পঞ্চম পর্ব শুরু……………….. রাখতে চাইলোনা। কিছুদিন পরেই বাবার বাড়ী পাঠিয়ে দিয়েছে। কইতুরির বিবাহের সময় দলু যে মানুষের কাছ থেকে ধার করেছিল আজ প্রায় দেড় বছর অতিক্রম করে চলেছে কিন্তু দলু তা পরিশোধ করিতে পারেনি। তবে দেড় বছরের ব্যবধানে অনেক পাওনাদার ব্যাক্তিই তাদের টাকা পাবার আশা ছাড়িয়া দিয়াছে। কিন্তু ইব্রাহিম এখনও সে টাকার স্বপ্ন দেখে। সে দলুর দেওয়া ওয়াদা মত ঠিকই তাগাদায় আসে। ইব্রাহিম এই গাঁয়েরই ছেলে। বয়স খুব একটা বেশিনা। সে পরীদের বাড়ীর পাশে ছোট একটা কুড়ো ঘরে থাকে। শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই বলে লোকে তাকে অত বড় নামে ডাকতে চায়না, তাই সহজ করে এবরা বলেই ডাকে। এবরা নামে তার কোন আপত্তি লক্ষ্য করা যায়না। কইতুরির বিবাহের সময় সে কিছু টাকা দলুকে ধার দিয়েছিল। সে টাকা পাবার আশায় ইব্রাহিম আজও দলুর বাড়ীতে তাগাদায় এসেছে। দলু ঘরের জানালা থেকে ইব্রাহিমকে দেখে আড়ালে লুকিয়ে তার কন্যাকে মিথ্য বলতে শিখিয়ে দিয়াছে। ইব্রাহিম বাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে দলু কাক্কুা ও দলু কাক্কু বলে ডাকতে লাগল। কিছুক্ষণ পর ঘরের ভিতর থেকে কইতুরি বেরিয়ে এসে বলল “এবরা বাই, বাজানে তে বাড়ীত নাই।”
“কাক্কু গ্যছে কই ? আইজ তো আমারে আইতে কইছিলো।”
“আইজ ই আইতে কইছে!”
“হ। বিষ্যুদ বারই আইতে কইছে আমারে।”
“দ্যহো এবরা বাই, বিষ্যুদ বার কি আইজ কাই শ্যাষ। আর আইবনা জীবনে। বাজানে কয় দিন ধইরা অসুস্থ। কাম কাইজ ঠিক মতো করতে পারেন। তোমার দেনা পাওনা কেমনে শোধ করবো। এক দুইশো ট্যাকার ব্যাপার অইতো, জোলদি জোলদি দিয়া দিতাম। পাঁচ পাঁচটা হাজার ট্যাকার কতা। ধান টান পাকুক, পরে না অয় বাজানরে কমু ধীরে ধীরে তোমার পাওনা শোধ কইরা দিতে।”
“ঠিক আছে, মোনে থাহে য্যান। দ্যড় বছোর ধইরা ঘুরাইতেছো।”
এরপর ইব্রাহিম আর কোন কথার উত্তর না করিয়া আপন কাজে চলিয়া গেল। ইব্রাহিমের হাটার দুরত্ব লক্ষ্য করিয়া কইতুরি তার পিতাকে ডাকিয়া বলে “বাজান এবরা বাই গ্যছে। ধানের গোলার মধ্যেদিয়া বাইর হও।”
দলু ধানের গোলার মধ্য থেকে বের হয়ে নিজ শরীরের ময়লা মুছতে মুছতে কইতুরির সামনে এসে বলে “এক্কেবারে বেহায়য়া পোলা। কয়ডা ট্যাকা পাইবো হের লাই¹া বাড়ীতে আওন লাগে। লাজ লজ্জা কিচ্ছু নাই। পাওনা দারের দারে এমন কইরা ট্যাকা তাগাদায় আইতেও একটু শরম লাগেনা।”
