সুখকাঁটা-আল রিআন

Home Page » সাহিত্য » সুখকাঁটা-আল রিআন
মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০১৪



 untvvvvvigfgtled.jpg

আজ শেষ পর্ব………..সপ্তা খানেকের মধ্যে গ্রামবাসী আপন জন হারানোর ব্যথা ভুলে আবার নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে। নতুন করে সংসার সাজানোর কথা ভাবে। কিন্তু মানিকের সকল আশা স্বপ্ন বন্যার পানির সাথে ভেসে গেল। তার মনের মধ্যে আঁকা জীবনের প্রথম স্বপ্নগুলো যে ভাবে ভেঙ্গে গেছে তা আর কোন দিনই জোড়া লাগবেনা। বন্যার পর সারা গ্রামে দেখা দিল এক নতুন সমস্যা, ভয়ংকর অভাব। কারো ঘরে কোন খাবার নেই, নেই কোন চাল,ডাল। কয়েক মাস আগেও কৃষকেরা অনেক স্বপ্ন নিয়ে আশা নিয়ে গোলায় ধান ডাল তেল জমা করে রেখেছিল। নতুন করে চাষাবাদ করতেও মাস পাঁচেক সময়তো লাগবেই। জীবন বাঁচানোর জন্যই তো খেতেই হবে। সেনা বাহিনীরা যে ত্রাণ দিয়ে ছিল তা এই কয়েক দিনের মধ্যেই শেষ। বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়া একটি কলা গাছকে পরীর মা টেনে এনে লবণ দিয়ে গরম পানির মধ্যে সিদ্ধ করে এক বেলা আহারের ব্যবস্থা করলেন। গ্রামবাসীরা অপেক্ষায় থাকে কে কখন কার চুলায় আগুন জ্বালায়। কেহ কিছু রান্না করলে সবাই চুরি করে খাবার তালে থাকে। ক্ষুদার যে কি যন্ত্রনা ঐ গ্রামবাসীকে না দেখরে বিশ্বাস করা যাবেনা। নূন, তরকারি ছাড়াই পাতিলে পাতিলে ভাতের ক্ষুদা সবার। কয়েক দিন কোন খাবারের সন্ধান না পাইয়া কলা গাছের থোর, কচু গাছের লতি, চড়ুই পাখি, শালিক পাখি, যে যা পারতেছে তাই দিয়ের এক বেলা আহার যোগাচ্ছে। মানিক একা মানুষ তার কোন চিন্তা নেই। এক বেলা খেলে অন্য এক বেলা উপোষ করে বাকী আর এক বেলা অন্ধকারের মধ্যে যে কারো বাড়ী থেকে নুন তরকারি ছাড়াই খালি ভাত চুরি করে খায়। একদিন মানিক তার মেঝ ভাই বাবুলের ঘরে রাতের বেলা চুরি করিয়া খাবারের সময় চোর বলে তাকে প্রচন্ড মার দেয়। তবে মার দেবার আগে জানতে পারে নাই, মানিক তার ঘরে চুরি করে এক বেলা আহার মিটিয়েছে। মানিককে চোর ভাবিয়া আবুল বাবুল মিলে এমন ভাবেই মেরেছে, মানিকের নাক মুখ এমন কি কান দিয়েও তাজা রক্ত বেয়ে পরছে। মার খেয়ে মানিক সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পরেছে। পুরো গ্রামে এভাবে অভাব আর মারা মারির কারবার প্রতিদিন ই চলছে। অবশেষে শুভ তার শ্বাশুড়ি আমেনা বেগমকে বলে “মা আমি আর এ গাঁয়ে থাকতে চাই না। দুই এক দিনের মধ্যে শহরে চলে যাব। অনুষ্ঠানের কোন প্রয়োজন নেই। একজন হুজুর ডেকে আমাদের বিয়েটা পড়িয়ে দিন।”
“ক্যান বাবাজি ব্রিজ, বানাইবা না ?”
