ইনাম,বঙ্গ নিউজ ডটকম :মোবাইল ফোনের ক্যামেরা কোনো খাদ্যের উপর ধরলেই হলো৷ অ্যাপ তার গুণাগুণ, খাদ্য কতটা তাজা - তা বলে দিতে পারবে৷
খাদ্যের বিশ্বায়ন
বিশ্বায়নের এ যুগে চাইলে পাওয়া যায় না এমন জিনিস বোধ হয় নেই৷ রকমারি শাক-সবজি, ফল থেকে শুরু করে বাঘের দুধ - হালের সুপারমার্কেটগুলিতে স্থানীয় খাবার-দাবারের পাশে খুব হেলার ছলেই জায়গা করে নিচ্ছে দেশ-বিদেশের খাদ্য সামগ্রী৷
হল্যান্ডের টোম্যাটো, স্পেনের সসেজ, ফ্রান্সের চিজ, ভারতীয় আম অথবা বাংলাদেশি ইলিশ মাছ - চাইলেই এগুলো সুদূর ইউরোপে বসেও হাতের মুঠোয় উঠে আসতে পারে৷ কিন্তু জিনিসগুলোর মান? সেটা কি নিশ্চিত করা সম্ভব? হ্যাঁ, সম্ভব৷ তাও আবার সাধারণ মুঠোফোনের মাধ্যমেই৷
খাদ্যের মান
জার্মানির ড্রেসডেন শহরে ফ্রাউনহোফার-ইনস্টিটিউট এবার এমন একটা অ্যাপ বা মোবাইল-অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছে, যা দিয়ে খুব সহজেই খাদ্যের পচন সনাক্ত করা সম্ভব৷ সম্ভব তার গুণাগুণ বিচার করাও৷
মুঠোফোনের মধ্যে যে জিনিস এই কাজটা করে থাকে, সেটা আর কিছুই নয়, একটা ‘স্পেক্ট্রোমিটার’৷ এটা অনেকটা ‘ডিজিটাল ক্যামেরা’-র মতো৷ ক্যামেরা যেমন আলোর প্রতিফলনকে তিনভাগে ভাগ করে একটা অবয়ব তৈরি করে, তেমনই স্পেক্ট্রোমিটারও নিমেষের মধ্যে তুলে ফেলে সামনে রাখা জিনিসের ছবি৷
বিশ্লেষণের পদ্ধতি
অবশ্য ফ্রাউনহোফার-ইনস্টিটিউটের তৈরি করা এই স্পেক্ট্রোমিটার-অ্যাপ আরো অনেক কাজ করে থাকে৷ বিজ্ঞানী ড. মিশায়েল শলেস এ প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘সাধারণ ক্যামেরার মতো আমরা তিনটি মাত্র চ্যানেল দিয়ে আলোকরশ্মিকে বিভক্ত করি না৷ আমরা আরো স্পষ্ট ছবি তোলার জন্য সূক্ষ্মতর প্রতিফলন সৃষ্টি করে থাকি৷ এটা অনেকটা ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় আঙুলের ছাপ নেয়ার মতো৷ এতে করে খাদ্যের বিভিন্ন উপাদানগুলি সম্পর্কে তাৎক্ষণিক একটা আন্দাজ পাওয়া যায়৷”
অবশ্য শুধু কাঁচা শাক-সবজি বা ফলই নয়, যে কোনো শুকনো খাবারের ক্ষেত্রেও এই পরীক্ষা করা যায়৷ মজার বিষয় হলো, আর চার-পাঁচটা অ্যাপের মতো এটার ব্যবহারও খুব সহজ৷ কোনো খাদ্য সামগ্রির গুণাগুণ জানতে চান? জানতে চান কোনো একটি বিশেষ খাবারে কতটা পানি, কতটা লবণ বা কতটা চর্বি আছে? অথবা ওষুধে কোনো বিশেষ কেমিক্যালের পরিমাণ কতটা? সমস্যা নেই৷ হাতের মুঠোফোনটিতে স্পেক্ট্রোমিটার-অ্যাপ ‘ইন্সটল’ করুন৷ তারপর খাদ্য সামগ্রির তুলে নিন একটা ছবি৷ ব্যাস্!
সেই তোলা ছবির মধ্যে দু’ধরণের আলোকরশ্মি শনাক্ত করে জিনিসটা টেকসই কিনা, তাজা কিনা অথবা তাতে কোন উপাদান কতটা পরিমাণ আছে - সেটাই ২০০৩ সাল থেকে নির্ধারণ করার চেষ্টা করছেন ড. হাইনরিশ গ্র্যুগার এবং তাঁর দল৷ ড. গ্র্যুগার বললেন, ‘‘ভবিষ্যতে স্পেক্ট্রোমিটার-অ্যাপ সরাসরি খাদ্য সামগ্রীর ওপর ধরে ছবি তোলা যাবে৷ খুব সহজেই যে কোনো খাবারের গুণাগুণ বিশ্লেষণ করে ফেলতে পারবে এটি৷ এই ধরুন এই আপেলটা…এই অ্যাপের সাহায্যে আপেলটার ছবি তুললেই মোবাইলে বসানো স্পেক্ট্রোমিটারটি বলে দেবে এটা মিষ্টি বা টক কিনা৷ অথবা জানিয়ে দেবে এটা আদৌ এখনও খাওয়ার যোগ্য কিনা…৷”
ড. গ্র্যুগার আরও বললেন, ‘‘এবার একটা ক্রিমটা নেয়া যাক৷ ধরুন ক্রিমটার ‘এক্সপায়েরি ডেট’ পার হয়ে গেছে৷ এরপরেও স্পেক্ট্রোমিটার-অ্যাপের মাধ্যমে তোলা ছবিতে হয়ত দেখা যাবে যে, এটা আরো কিছুদিন ব্যবহার করা যাবে৷”
ড. গ্র্যুগার জানান, আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যেই মুঠোফোনে এই স্পেক্ট্রোমিটার-অ্যাপ ‘ইন্সটল’ করে রোজকার বাজার করা সম্ভব হবে৷ ওষুধ দিয়ে নয়, শুধুমাত্র এই অ্যাপের কল্যাণেই তখন পচন থেকে বাঁচবে জীবন, সহজ হবে টাটকা শাক-সবজি আর ফল কেনা৷
ডিজি/এসবি
বাংলাদেশ সময়: ১০:৪০:০৮ ৭০১ বার পঠিত