কইতুরি তার পিতার সামনে থেকে উঠানে গিয়ে গোবর দিয়ে তৈরী তিন রকমের ক্ষড়ি ঘরে তুলল। গ্রামের মধ্যে যারা খুব গরিব, ক্ষড়ি কেনার সমর্থ নাই তারাই কেবল এসব গোবরের তৈরী জ্বালানি ব্যবহার করে থাকে। গ্রামের ছোট ছোট বাচ্চারা সকাল হলে দল বেধে মাঠ ঘাট থেকে পলি ব্যাগে গোবর সংগ্রহ করে। অভাব অনটনের সংসার বলে এসব ছেলেমেয়েদের পিতামাতারা তাদের দিয়ে বিদ্যা অর্জন করাতে চায়না। আর যাও আলতাব মাষ্টারের পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষার জন্য যায় তাহাদের বয়সও পনের ষোলর কম হবেনা। গ্রীষ্মকালে পাঠশালাটা জমে উঠলেও বর্ষাকালে ছাত্র-ছাত্রীর আর খোঁজ মিলেনা। গ্রামের মাটির রাস্তা গুলোতে বর্ষাকালে এক হাঁটু কাঁদা থাকায় পাঠশালায় কেহই বিদ্যা অর্জন করতে আসতে পারেনা। বিভিন্ন সমস্যার কারণে এ গাঁয়ের কারোরই বিদ্যা অর্জন করা হয়নি। এক কথায় পুরো গ্রামের মানুষই অশিক্ষিত। পাঠশালায় পড়ে যারা যতটুকো শিক্ষা অর্জন করে তার চেযে বেশি কুশিক্ষাই অর্জন করে।
পরী আজ সন্ধ্যায় বাঁশ বাগানে আবার মানিকের সঙ্গে দেখা করতে যাবে বলে বাড়ীর আনাচে কানাছে ঘুরছে। পরী তার মাকে খুব ভয় করে। আমেনা বেগম এই সাঁঝের বেলায় কোন দিনই বাড়ীর বাহিরে যেতে অনুমতি দেবেনা। সূর্য ডুবিয়া মাগরিবের আযান দিয়েছে মাত্র। পরীর মনের মধ্যে দুঃশ্চিন্তার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। ঘন ঘন বাড়ীর সামনে পাইচারি করতে দেখে পরীর মায়ের বেশ সন্দেহ হল। পরীর মা পরীকে ধমক দিয়ে বলল ” যা ঘরে যা, কি অইছে তোর। তুই এ্যমন করতাছোস ক্যান।”
পরী সেও কম চালাক নয়। সে তার বুদ্ধিমত্তা দিয়েই সব কথায় কাজে জিতে যায়। সে আজও তার মাকে বোকা বানানোর জন্য আমতা আমতা করে বলল “মা-কয় দিন আগে তুমি বাপজানরে রাগ হইয়া কইছালা না, বাপজানের হাত য্যন লাই¹া যায়। তাই অইছে মা তাই অইছে।”
“কি কস ? মাগরেবের সোমায় নামাজ পড়মু তুই এইগুলা কি কইলি। আমি তো রাগের মদ্যি কইছি। তোর বাজানে এহন কোতায় ”
“মা ত্যমন কিছু অয়নায়। তয় অনেক কিছু অইতে পারতো। তুমি গিয়া নামাজ পইড়া দোয়া করো। আমি দেহি বাজানে আয় কিনা।”
“হ তাই যাই। ও আল্লা কি কইলাম কি অইলো।”
কিছুদিন আগে পরীর মা তার স্বামীকে রাগের মাথায় গালাগাল করেছিল। পরী সে সব কথা মনে রেখে আজ উপযুক্ত সময় তা থেকে গল্প তৈরী করে আজকের মত মানিকের সাথে দেখা করার একটা সুযোগ তৈরী করে নিল। তবে পরীর পিতার যে কতটুকো বা কোন হাতে আঘাত পেয়েছে তাহা কিন্তু একদম অজানা নয়। আজ দুপুরে কাস্তের সাথে সামান্য র্ঘষণে তার পিতার হাতের বুড়ো আঙ্গুলটি সামান্য কেটে গেছে বলে পরী নিজেই কাপড়ের টুকড়ো দিয়ে বেধে দিয়াছে। এই ঘটনাটিই তার মায়ের কাছে এমন করে সাজিয়ে বলল যে বিশাল একটি ব্যাপার হয়েছে। কোন মতে মাকে ফাঁকি দিয়ে পরী বাঁশ বাগানের উদ্দেশ্যে পথ চলা আরম্ভ^ করলো। কিছুদূর যাবার পর হঠাৎ তার পিতা কদম আলীর সাথে দেখা হল। কদম আলী তাহার কন্যকে দেখিবার মাত্র বলল “পরী মা কই যাও ?”