“না মা, ওসব এখন হবেনা। গ্রামের পরিবেশটাও তেমন ভাল নয়। তাছাড়া পরীর বাবারও কোন সন্ধান পেলাম না।”
“ঠিক আছে। তোমরা যহন রাজী আমি কাইল সন্ধ্যার মদ্যেই তোমাগো নিকা করাইয়া দিমু।”
“না মা। আপনি আগামী কাল সকালের মধ্যে বিয়ের ব্যবস্থা করেন। আমি আগামী কাল সন্ধ্যায় টলারে করে লঞ্চ ঘাট যাব ওখান থেকে লঞ্চে করে সরাসরি ঢাকা যাব। এই চাষা ভুষার গ্রামে আর থাকতে পারছিনা। আমি হাপিয়ে উঠেছি। আপনিও মা, আমাদের সাথে ঢাকায় চলেন।”
“না বাবা, তা কি কইরা অয় ? তোমার শ্বশুড়ে বাঁইচ্চা আছে না মইরা গেছে আল্লায়ই ভালা জানে। আমার মোনে কইতাছে হেয় ফিইরা আইবো। তহন আমরা তোমারে দেখতে ঢাকার শহরে যামু।”
“ঠিক আছে মা। আপনে যা ভাল মনে করেন।”
মানিক তার ভাইদের হাতে মার খেয়েও বেঁচে আছে। সে সিধান্ত নিয়েছে এই জন্মভুমি পিংড়ী গ্রামে আর থাকবেনা। চলে যাবে অজানা কোন এক শহরে। পথে পথে হেটেই জীবনের এই বাকী কয়টা দিন কাটিয়ে দিবে। সংসার করার মত মন মানসিকতা তার আর নেই। দুই এক দিনের মধ্যেই চলে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে মানিক। কারণ পরীর বিয়ে সে নিজ চোখে দেখতে পারবেনা। পরীর বিদায় কোন অবস্থাই মানিক সইতে পারবেনা। মানিক তার মায়ের ভিটায় এক অন্ধ মহিলাকে থাকতে দেয় আর মায়ের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে দোয়া করতে বলে। এদিকে পরী বিয়ের জন্য প্রস্তুত। আজ তার বিয়ে হবে আর এই জন্মভূমিকে ত্যাগ করবে। শুভ আহম্মেদ গতকাল বড় একটি ট্রলার, লঞ্চ ঘাট যাবার জন্য রিজার্ব করে রেখেছে। ট্রলারটিকে পালকির মত অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে। পরীর মনে অনন্দ থাকলেও কষ্টের কোন শেষ ছিলনা। মুখে একটু মিষ্টি হাসি থাকলেও এই গ্রামের জন্য এই গ্রামের মানুষের জন্য মানিকের জন্য তাহার হৃদয়টি পুড়ে অংগার হয়ে যাচ্ছে। একটু সুখের লোভে শুভর কাছে কেবলি দেহটি থাকবে। সবার অজান্তে মনটি কিন্তু মানিককেই দিয়ে গেছে। সকাল থেকেই পরী লাল বেনারসী শাড়ি পড়ে, মানিকের দেওয়া আলতা চুড়ি সব ব্যবহার করে বসে আছে বধূ সেজে। মানিকের কিনে দেওয়া আলতার বোতলটি মানিকের শেষ স্মৃতি হিসাবে সারা জীবন কাছে রাখার জন্য পরী তার ব্যাগের মধ্যে নিলেন। কোন আয়োজন উৎসব ছাড়াই জিলানী হুজুর পরী আর শুভর বিবাহ শেষ করে মোনাজাতে তাদের সাংসারিক জীবনের উন্নতি কামনা করলেন। মর্জিনা পরীর বিয়েতে অংশ গ্রহণ করেনি। কারণ মর্জিনা চায়না পরী শুভকে বিয়ে করে এ গ্রাম ত্যাগ করুক। মর্জিনার প্রাণের সই পরীকে ফিরানোর জন্য সে খুব সকালে উঠে মানিকের কাছে এসে বলল “মানিক বাই, আইজ পরীর নিকা। পরী আমাগো সবাইরে ছাইড়া বৈদ্যাশে পাড়ি দিব। তুমি যাও না পরীরে ফিরাও। পরীর নিশ্চয়ই তোমার কতা হুনব।”
“নারে বইন। আগের পরী এহন আর নাই। ম্যালা বদলাইয়া গ্যাছে। ও যদি সুখে থাহে আমারও তাতে সুখ। আমি শ্যাষ কালে পরীর মন ভাঙগতে চাইনা।”
