বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃবাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়ালের পাশে জীবনবীমা ভবন গলিতে ১০০ টাকা, ৫০০ টাকা ও এক হাজার টাকার কোটি কোটি টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। পথচারীরা কুড়িয়ে নিচ্ছে এসব কাটা টাকা। এ টাকাগুলো পোড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের মহানিরাপত্তা এলাকায় সংরক্ষিত ছিল। কে বা কারা এ টাকা ফেলে রেখে গেছে তা কেউ জানে না। কিভাবে এ কাটা টাকা বাইরে এলো সে সম্পর্কে স্বয়ং বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিনির্ধারকও বলতে পারছেন না। এর আগে ভোলার একটি গ্রামে তিন বস্তা কাটা টাকা পাওয়া যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণা একটি অসাধু চক্র এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। তারা ছেঁড়া টাকার সাথে জোড়া লাগিয়ে আবার বিনিময় করতে পারে। আবার কারো কারো ধারণা, এসব টুকরো টাকার সাথে প্রচলনযোগ্য নোটও যে বের হয়ে আসেনি তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
গতকাল বিকেলে সরেজমিন ওই গলিতেই কাটা টাকার টুকরো ছড়িয়ে ছিটে পড়ে থাকতে দেখা যায়। উৎসুক জনতা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা দেখছে। বড় পলিথিনে ভরা এসব কাটা টাকার টুকরো এ রাস্তায় যেখানে সেখানে পড়ে থাকতে দেখা যায়। ময়লা কুড়াতে আসা জোসনা বেগম জানান, তিনি কয়েক বস্তা এসব কাটা টাকার টুকরো দেখতে পেয়েছেন। রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল আরো টুকরো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জীবন বীমার এক কর্মচারী জানান, সকাল থেকেই জীবন বীমা অফিসের সামনে ও পেছনের রাস্তায় কোটি কোটি টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখেছেন তিনি। ভোরে কে বা কারা কয়েক বস্তা ১০০ ও ৫০০ টাকা নোটের গোল গোল করে কাটা অংশ ফেলে গেছে। তিনি কয়েকজন কাগজ কুড়ানো ব্যক্তিকে তা বস্তায় ভরে নিয়ে যেতে দেখেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ত্রুটিপূর্ণ যেসব নোট বাংলাদেশ ব্যাংক জনগণের কাছ থেকে গ্রহণ করে সেগুলো সাধারণত পাঞ্চিং মেশিন দ্বারা ছিদ্র করে পোড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের মহানিরাপত্তা এলাকায় সংরক্ষণ করে রাখা হয়। পরে তা নির্ধারিত দিনে পোড়ানোর কথা। কিন্তু এসব টুকরো বাইরে আসার কথা নয়। কিভাবে এলো তাও তারা জানেন না।
সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি গভর্নর মো: আবুল কাসেমকে এ বিষয়ে দৃষ্টি অকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, এসব টুকরো টাকা বাইরে যাওয়ার কথা নয়। সাধারণত পোড়ানো হয়। কিভাবে গেল তা তিনি জানেন না। তবে তিনি এ বিষয়ে কারেন্সি বিভাগের কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
কারেন্সি বিভাগেই এর আগে দায়িত্বে ছিলেন মো: সাইফুল ইসলাম খান। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক। গতকাল তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আগে এসব ত্রুটিপূর্ণ নোট হার্ডবোর্ড মিলে দেয়া হতো এ জন্য নির্ধারিত ঠিকাদারের মাধ্যমে। এখন তারা এসব নোট নিচ্ছে না। ফলে এখন তা পোড়ানো হচ্ছে। কিন্তু বাইরের খোলা জায়গায় কোনোভাবেই ফেলে দেয়া হবে না। কিভাবে তা সেখানে গেল সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
এ বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক মো: হাবিবুর রহমানের সাথে। তিনিও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান। এগুলো পোড়ানো হয়। তিনি বলেন, এসব টাকা কোনোভাবেই বাইরে যাওয়ার কথা নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ত্রুটিপূর্ণ নোটবিনিময় করতে আগে নোট রিফান্ড রেজুলেশন ১৯৭৬ অনুযায়ী চলত। এ নীতিমালা অনুযায়ী কোনো নোটের অর্ধেকের বেশি বিদ্যমান থাকলেই তা শতভাগ বিনিময় মূল্য দেয়ার রীতি ছিল। এ সুযোগে ছেঁড়া টাকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে থেকে একটি চক্র একই নোট কেটে তা দু’টি থেকে তিনটি নোটে রূপান্তর করে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিত। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে রিটের মাধ্যমে একটি মামলা করে জনৈক ব্যক্তি, যা পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংক নোট রিফান্ড রেজুলেশন ২০১২ পরিবর্তন করে। তবে এখানেও অনেক ফাঁকফোকর রয়েছে। যেমনÑ কোনো নোট যদি ৯১ শতাংশ থাকে তাহলে শতভাগ বিনিময়মূল্য দেয়া হবে। এখানে ৯ শতাংশ বেশি দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। আবার কোনো নোট ৮৯ শতাংশ থাকলে সেখানে ৭৫ শতাংশ বিনিময়মূল্য দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। এখানে উপস্থাপিত অংশের ১৪ শতাংশ কম দেয়া হলো। আবার কোনো নোট যদি ৭৫ শতাংশের কম থাকে অর্থাৎ ৭৪ শতাংশও থাকে তাহলে ৫০ শতাংশ বিনিময়মূল্য দেয়া হবে। ওই কর্মকর্তার মতে, ৯১ শতাংশের নিচে অবশিষ্ট রয়েছে এসব নোটের সাথে সমমানের একটি নোটের টুকরো অংশ জোড়া লাগিয়ে শতভাগ বিনিময়মূল্য নিয়ে থাকে। এভাবেই টুকরো নোটগুলো বাইরে আসতে পারে।
অপর এক কর্মকর্তা জানান, টুকরো নোটের সাথে যে টুকরো ছাড়া অন্য নোট যে বের হয়ে আসেনি এরই বা নিশ্চয়তা কি। তিনি জানান, এসব নোট বের হওয়ায়ই প্রমাণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা কোনো পর্যায়ে নেমেছে।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৪২:২০ ৪৭৭ বার পঠিত