“বাজান মানে……”
“কি অইছে আমারে কও ।”
পরীর জন্য পরিবেশ পরিস্থিতি এমনি নির্মম হইয়া দাঁড়াইছে যে পুনরায় মিথ্যার আশ্রয় ছাড়া আর কোন পথই খোলা নাই। সে আবার ও বানিয়ে মিথ্য বলা আরম্ভ^ করলো। পরীর পিতা জ্বীনে ভুতে আছর করা মানুষদের খুব ভয় করে। তাই পরীও বলে দিল “বাজান, মায়রে শয়তানে পাইছে। সবের ডাইন হাতের আঙ্গুলে কইসা কামোর দ্যয়। তোমার তো এমনেই ডাইন হাতের আঙ্গুলে দুখ আছে।”
“কি কও ? (ভয় ভয় কন্ঠে)এই এই পরী মা এহন কি অইবো।”
“বাজান তুমি ঢড়াইওনা। আমি চান্দু হুজুরের বাড়ীত যাইতাছি। পানি পড়া নিয়া আইয়া মায়রে খাওয়াই দিলেই মায় ভালা অইয়া যাইবো।”
“যা যা জোলদি যা। সাবধানে যাইস।”
পরী তার মনের মানুষের সাথে দেওয়া কথা রাখার জন্য এত সব নাটক করলো। সে জানেনা আজ বাড়ী ফিরলে কি হবে। সব বাধাকে উপেক্ষা করেও পরী বাঁশ বাগানে আসলো। মানিক আগেই এসে পরীর জন্য অপেক্ষা করতে ছিল। তাদের মধ্যে প্রেম সম্পর্ক হবার আগেও তারা বেশ সহজ ভঙ্গিমায় কথা বলেছে। কিন্তু আজ তাদের কি হলো ? দু জন দুজনার খুব কাছে দাঁড়িয়েও তারা কথা বলার মত কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছেনা। দিনের কড়া তেজি সূর্যটা আধাঁরের কোলে ঢলে পড়েছে। চারিদিকটা বেশ নিরব। জোছনা রাত। সন্ধ্যা হবার পর পরই আকাশের বুকে চাঁদ ঠাঁই করে নিয়েছে। তখন এমন একটি সময় যখন কোন নর নারীর মধ্যে প্রেম নামক পবিত্র সত্তাটি না জাগিয়া পারেনা। মানিক প্রথমে পরীকে কয়েক বার নাম ধরিয়া ডেকে বলল “পরী, পরী। সরম পাইতাছো।”
মাথা নাড়িয়া পরী না সূচক কথাটি বুঝাইলো। মানিক পুনরায় বলল
“পয়লা পেমে একটু আকটু শরম পাইলে তাতে দোসের কিছু নাই। তয় আইজ আমার জন্মো সার্থক অইলো। তোমার মতো একজনরে ভালাবাসতে পাইরা আমার কিযে আনন্দ লাগতাছে। পরী একবার কইবা ঐ কতাডা।”
“কোন কতাডা।”
“তুমি আমারে যা বাসো এইটা একটু পেমের ভাষায় কও।”
“সব কতা কি মুখে কওন যায়। তুমি বুঝোনা আমার মোন কি কইতে চায়। আর ভালবাসার কতা আগে পুরুষ মানষেই কয়।”
পরী এত কথা বলার পরও সে লজ্জায় নীচের দিকে তাকিয়ে আছে। মানিক এই ব্যাপারটি লক্ষ্য করিয়া পরীর মুখমন্ডলের শেষাংশে হাত দিয়ে জাগিয়ে বলল ” আমি তোমারে আমার জীবনেরও চাইতে বেশি ভালবাসি। আমারে কোন দিন ছ্যকা দিয়া যাইবানাতো। সেই দিন আর আমি হয়তো এই পৃথিবীতে বাইচ্ছা থাকমু না। এই ছোট্ট জীবনে তোমারে ভালা বাইসাই বাঁচতে চাই। আমার আর কিছু চাওয়া পাওয়ার নাই।”