“শ্যাষ কালে মানে ? তুমিও কি পরীর মত এ গেরাম ছাইড়া উড়াল দিবা।”
মনের ভিতরের কষ্টে মানিক একটা দীর্ঘ নিঃস্বাশ ছেড়ে বলল “আমার আর এই গেরামে মন টিকতেছেনা। পরীর আর কি দোস আমার গর্ভধারীনি মায়ওতো আমার কতা না ভাইবা চইল্লা গেল। এই গেরামে আমি আর কার জন্নি থাকমু।”
“তুমি হাছাই চইল্লা যাইবা মানিক বাই।”
“হরে বইন। আমি আইজই চইল্লা যামু। সন্ধ্যার আগে আগে লঞ্চ ঘাটে যাইতে অইব। নইলে আবার লঞ্চও আমারে ছাইড়া চইল্লা যাইব।”
মানিক আর মর্জিনার উত্তরের অপেক্ষা করলনা। সে উল্টো পথে হাটা আরম্ভ^ করল। মর্জিনা পিছন থেকে বলল “মানিক বাই, যারে এত ভালবাসলা, যার লাইগা গেরাম ছাড়তাছো, তোমার সেই পরীর একবার শ্যাষ দ্যাহা দেখবানা।”
মানিক তারপরও পিছন ফিরলনা। এরমধ্যেই মানিকের সামনে আবুল, বাবুল দু’ জনেই এসে হাজির। মানিক তাদের দেখেও তার হাটা রোধ করলনা। আবুর পিছন থেকে ডেকে বলল “বাই মানিক, আইজ তো তুই জমিদার। গেরামের মদ্দি সবচাইতে বেশি জমি এহন তোর। আয়না বাই, আমরা তিনটা বাই এক লগে মিল্লা ক্ষ্যাতে খামারে কাম করি। বন্যায় আমরা তো সবই হারাইলাম।”
“হ ছোড বাই, আমরা তোর লগে একটু অন্যায়ই করছি। তোর ন্যয্য পাওনা আমরা তোরে দেইনাই। তোরে ঠকাইছি। আয় আমরা আবার মিল্লা ক্ষ্যাতে কাম করি। যা হারাইছি আবার আমরা তা ফিরাইয়া আনমু।”
“বাহ মেয়াবাই, বাহ, আইজ ভালইতো বুঝদার অইছো। ম্যালা বুঝদাছো। এই বুঝাডা যদি আর কিছুদিন আগে বুঝদা তায়লে আমি আমার মায়রে হারাইতাম না। না খাইয়া দিনের পর দিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাম না। তোমাগো ম্যালা জমির লোভ, তাই না। আমার জমি পাবার আশায় আইজ আমারে বাই কইয়া ডাকতাছো। হায়রে মানু। যাও তোমাগো আমি আমার ব্যাবাক জমি দিয়া দিলাম। আমার জমির প্রতি কোন লোভ নাই। তয় একখান কতা, তোমাগো যত জমিই থাউক না ক্যান। মরলে পরে সাড়ে তিন আতের বেশি কিন্তু পাইবা না।”
মানিকের কথায় আবুল, বাবুলের ভুল ভাংগলেও ভাংগতে পারে। তবে মানিকের কথায় তাদের মধ্যে কিছুটা অনুশোচনা লক্ষ করা যায়। বড় ভাইদের ওখানে রেখে মানিক আবার হাটা আরাম্ভ করল। তবে আবুল, বাবুল জানেনা মানিক আজই এই গ্রাম ত্যাগ করবে।
এখন সময় দুপুর গড়িয়ে বিকেলের কাছাকাছি। সূর্যটাও আজ বেশ কড়া তাপ দিচ্ছে। এই স্বপ্নের গ্রাম ত্যাগ করার পূর্বে মানিক গোসল করে মায়ের কবরের সামনে গিয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে মায়ের কবর জেয়ারত করিতেছে।
