নিজস্ব প্রতিবেদক-আল রিআন:একের পর এক মোবাইলের নম্বরে মিসড কল। তার পর সেই মিসড কলের প্রত্যুত্তরে কোনো পুরুষ ফোন করলে তার সঙ্গে প্রথমে বন্ধুত্ব। পরে মিথ্যে প্রেমের ফাঁদে ফেলা। শেষে নিজেকে বাপ-মা’হীন অসহায় বলে পরিচয় দিয়ে পুরুষটির মন গলিয়ে করে ফেলা। এতটা পর্যন্ত ঠিকই ছিল, এর পরেই শুরু সিনেমার মতো আসল গল্প। পুরুষ বন্ধুটির সঙ্গে গোপন কোনো ডেরায় দৈহিক সম্পর্ক করা। শয্যায় মিলনের সেই দৃশ্য বা কথোপকথন রেকর্ড করে তা নিয়ে শুরু হয় ব্ল্যাকমেল। এভাবেই নিত্য নতুন খদ্দের ধরে তাদের ব্ল্যাকমেলের মাধ্যমে দামি মোবাইল, সোনার আংটি, চেন ও অর্থ ছিনতাই করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। কলকাতার বালুরঘাট শহরের বেসরকারি ব্যাঙ্কের ছাদ থেকে পড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে নেমে এমনই এক সক্রিয় চক্রের সন্ধানে বড়সড় সাফল্য পেয়েছে ভারতীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ। বেসরকারি ব্যাঙ্কটির সিকিউরিটি গার্ডই এই চক্রের মূল পান্ডা।জেলার গ্রামীণ এলাকার বিভিন্ন মহিলাদের নিয়ে এই চক্রটি তৈরি হয়েছিল। মিসড কলের মাধ্যমে বিশেষ করে বিবাহিত পুরুষদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের কাজে মহিলা সদস্যদের কাজে লাগানো হতো। পুলিশ তদন্ত করে জানতে পেরেছে, গত শনিবার রাতে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট শহরের রথতলা এলাকায় অবস্থিত ব্যাঙ্কের ছাদ থেকে পড়ে মৃত বিজন সরকারকে এভাবেই মোবাইলে আলাপচারিতার মাধ্যমে ফাঁসানো হয়। টোপ দিয়ে তাকে ব্যাঙ্কের ছাদে ডেকে নিয়ে চক্রের এক মহিলা দৈহিক সম্পর্ক শুরু করে। পরিকল্পনা মাফিক নাটকীয় ভঙ্গিতে সেই অন্তরঙ্গ ও ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের মধ্যেই ছাদে গিয়ে আচমকা হাজির হয় চক্রের মূল পান্ডা ব্যাঙ্কের সিকিউরিটি গার্ড মানজারুল সরকার। এর পরেই শুরু হয় ব্ল্যাকমেল করার পর্ব। মহিলাকে নিজের বউ পরিচয় দিয়ে পুলিশে খবর দেওয়া বা পরিবারের লোকেদের জানিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে বিজন সরকারের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে তারা। তা দিতে রাজি না হলে শুরু হয় জুতো দিয়ে মারধর ও ধাক্কাধাক্কি। ঘটনার পরবর্তী ফলাফল বিজন সরকারের মৃত্যু। পুলিশ তদন্তে নেমে সেদিন রাতে ছাদ থেকে উত্তেজনাবর্ধক ট্যাবলেটের খোল ও আই-পিল উদ্ধার করে। যা থেকে পুলিশের সন্দেহ হয় যে এর পেছনে বড় কোনো ঘটনা লুকিয়ে রয়েছে। যার তদন্ত করতে গিয়েই পুলিশের চক্ষু ছানাবড়া অবস্থা হয়ে যায়। ব্যাঙ্কের খোদ সিকিউরিটি গার্ড এবং মর্জিনা খাতুন নামের এক মহিলাও এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে। দুজনকেই গ্রেফতার করেছে বালুরঘাট থানার পুলিশ।
তারা স্বীকার করেছে যে শুধু বিজন সরকারকেই নয় একই কায়দায় এর আগে বহু পুরুষকেই তারা ব্ল্যাকমেল করে প্রচুর টাকা ও জিনিসপত্র ছিনতাই করেছে। শুধু মানজারুল সরকার বা মর্জিনা খাতুনই নয় এই চক্রের সাথে কুমারগঞ্জ এলাকার আরো কয়েকজন মহিলা জড়িত রয়েছে। মানজারুলের নির্দেশে যারা মোবাইলে মিসড কল করে পুরুষদের সঙ্গে আলাপ বন্ধুত্ব ও পরে দৈহিক সম্পর্কে ফাসিয়ে তাদের ব্ল্যাকমেল করে। এই রকম একটা চক্রের মূলপান্ডা ও মক্ষীরানিকে গ্রেফতার করতে পারায় পুলিশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ বালুরঘাটের মানুষ। শুধু গ্রেফতারই নয় তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও, সেই সঙ্গে ব্ল্যাকমেল করার সময় কথোপকথনের রেকর্ডও উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সুত্রে জানা গিয়েছে এই চক্রে মর্জিনা খাতুন ছাড়াও আরো কয়েকজন মহিলা রয়েছেন। দেহব্যবসার আড়ালে পুরুষ খদ্দেরদের নানাভাবে ব্ল্যাকমেল করে অর্থ উপার্জন করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। বেশির ক্ষেত্রেই ব্ল্যাকমেলের সুবিধার জন্য মোবাইলে গোপনে ভিডিও ও কথাবার্তার রেকর্ড করে রাখত এই চক্রের চাঁইরা। প্রতি ক্ষেত্রেই মানজারুল নাটকের মাঝপথে উদয় হয়ে সেই মহিলাকে নিজের স্ত্রী বলে পরিচয় দেয় এবং ভুলের খেসারৎ বাবদ মোটা টাকার দাবি করে। দাবি মতো সেই টাকা না দিলে ফাঁদে পা ফেলা পুরুষটির বাড়ি বউকে সেই ছবি দেখানোর ভয়ও দেখায় তারা। এমনকি প্রয়োজনে হাতের আংটি মোবাইল ও টাকা পয়সাও কেড়ে নিতে পিছপা হত না তারা। মর্জিনা খাতুন একথাও স্বীকার করেছে যে বিজন সরকারের সঙ্গেও তার মোবাইলের মাধ্যমেই আলাপ। মানজারুলের নির্দেশ ও পরিকল্পনা মতো সে নিজেই ওই ব্যবসায়ীকে ব্যাঙ্কের ছাদে ডেকে নিয়েছিল। এই ধরনের কারবারের সঙ্গে তার সম্পর্কে এক বউদিসহ আরও অনেকে জড়িত রয়েছে। একই কায়দায় এর আগেও বহুবার ওই ছাদে অনেককে ডেকে নিয়ে ব্ল্যাকমেল করা হয়েছে বলেও মর্জিনা স্বীকার করেছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৪৯:৩২ ৪৬৭ বার পঠিত