“কি কইলা তুমি ? আমি কিন্তু তোমার কতায় কষ্ট পাইছি চাষী ! মাইয়া মানষে একবার যারে মন দেয় কোন কিছুর বিনিময়ে সে মন আর ফেরত নেয় না। এই রকমের কাম পুরুষ মানষে করে।”
কিছুক্ষণ পর পরী আবার বলল “এক্ষন থাইক্কা রোজ আমার লগে দ্যহা করবা। আর আমারে মন ভইরা ভালাবাসবা।”
“হ ভাসমু। আমার জীবনের সব ভালবাসা আমি তোমারে দিয়া দিমু। কাইল আমি হাডে যামু তোমার লাইগা কি আনমু ?”
“তোমার যা মোনে লয় তাই আনবা। আইজ বাড়ী যাই। বাপ মায়রে কত মিত্তা কতা কইয়া আইছি, আল্লায়ই জানে বাড়ী গ্যালে কি অয়।”
“এত তারাতারিই যাইবা ? আর একটু থাহনা। তোমারে দুই নয়ন ভইরা আর একটু দেইখা লই।”
“বেশি দেইখনা। তাইলে নিকার পর আর আমারে দেখতে ইচ্ছা করবোনা।”
পরী আর অপেক্ষা করলোনা। সে বাড়ীর উদ্দেশ্যে ছুটলো। সে যে বাড়ীতে সমস্যার বীজ বুনে রেখে এসেছে তাই নিয়ে পরীর বাড়ীতে শুরু হল এক তুলকালাম কান্ড। পরীর পিতা আবার জীন ভূতে আছর করা রোগীদের সে খুব ভয় করে। সন্ধ্যার সময় কদম আলী বাড়ীতে ফিরে চুপ চাপ বারান্দার ছোট একটা চৌকিতে শুয়ে শুয়ে পরীর জন্য অপেক্ষা করছে। পরী কখন আসবে। পরী কখন আসবে চান্দু হুজুরের বাড়ী থেকে ফু দেওয়া পানি নিয়ে।
পরীর মা রাগের মাথায় হয়তো তার স্বামীকে অভিশাপ দিয়েছিল কিন্তু তা যে হারে হারে ফলে যাবে তা সে বুঝতে পারেনি। মাগরিবের নামাজের পর পরীর মা গুন গুনিয়ে কেদে কেদে আল্লাহর দরবারে পানা চাইতেছে। সময়টা এখন মাগরিব বাদ। চারিদিকে হালকা অন্ধকার, বাড়ীর আসে পাশের ঝোপ ঝার হতে ঝিঁ ঝিঁ পোকার কিট কিট শব্দ ভেসে আসছে। কদম আলী বারান্দার চৌকিতে শুয়ে শুয়ে জিকির করতে করতে হঠাৎ এক সময় কাশি দিলেন। সে কাশির শব্দ পরীর মায়ের কানে যাওয়া মাত্র “কেডা, বারিন্দায় কেডা কাশে ”
কদম আলী একদম চুপচাপ।
নামাজের পাটি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হাতে কুপি নিয়ে ভেতরের ঘর থেকে আসতে আসতে, কদম আলী ভয়ে আরো শক্ত হয়ে গেল আর বলতে লাগল পরীর মায়তো আমার দিকেই আইতাছে, জ্বীন ভূতে আসর করা মানু কহন কি করে কে জানে, না আমারে একলা পাইয়া আবার ঘার মটকায়। আল্লাগো আমারে এই কিস্তি বাঁচাও !