পরীও কিছুক্ষণের মধ্যে এই গ্রাম থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাবে স্বামীর বাড়ী। যে গ্রামে পরীর জন্ম, যে গ্রামের আলো বাতাশ পেয়ে পরী বড় হয়ে ছিল, আজ থেকে পরী সেই গ্রামের মেহমান। সব আপন মানুষদের ছেড়ে যেতে হবে কেবল স্বামীর জন্য। এ কেমন নিয়ম ? বিদায় ক্ষণে মর্জিনা আর পরীর সাথে রাগ করে থাকতে পারলনা। সেও পরীকে শেষ দেখা দেখতে এসে বলে “সই আজই তুই পরের ঘরে চইলা যাবি। এক লগে কত চলছি, কত গপ্প গুজব করছি, কতই না আপন ছিলি তুই আমার। আমার কতায় তুই যদি ব্যতা কষ্ট পাইয়া থাহোস তয় আমারে মাফ কইরা দিস ! তোর লগে আর আমার কোন দিন দ্যাখা অয় কিনা জানিনা। মানষের কি হায়আত মউয়াতের কতা কইবার পারে। তয় সই, শহরের মানষের মদ্যে তুই নিজেরে নিজে ভুইল্লা যাইস না। তুই হয়তো শহরে গিয়া ম্যালা সই পাইবি কিন্তু একটাও মানিক আর একটাও মর্জিনা পাইবিনা।”
এরপর মর্জিনা কাঁদতে কাঁদতে পরীর গলা জড়িয়ে ধরল।
সন্ধ্যার আগে আগে লঞ্চ ঘাট যাবার জন্য শুভ পরীকে নিয়ে রওহনা দিলেন। পরী স্বামী বাড়ী যাবার আগে উঠানের মধ্যে দাঁড়িয়ে সবার সাথে বিদায় নিচ্ছে। বিদায় ক্ষণে পরীর চোখের জল বাধ দিয়েও ধরে রাখা যাচ্ছে না। সে তার মায়ের গলা জড়িয়ে কেদে কেদে অনেক কথাই বললেন। তার মধ্যে বেশি বলেছেন তার পিতার কোন খোঁজ খবর পাওয়া গেলে অবশ্যই যেন তাকে খবর দেয়। এবং তার মায়ের শরীরের যেন বেশি বেশি খেয়াল রাখেন। অতদূর থেকে তো ঘন ঘন আসা সম্ভব হইবেনা। বছরে দুই এক বার আসবে। তবে পরীর মা আমেনা বেগমও কেদে কেদে পরীকে বলেছে মাঝে মধ্যে যেন টেলিগ্রাম বা চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ রাখে। শুভ এবার বলল “মা আমরা আর দেরি করতে চাই না। সূর্যটা ডুবতে বসেছে। বেলা বেলি না যেতে পারলে লঞ্চ পাবনা।”
পরীর মা শুভর হাত ধরে বলে “বাবা জি, তোমারে তো তেমন কিছু দিতে পারলাম না। তোমার বাপ মায়রে বুঝাইয়া কইও। পরীর বাপের শখ আছিল মাইয়া জামাইরে লঞ্চ ভইরা মাল পত্র দিয়া দিব। পোড়া কপাল আমাগো।”
“না মা তাতে কোন সমস্যা নাই। আমি তো সব নিজের চোখেই দেখলাম। তো চলেন আমাদের ট্রলার পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসবেন।”
পরী, আমেনা বেগম ও মর্জিনা সবাই মিলে পরীকে বিদায় দেবার জন্য ধান সিঁড়ী নদীর ঘাটে আসলেন। পরী এদিক ওদিক তাকিয়েও মানিককে শেষ দেখা দেখতে না পেয়ে সে মর্জিনাকে ইশারা করে মানিককে খেয়া ঘাটে আসতে বলল। মর্জিনা দৌড় দিয়ে মানিকের মায়ের কবরের সামনে গিয়ে দেখে সে মোনাজাত করিতেছে। মর্জিনা খুব ছট ফট করিতে লাগিল কিভাবে মানিককে বলি তারাতারি করার জন্য। এর একটু পরেই মানিক মোনাজাত শেষ করে পিছন ফিরে দেখে মর্জিনা কি যেন বলার জন্য বেশ অস্থির হয়ে আছে। মানিক মর্জিনাকে বলল “কি গো বইন তুমি এমন করতাছো ক্যান ? কি হইছে তোমার।”
“মানিক বাই, তোমার পরী পরের বাড়ী চইলা যাইতাছে। জোলদি খেয়াঘাটে লও। একবার শ্যাষ দ্যাহা দেইখা লও। আর যদি কোন দিন না দেখবার পারো।”
