বঙ্গনিউজ:আজ রোববার সকাল ৬টা থেকে জামায়াতে ইসলামীর ডাকা দ্বিতীয় দফা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল শুরু হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত এ হরতাল চলবে। এ দিকে গতকাল দেশব্যাপী বিক্ষোভ করেছেন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা। গত বুধবার আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল জামায়াতে ইসলামীর আমির ও সাবেক মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এর প্রতিবাদে এবং তার মুক্তির দাবিতে পাঁচ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল জামায়াত। গত বৃহস্পতিবার হরতাল এবং শুক্রবার দোয়া দিবস পালন করে তারা।
গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে মহানগর জামায়াত। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরের সহকারী সেক্রেটারি সেলিম উদ্দিনের নেতৃত্বে মিছিলে আরো অংশ নেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও রমনা থানা আমির ড. রেজাউল করিম, তেজগাঁও থানা আমির সালাহউদ্দীন, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা আমির হাফেজ মিজানুর রহমান, শেরেবাংলানগর সেক্রেটারি আব্দুল আউয়াল আজম, শিবির নেতা আনিসুর রহমান বিশ্বাস প্রমুখ।
মিছিল শেষে সমাবেশে সেলিম উদ্দিন বলেন, সরকার ইসলাম ও ইসলামি মূল্যবোধ ধ্বংস করে দেশকে ধর্মহীন বর্বর রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মিথ্যাচার ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে আমিরে জামায়াত মতিউর রহমান নিজামীকে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করেছে। তারা তাকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে পাশবিক উন্মত্ততায় মেতে উঠতে চায়। কিন্তু সরকারের দেশ ও জাতিসত্ত্বাবিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় সচেতন জনতা রাজপথে নেমে এসেছে। তারা প্রিয় নেতাকে বিজয়ীর বেশে মুক্ত না করা পর্যন্ত কোনোভাবেই ঘরে ফিরবে না। তিনি মৃত্যুদণ্ডাদেশ বাতিল করে অবিলম্বে আমিরে জামায়াতকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। অন্যথায় দুর্বার গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে নেতৃবৃন্দকে মুক্ত করা হবে। মিরপুরে জামায়াত সকাল ৯টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ঘটে। আল হেলাল হাসপাতালের সামনে থেকে মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মোবারক হোসাইনের নেতৃত্বে একটি মিছিল শুরু হয়ে কাজীপাড়া ব্রিজের নিচে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশ শেষে পুলিশ অতর্কিতে তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ঘটে। পরে পুলিশ বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে।
মিছিলে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য লস্কর মোহাম্মদ তসলিম ও মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন, মজলিশে শূরা সদস্য মাহফুজুর রহমান, আব্দুস সালাম, মিজানুল হক, সোলাইমান হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
সূত্রাপুরে জামায়াত-শিবির বিােভ মিছিল বের করে। যাত্রাবাড়ী-লালবাগ জোনের উদ্যোগে মিছিল শেষে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সূত্রাপুর থানা আমির রুহুল কুদ্দুস। উপস্থিত ছিলেন কোতয়ালি থানা আমির আবু আব্দুল্লাহ, চকবাজার থানা আমির মফিজুল ইসলাম, বংশাল আমির এম আলম ভূঁইয়া, যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, কদমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত আমির আবুল কাসেম গাজী, যাত্রাবাড়ী থানা সেক্রেটারি খন্দকার আবু ফতেহ, সূত্রাপুর সেক্রেটারি মিয়া মোহাম্মদ শোয়াইব, শিবিরের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি সাদেক বিল্লাহ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সেক্রেটারি দাইয়্যান সালেহীন প্রমুখ।
খিলগাঁও তালতলায় শিবিরের ঢাকা মহানগর পূর্ব শাখা বিােভ মিছিল বের করে। মিছিলে নেতৃত্ব দেন শিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক ইয়াছিন আরাফাত, মহানগর পূর্ব সেক্রেটারি এম শামীম, শিবিরনেতা শরিফুল ইসলাম, তোজাম্মেল হক, সোহেল রানা মিঠু, আবদুল কাদের প্রমুখ।
হরতাল সফলের আহ্বান জামায়াতের
জামায়াতে ইসলামীর আমির ও সাবেক মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে তাকে মুক্তি দেয়ার দাবিতে জামায়াতের আজ ও আগামীকালের ৪৮ ঘণ্টার শান্তিপূর্ণ হরতাল সর্বাত্মকভাবে পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা: শফিকুর রহমান। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকার জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই সরকারের সাজানো মিথ্যা মামলায় মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। দেশের জনগণ সরকারের সব ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ এবং মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ৩০ অক্টোবর হরতালের দিন ও তার আগের দিন সরকার সারা দেশ থেকে এক হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি করে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ৭:৫১:৩৮ ৩৭৭ বার পঠিত