নিজস্ব প্রতিবেদক:বঙ্গ-নিউজ:শিগগিরই আরেক দফা বাড়ছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব গত ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে দিয়েছে। আর গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব যাচ্ছে চলতি মাসের শেষ দিকে। গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় তা পেট্রোবাংলার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে।
আর এ নিয়ে বর্তমান সরকার ২০০৯ থেকে গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য সাতবার আর পাইকারি পর্যায়ে ৬ দফায় বৃদ্ধি করে। সরকারের গত মেয়াদে গ্যাসের (সিএনজি) দাম বাড়ানো হয় দুইবার।
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিষয়টি স্বীকার করে বিইআরসির চেয়ারম্যান এ আর খান বলেন, পিডিবি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির একটি প্রস্তাব বিইআরসিতে জমা দিয়েছে। তবে আমি এখনো তা বিস্তারিতভাবে দেখিনি। এটা বিচার-বিশ্লেষণ করে পরে জানানো হবে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্য এখনো কোনো প্রস্তাব আসেনি। এ দিকে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব কবে নাগাদ দেয়া হবে সে বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১৮ দশমিক ১২ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। আগামী বছরের জানুয়ারি মাস থেকে প্রস্তাবিত নতুন মূল্য কার্যকর করার আবেদন করেছে পিডিবি।
বিইআরসির সূত্র বলছে, শিগগিরই কমিশন বৈঠক করে বিষয়টি যাচাই-বাছাই করবে। পিডিবির বিদ্যুতের ও পেট্রোবাংলার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব গৃহীত হলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই গণশুনানির মাধ্যমে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে।
সূত্র জানায়, পিডিবির প্রস্তাব অনুযায়ী দাম বৃদ্ধি হলে প্রতি ইউনিট ৪ দশমিক ৭০ টাকা থেকে বেড়ে ৫ দশমিক ৫১ টাকা হবে। বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ পড়ছে ৬ টাকা ৫৪ পয়সা। আর পাইকারি বিক্রি হচ্ছে, ৪ দশমিক ৭০ টাকায়। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে ১ দশমিক ৮৪ টাকা লোকসান হচ্ছে বলে দাবি করেছে পিডিবি।
পিডিবির বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পাইকারিপর্যায়ে যদি বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা না হয়, তবে চলতি বছরে পিডিবির ভর্তুকির পরিমাণ প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। আর যদি প্রস্তাব অনুযায়ী বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়, তবে ভর্তুকির পরিমাণ চার হাজার কোটি টাকায় নেমে আসবে ।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, গ্যাসের দাম বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী। এর ফলে সব ধরনের গ্যাসের দাম আবারো বাড়ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাড়ছে আবাসিক খাতের গ্যাসের দাম। আবাসিক খাতে দুই চুলার েেত্র দাম বাড়বে সর্বোচ্চ ১২২ দশমিক ২২ শতাংশ পর্যন্ত। এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরো বাড়বে।
সূত্র জানায়, আবাসিক খাতে দুই চুলার গ্যাসের বর্তমান দাম ৪৫০ থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হচ্ছে। বৃদ্ধির হার ১২২ দশমিক ২২ শতাংশ। আর গ্রাহকদের এক চুলার েেত্র বর্তমান দাম ৪০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা করা হবে। এ েেত্র দাম বৃদ্ধির হার ১১২ দশমিক ৫০ শতাংশ।
সূত্র জানায়, আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে যারা মিটার ব্যবহার করেন, তাদের েেত্র প্রতি এক হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম বর্তমানে ১৪৬ টাকা ২৫ পয়সা। নতুন প্রস্তাবে এটা ২৩৫ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। বৃদ্ধির হার ৬০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। আবাসিক খাতের পরেই গ্যাসের সবচেয়ে বেশি দাম বাড়বে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনে (বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য মালিকদের নিজস্ব উৎপাদিত)। বর্তমানে এক হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ১১৮ টাকা ২৬ পয়সা। নতুন প্রস্তাবে তা ২৪০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। বৃদ্ধির হার ১০২ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
শিল্পে বর্তমানে প্রতি এক হাজার ঘনফুটের দাম ১৬৫ টাকা ৯১ পয়সা। এটা বেড়ে হচ্ছে ২২০ টাকা। বৃদ্ধির হার ৩২ দশমিক ৬০ শতাংশ। বাণিজ্যিক গ্রাহকদের েেত্র বর্তমান দাম ২৬৮ টাকা ৯ পয়সা, এটা হচ্ছে ৩৫০ টাকা। বৃদ্ধির হার ৩০ দশমিক ১৬ শতাংশ।
সিএনজি খাতে গ্যাসের প্রতি হাজার ঘনফুটের দাম এখন ৬৫১ টাকা ২৯ পয়সা। এটা বেড়ে হচ্ছে ৯০৫ টাকা ৯২ পয়সা। বৃদ্ধির হার ৩৯ দশমিক ১০ শতাংশ। চা-বাগানে ব্যবহৃত গ্যাসের বর্তমান দাম ১৬৫ টাকা ৯১ পয়সা। এটা করা হচ্ছে ২০০ টাকা। বৃদ্ধির হার ২০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে গ্যাস দেয়া হয় বর্তমানে সে রকম প্রতি এক হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ৭৯ দশমিক ৮২ টাকা। এটা হচ্ছে ৮৪ টাকা, বৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। সার উৎপাদনে বর্তমানে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ৭২ দশমিক ৯২ টাকা। এটা বৃদ্ধি পেয়ে হবে ৮০ টাকা। বৃদ্ধির হার ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, এবারই প্রথম দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে সম্পদ হিসেবে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ২৫ টাকা ধার্য করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এই প্রস্তাবেও অনুমোদন দিয়েছেন। এর ফলে বাপেক্সসহ বিভিন্ন গ্যাস উত্তোলনকারী কোম্পানি যে গ্যাস উত্তোলন করে, তার ওপর এই দাম ধার্য হবে। এর আগে উত্তোলিত গ্যাসের জন্য কোম্পানিকে কোনো দাম দিতে হতো না। এই অর্থ রাষ্ট্র পাবে।
বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন ওনার্স আ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন নয়ন জানান, গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব পেট্রোবাংলা দেয়ার পর আমরা বিইআরসির গণশুনানীতে অংশ নিয়ে গ্যাসের দাম সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখার পক্ষে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরব। আমাদের ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ের চেষ্টা থাকবে।
তিনি বলেন, মূল্যবৃদ্ধি একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া তবে তা সমন্বয় থাকা দরকার। আমরা চাই গ্যাসের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকার একটা ভারসাম্য রাখবে।
২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি সরকার সর্বশেষ জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছিল নির্বাহী আদেশে। আর গ্যাসের দাম সর্বশেষ বাড়ানো হয় ২০০৯ সালের ১ আগস্ট। গত মেয়াদে সরকার সিএনজি গ্যাসের দাম দুই দফা বাড়িয়েছিল। ওই সময়ে সিএনজির দাম দ্বিগুণ করে সরকার। ২০১০ সালের ৪ মে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস ১৬ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর একই সালের ১৯ সেপ্টেম্বর আবার ২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয় গ্যাসের দাম। তবে আবাসিক গ্যাসের ক্ষেত্রে বাসাবাড়িতে দুই চুলা সাড়ে ৪০০ টাকা এবং এক চুলা ৪০০ টাকা অনেক আগেই নির্ধারণ করা ছিল।
বাংলাদেশ সময়: ০:৪০:১৫ ৬১৯ বার পঠিত