মানিকের মনে মনে এমনটাই ইচ্ছা ছিল। এই গ্রাম ত্যাগ করার আগে পরীকে একবার শেষ দেখা দেখে নেই। এই জন্য মানিক খুব জোরে হাটিয়া মর্জিনার সাথে খেয়া ঘাটে রওহনা দিল। ইতিমধ্যে পরী নানা বাহানায় মানিকের আসা পর্যন্ত ট্রলারকে দেরি করিয়ে রাখছে। শুভ যতবারই বলে সন্ধ্যা হয়ে আসছে তারাতারি ট্রলারে উঠ। পরী ততবারই ভিন্ন রকম অযুহাতে শুভকে দেরি করাচ্ছে। পরী তারপরও চারিদিকে চেয়ে দেখল, মানিক আসে কিনা। এদিকে সূর্যটা স্বার্থপরের মত তরিগরি করে কেবলি পশ্চিমাকাশে ডুবেেছ। পরী ইচ্ছে করলেও আর মানিকের জন্য অপেক্ষা করতে পারছেনা বিন্দু মাত্র। ট্রলারের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে মানিক আর আসেনা। পরীদের ট্রলার ছেড়ে দিল। পরীর দু চোখে থেকে অশ্র” বেয়ে পড়ছে। সে তার মাকে হাত নাড়িয়ে নিঃশব্দে বিদায় দিচ্ছে। শুভদের ট্রলারটি যখন অল্প কিছু দূর চলিয়া গেল তখনি মর্জিনা মানিককে নিয়ে খেয়া ঘাটে এসে দেখল ট্রলারটি তাদের থেকে অনেক দূরে চলিয়া গেছে। পরীর ট্রলারের সামনে বসলেও তাকে স্পষ্ট দেখা যায়না। মানিকের জীবন থেকেও পরী এমনি করে অস্পষ্ট হয়ে গেল। মানিক পরীকে ভূল বুঝে একটি কথাই বলল “আরে মাইয়া মানু, মন দিবি একজনরে আর সংসার পাতবি আর একজনার লগে।”
এরপর মানিক নৌকার পিছু পিছু লম্বা একটি মাটির রাস্তা ধরে হাঁটতে আরম্ভ করল। এই রাস্তা ধরে মানিক চার মাইল হেটে লঞ্চ ঘাটে যাবে। যদিও পরীর নৌকাটি মানিককে ছাড়িয়া অনেক দূরে চলিয়া গেছে তবুও মানিক জোড় পায়ে হাটিতেছে। পশ্চিমাকাশের দিকে তাকাইলে দেখা যায় সূর্যটা গাঢ় লাল হয়ে অস্ত যাইতেছে। কিছুক্ষণ পর পরীদের আর দেখা যায়না, নদীর মধ্যে মিলিয়ে গেছে। খেয়াঘাট থেকে মানিককেও খুব ছোট দেখা যাইতেছে। এক সময় পরীর মত মানিকও হারিয়ে গেল আধারের মাঝে।

প্রিয় নতুন মানুষ পেয়ে তুমি আমায় কি গেছ ভূলে ?
হয়তো তোমার সুখ মন্দিরের দূয়ার গেল খুলে।
আমিই তব সঙ্গী ছিলাম কোন এক কালে
আজ আমায় কি গেছ ভূলে ?
নারী অজানাকে করলে জানা
অচেনাকে করলে চেনা
পরের সাথে হল বনা।
আবার জোৎসনা যখন উঠবে আকাশে
সে থাকবে তোমার পাশে
দু ,জনে হাতে হাত মিশে
তুমি নতুন ঘরে সন্ধ্যা বেলা জ্বালবে গৃহমণি
নয়া ঘরে তুমি, নয়া হংসানন্দীনি…………..

বাংলাদেশ সময়: ১৪:৫৩:১৩   ৪৯০ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সাহিত্য’র আরও খবর


সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন: স্বপন চক্রবর্তী
ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা “আমি তো গাঁয়ের মেয়ে ”
৫০ বছরের গৌরব নিয়ে জাবির বাংলা বিভাগ বিশাল ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উৎসব আয়োজন করেছে
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা- ‘তোমার খোঁজে ‘
অতুলপ্রসাদ সেন: ৩য় (শেষ ) পর্ব-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন;পর্ব ২-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন-স্বপন চক্রবর্তী
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা ” যাবে দাদু ভাই ?”
বাদল দিনে- হাসান মিয়া
ইমাম শিকদারের কবিতা ‘ছোট্ট শিশু’

আর্কাইভ