বঙ্গ-নউজ ডট কম:চট্টগ্রাম আদালত ভবন এলাকায় তল্লাশির সময় বাজারের থলেভর্তি প্রায় ৫৮ লাখ টাকা উদ্ধারের পর জেলা প্রশাসনের ভূমি অফিসে লাখ লাখ টাকা ঘুষের লেনদেনের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। শতকোটি টাকার একটি ভূমির অবৈধ মালিকানা নিশ্চিত করতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় ঘুষ হিসেবে এই ৫৮ লাখ টাকা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
এই বৃহৎ অঙ্কের ঘুষের লেনদেনের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের কতিপয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও জড়িত রয়েছেন বলে সূত্রে জানা গেছে। তবে ঘুষের টাকাসহ আটক মো. ইলিয়াছকে (৩৩) প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিভিন্ন তথ্য জানতে পারলেও এ ব্যাপারে মুখ খুলছে না পুলিশ।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। নানা অজুহাতে পুলিশ সাংবাদিকদের এড়িয়ে যাচ্ছে।
এদিকে ৫৮ লাখ টাকার উৎস ও গন্তব্য সম্পর্কে জানতে পুলিশ টাকাসহ আটক ইলিয়াছকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেছে। আজ বৃহস্পতিবার এই রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রাম আদালত ভবন এলাকায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের জমি অধিগ্রহণ শাখায় ‘ঘুষ হিসেবে’ ওই টাকা নিয়ে যাচ্ছিলেন বাহক ইলিয়াছ। বড় অঙ্কের এই ঘুষের টাকার ধৃত ইলিয়াছ বাহকমাত্র। এর সঙ্গে বড় বড় রাঘববোয়াল জড়িত থাকতে পারে। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে পূর্ণ রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হবে।
অনুসন্ধান করে জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অফিসে প্রতিদিনই লাখ লাখ টাকার ঘুষের লেনদেন হয়। কতিপয় সার্ভেয়ার, কানুনগো এবং নিম্নপর্যায়ের কর্মকর্তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পক্ষে এই ঘুষের লেনদেন করেন। অনেকটা ওপেন সিক্রেট ঘুষের লেনদেন চলে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায়। গত মঙ্গলবার সকালে বোমার খবরে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের নিরাপত্তা জোরদার করে তল্লাশি চালাতে গিয়ে ৫৭ লাখ ৯২ হাজার টাকাসহ মো. ইলিয়াছকে আটক করে পুলিশ।
পুলিশের তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই টাকা জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ বিভাগের সার্ভেয়ার শহীদুল ইসলাম মুরাদের কাছে নিয়ে যাচ্ছিল বলে ইলিয়াছ জানিয়েছিলেন।
অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামের শতকোটি টাকার একটি ভূমির অবৈধ মালিকানা নিশ্চিত করতে কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে এক কোটি টাকা ঘুষের লেনদেনের চুক্তি হয়েছিল জেলা প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তার। এই ঘুষের প্রথম কিস্তির ৫৮ লাখ টাকা নিয়ে যাচ্ছিলেন বাহক ইলিয়াছ। ভূমি অফিসে এই মোটা অঙ্কের ঘুষের লেনদেনের বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে পুরো জেলা প্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। গত বুধবার এই ঘটনায় জেলা প্রশাসনের দুই কানুনগো ও সাত সার্ভেয়ারকে বদলি করে এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবুল হোসেনকে।
বুধবার শাস্তিমূলক বদলি হওয়া দুই কানুনগো ও সাত সার্ভেয়ারের মধ্যে সার্ভেয়ার শহীদুল ইসলাম মুরাদকে বান্দরবান জেলায়, মো. নুর চৌধুরীকে রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় ও মুজিবুর রহমানকে বান্দরবান জেলায় বদলি করা হয়েছে।
টাকা উদ্ধারের ব্যাপারে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের দক্ষিণ জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার মনজুর মোরশেদ বলেন, ‘টাকার উৎস সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য আমরা এখনো পাইনি। ধৃত ইলিয়াছ একেক সময় একেক তথ্য দিচ্ছে। টাকাগুলো কার, কোথা থেকে আনা হয়েছে, কার কাছে কেন যাচ্ছে- এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কোনো তথ্য দিচ্ছে না সে।’
এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, টাকা আটকের ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোহাম্মদ কামরুজ্জামান আটক ইলিয়াছকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেছেন। বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে রিমান্ড মঞ্জুর হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর টাকার রহস্য উন্মোচিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১:০৮:৪২ ৪২১ বার পঠিত