নিউইয়র্ক: আমেরিকার খ্যাতিমান দার্শনিক নোয়াম চমস্কি ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে সম্প্রতি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ভোটের আয়োজনের প্রশংসা করেছেন। তিনি ফিলিস্তিনের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতিরও কঠোর সমালোচনা করেন।আমেরিকান প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী নোয়াম চমস্কি মঙ্গলবার জাতিসংঘের একটি কমিটিকে বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আবশ্যই তার নিজস্ব আইন অনুযায়ী কাজ করতে হবে, যদি তারা সত্যিকার অর্থে ইসরাইল-ফিলিস্তিন শান্তি প্রচেষ্টায় সাহায্য করতে চায়।’
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ ফিলিস্তিন জনগণের অবিচ্ছেদ্য অধিকার নিয়ে জাতিসংঘ কমিটির সভায় একদল শ্রোতাকে চমস্কি বলেন, ‘যদি আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হয় তবে এটি অবশ্যই একটি চমৎকার ঘটনা হবে। হতে পারে এতে একটু বেশিই চাওয়া হয়েছে।’
‘ফিলিস্তিন জনগণের সঙ্গে সংহতির আন্তর্জাতিক বছর’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে তিনি বলেন, ওয়াশিংটনকে আবশ্যই ‘লেইয়ি আইন’ অনুসরণ করতে হবে যেখানে বলা হয়েছে ক্রমাগত মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত এমন সামরিক বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ যাবে না।’
লেইয়ি আইন বা লেইয়ি সংশোধনী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি মানবাধিকার আইন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র এবং প্রতিরক্ষা দপ্তর থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত কোনো বিদেশি সামরিক ইউনিটকে সামরিক সহায়তা প্রদানকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইনটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক সেনেটর ভারমন্ট প্যাট্রিক লেইয়ির নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ইসরাইলি সেনাবাহিনী যে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। এর অর্থ হচ্ছে ইসরাইল মার্কিন অস্ত্র দিয়ে মার্কিন আইনেরই লঙ্ঘন করছে।’
ইসরাইল ঐতিহ্যগতভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং বছরের পর বছর ধরে তারা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আমেরিকান আর্থিক এবং সামরিক সহায়তা পেয়ে আসছে।
ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের ভবিষ্যত সম্বন্ধে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘দুই রাষ্ট্র সমস্যা সমাধানের একটি বাস্তবসম্মত ফলাফল না আসলে, এটি স্পষ্ট দৃশ্যমান হচ্ছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইসরাইল বর্তমানে যে তাণ্ডব চালাচ্ছে ভবিষ্যতেও ঠিক তেমনটিই করতে থাকবে। এ সমস্যার একমাত্র সমাধান হচ্ছে ইসরাইল রাষ্ট্রের পাশাপাশি ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি।’
তিনি আরো বলেন, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে জাতিসংঘ একটি পদক্ষেপ নিতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার শক্তিশালী জোট আপত্তি করলেও জাতিসংঘ যতটা সম্ভব তার ক্ষমতা ইচ্ছে করলে প্রয়োগ করতে পারে।
ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের শিকড় ১৯১৭ সাল থেকে যখন ব্রিটিশ সরকার বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদিদের জন্য একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়।
১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের সময় ইসরাইল পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীর দখল করে নেয়। ১৯৮০ সালে অঞ্চলটিকে স্বঘোষিত ইহুদি রাষ্ট্রের রাজধানী হিসাবে ঘোষণা করা হয় যদিও তাদের এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় স্বীকৃতি দেয়নি।
ফিলিস্তিনিরা পূর্ব জেরুজালেম, গাজা ভূখণ্ড এবং পশ্চিম তীর নিয়ে তাদের নিজস্ব রাষ্ট্র দাবি করে আসছে। বর্তমানে ইসরাইল পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীর দখল করে সেটিকে তার রাজধানী হিসাবে ব্যবহার করছে।
যুদ্ধোত্তর আমেরিকান দর্শনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব চমস্কি বলেন, বর্ণবাদ যুগে দক্ষিণ আফ্রিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের উপর যে অমানবিক অত্যাচার চালানো হয়েছিল ফিলিস্তিনেও ঠিক তেমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা তার কালো মানুষের উপর নির্ভরশীল। জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশই ছিল এই কালো মানুষ এবং তারা ছিল দেশটির মূল চালিকাশক্তি।
ফিলিস্তিনের প্রতি ইসরাইলের অবস্থানকে তিনি বলেন, ‘তারা তাদের সঙ্গে মিশতে, তাদের সঙ্গে কোন কাজ করতে চান না। যদি তারা বাঁচে, ভাল; যদি তারা মরে, সেটা আরো ভাল।’
বর্ণবাদ নীতির ভিত্তিতে পরিচালিত হত দক্ষিণ আফ্রিকার সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে সম্পর্ক। শ্বেতাঙ্গ সমর্থিত সরকার কৃষ্ণাঙ্গদের জাতিগতভাবে পৃথকীকরণের মাধ্যমে তাদের উপর রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যে সৃষ্টি করেছিল।
চমস্কি বলেন, ফিলিস্তিনের ব্যাপারে ইসরাইলের নীতি ঔপনিবেশিক নীতির অনুরূপ।
তিনি বলেন, একটি আদর্শ নব্য ঔপনিবেশিক প্যাটার্নে, ইসরাইল ফিলিস্তিনের অভিজাত এলাকা রামাল্লায় চমৎকার রেস্টুরেন্ট, থিয়েটার এবং অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমতি প্রদান করে। ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার নেতৃতীয় বিশ্বের প্রতিটি দেশের সাথে এমন আচরণ করা হত। তেমন একটি ছবিই এখন চোখের সামনে উদ্ভূত হচ্ছে।’
সূত্র: ওয়ার্ল্ড বুলেটিন
বাংলাদেশ সময়: ২৩:০৫:৪৮ ৩৯৩ বার পঠিত