বঙ্গ-নিউজ: মন্ত্রিসভা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী থেকে আগেই অব্যাহতি পাওয়া লতিফ সিদ্দকীর প্রাথমিক সদস্যপদ বহাল ইস্যূতে কারণ দর্শানোর চিঠির জবাবে পদটি বহাল রাখার মানবিক আবেদন থাকলেও তাতে অনুতাপ-অনুশোচনার লেশমাত্র খুঁজে পাননি দলীয় নেতারা। সবশেষ শুক্রবার আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও তাকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হয়।
শুক্রবার রাতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলটির কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে অংশ নেওয়া একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এর আগে ১২ অক্টোবর রাতে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় তাকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ওই বৈঠকেই লতিফ সিদ্দিকীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তাকে দলের সাধারণ সদস্যপদ থেকেও কেন অব্যাহতি দেওয়া হবে না-এ ব্যাপারে কারণ দর্শাতে সাত দিনের সময় দিয়ে চিঠি দেওয়ার কথা জানান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। শুক্রবারের বৈঠকে লতিফ সিদ্দিকীর সেই চার পৃষ্ঠার চিঠির জবাব পড়ে শোনান সৈয়দ আশরাফ।
বৈঠক সূত্র জানায়, সৈয়দ আশরাফ লতিফ সিদ্দিকীর চিঠির জবাব পড়ে শোনানোর পর দলটির বিভিন্ন সারির নেতারা চিঠির ভাষ্য শুনে নিজ দলীয় এই সাবেক প্রভাবশালী নেতা ও মন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা করেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ও প্রাক্তন আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু বলেন, চিঠির জবাব শুনে আমার কাছে সাবেক আইনমন্ত্রী হিসেবে মনে হচ্ছে, চিঠির বক্তব্যে কোথাও কোন অনুশোচনা-অনুতাপ বা ক্ষমার লেশমাত্র নাই। কিন্তু প্রাথমিক সদস্যপদ টিকিযে রাখতে মানবিক আবেদন জানিয়েছেন।’
বৈঠকের পর দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গণভবনে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও লতিফ সিদ্দিকীকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকীকে আগেই মন্ত্রিসভা এবং দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যপদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও তাকে কেন বহিষ্কার করা হবে না, তা জানতে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। তিনি সে নোটিশের জবাব দিয়েছেন। তবে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের কাছে জবাব সন্তোষজনক মনে হয়নি। এ জন্য তাকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়।’
সূত্র জানায়, বৈঠকে বক্তারা লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যে দল ও সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেন। সংবিধান ও দলীয় গঠনতন্ত্র বাক-স্বাধীনতা দিলেও এমন কোন বক্তব্য বা মন্তব্য করা যায় না-যাতে দেশ, জাতি ও দল বিপদে পড়তে পারে কিংবা ভাবমূর্তি সংকটে পড়তে পারে। লতিফ সিদ্দিকী সংবিধান এবং গঠনতন্ত্রের বাক-স্বাধীনতার উদাহরণ টেনে কাব্যিক কিংবা মাইকেল মধূসূদনীয় উচ্চমার্গীয় ভাষায় জবাব দিয়েছেন। যা উপস্থিত নেতারা বোধগম্য নয় বলেও বৈঠকে মন্তব্য করেন।
সূত্র আরো জানায়, বৈঠকে লতিফ সিদ্দিকী বহিষ্কার ছাড়াও আগামী ২৬ তারিখের হরতাল এবং নীলফামারীর জনসভায় খালেদা জিয়ার বক্তব্য ও ২৬ তারিখে আদালতে হাজিরা নিয়ে আলোচনা করেন নেতারা। বৈঠকে সম্প্রতি স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরীর আন্তর্জাতিক দুটি সংস্থার চেয়ারম্যান এবং সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানানো হয় এবং এই অর্জনে শেখ হাসিনাকেও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৮ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে হজ ও তাবলিগ নিয়ে মন্তব্য করার পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে লতিফ সিদ্দিকীকে নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছিল। নিউ ইয়র্কস্থ টাঙ্গাইল সমিতির ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাত দুটোর ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীর যতটা বিরোধী, তার চেয়ে বেশি হজ ও তাবলিগের বিরোধী।’
বাংলাদেশ সময়: ২২:৪০:৩৮ ৩৭২ বার পঠিত