দৌলার বংশধরদের কাছে দিনটি শোকের।
তাঁরা এদিন নবাবের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন।
শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁদের বংশের নবাবকে স্মরণ করেন।
নবাবের বংশধররা এখন ঢাকায় বসবাস করছেন।
বাংলাদেশে নবাব সিরাজউদ্দৌলার বংশধর
তাঁরা হচ্ছেন নবাবের অষ্টম বংশধর সৈয়দ গোলাম মোস্তফা এবং নবম বংশধর সৈয়দ গোলাম আব্বাস আরেব।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ গোলাম মোস্তফা বর্তমানে ব্যবসা ও সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত।
আর সৈয়দ গোলাম আব্বাস আরেব নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে নিয়ে গবেষণা করছেন।
গড়ে তুলেছেন ‘সাব ফ্রেন্ডশিপ গার্ডেন’ নামের একটি সংগঠন।
তিনি নবাব সিরাজউদ্দৌলা একাডেমীর নির্বাহী প্রধান ও প্রতিষ্ঠাতা।
ঢাকার খিলক্ষেত-বারিধারার লেকসিটি কনকর্ডে নবাবের এই বংশধররা বসবাস করছেন।
বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার রক্ত তাঁদের শরীরে প্রবাহিত হলেও তাঁরা লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে গেছেন।
সাধারণ মানুষের মতো বাসে চাপছেন, কাঁচাবাজারে যাচ্ছেন।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জীবন-জীবিকার জন্য লড়াই-সংগ্রাম করছেন।
নবাব পরিবারের বংশধর হিসেবে তাঁরা বিশেষ কোনো সুযোগ-সুবিধা পাওয়া বা ফায়দা লোটার জন্য কখনোই নিজেদের পরিচয় তুলে ধরেননি।
আলিবর্দী খাঁ ইরান থেকে এসে ১৭৪০ সালে ৬৬ বছর বয়সে বাংলার নবাব হন।
তাঁর নাতি সিরাজউদ্দৌলা ১৭২৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজমহলে জন্মগ্রহণ করেন।
১৭৫৬ সালে সিরাজউদ্দৌলা বাংলার মসনদে বসেন।
১৭৫৭ সালের ২ জুলাই মীর জাফরের প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে মীর মিরনের নির্দেশে মোহাম্মদী বেগের হাতে তিনি নিহত হন।
নবাব পরিবারের নবম বংশধর সৈয়দ গোলাম আব্বাস আরেবের পূর্ববর্তী বংশধরের কুষ্ঠি বিশ্লেষণ করে জানা যায়,
( ১)নবাব সিরাজউদ্দৌলার মেয়ে উম্মে জোহরা ওরফে কুদসিয়া বেগম (প্রথম বংশধর),
(২) জোহরার ছেলে শমসের আলী খান (দ্বিতীয় বংশধর),
(৩)তাঁর ছেলে লুৎফে আলী (তৃতীয় বংশধর),
(৪)লুৎফের মেয়ে ফাতেমা বেগম (চতুর্থ বংশধর),
(৫) তাঁর মেয়ে হাসমত আরা বেগম (পঞ্চম বংশধর),
(৬)হাসমত আরার ছেলে সৈয়দ জাকি রেজা (ষষ্ঠ বংশধর),
(৭)তাঁর ছেলে সৈয়দ গোলাম মোর্তজা (সপ্তম বংশধর)
(৮) গোলাম মোর্তজার ছেলে সৈয়দ গোলাম মোস্তফা (অষ্টম বংশধর)
(৯)এবং তাঁর ছেলে সৈয়দ গোলাম আব্বাস আরেব (নবম বংশধর)।
নবাবের নবম বংশধর আরেব সিরাজ পরিবারের আদর্শ, প্রেম-ভালোবাসা ও স্মৃতি ধরে রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
আরেব বলেন, ‘বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের শিক্ষা নেওয়ার ইতিহাস।
বাংলাদেশ সময়: ১:০২:৫৬ ৩৬৬৮ বার পঠিত