আমেনা বেগমও কুপির আগুনে তার স্বামীর মুখ খানা হালকা দেখিতে পাইয়া বড় আফসোস করিয়া কদম আলীর ব্যথা হাতটি জড়িয়ে ধরতে গেছে। কদম আলী আগ পাছ না ভাবিয়া পরীর কথাকেই বিশ্বাস করিয়া ওরে আল্লাগো বলিয়া বারান্দার জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে কলেমা পড়তে পড়তে দৌড় দিল।
সন্ধ্যার অন্ধকারটা একটু গাঢ় হতে না হতেই গ্রামের ছিচকে চোরগুলো তাদের ধান্দা করিতে বেরিয়ে পড়েছে। জলমিয়ার গত দুদিন থেকেই এক ছড়া বিচি কলার দিকে নজর দিয়ে রেখেছে। গাছের মালিক আবার কদম আলী। জলমিয়া ঐ কলার ছড়া চুরি করার জন্য গাছের আসে পাশে কেবলি ঘুর ঘুর করিতেছে। এমন অবস্থায় কলা গাছে কলা হয়েছে গাছটি না কাটিয়া কলার ছড়াটি নামাইবার কোন উপায়ই নাই। কলা গাছটির পাশেই রহিয়াছে একটি ময়লা পানির ডোবা যে ডোবার পানিতে কেবলি ময়লাই না মানুষের উচ্ছিষ্টও ফেলা হয়। জলমিয়া কলা গাছে বেয়ে উঠবে তার জন্য পড়নের লুঙ্গিটাকে পেচিয়ে নেংটি করে নিল। এমন সময়ই কদম আলী দৌড়ে এসে জলমিয়ার গায়ের উপড় পড়ে একদম সোজা পচাঁ ডোবায় পড়ে দুজনে হাবু ডুবু খেতে লাগল। ডোবার পানি তো এমনিতেই পচাঁ তার উপর আবার চরম র্দূগন্ধ। তাদের দুজনার হৈ চৈতে আসে পাশের মানুষ ভাবল কি হল। ডোবার পাশে মানুষের যখন সমাগম হল তখন তারাও শুধু নাকটুকো বের করে চুপ করে রইলো। গাঁয়ের মাতব্বর আর জলমিয়া চোর পচাঁ ডোবায় একত্রে হাবুডুবু খাচ্ছে জানলে গায়েঁর মানুষের সামনে আর মান সম্মানের বালাই থাকবেনা।
আজ ভাদ্র মাসের শেষ দিন। ইতিমধ্যে অনেক কৃষকের ধানের চারা বপণ করাও শেষ। কয়েক দিন পরেই পুরো গ্রাম সবুজের লীলা ভূমিতে পরিনত হবে। বসত বাড়ী আর সড়ক ছাড়া চারিদিকেই সবুজ আর সবুজ। ঐ মুহুর্তে কোন বাঙ্গালীর ঘড়ে ফিরতে মন চাইবেনা। কচি ধান গাছের কোমল বাতাশ আর পাখির কিচ কিচ গানের সুর যে কোন পল্লি প্রেমিককে মাতাল করবেই। বাঙালীদের হৃদয় হতে বেসুরা কন্ঠেও গানের সুর ফেটে উঠবে।
আমি একা একা ঘুরে ফিরে
হারিয়ে গেলাম ঐ গাঁয়েরই মধ্যে খানে
নাম না জানা কত পাখির গানে গানে
সবুজ ঘাসের শিঁশির ভেজা পথের ধারে
একা একা বসে বসে কাটে যে দিন সুরে সুরে
সাঁঝের বেলা ধীরে ধীরে যতই চাই আসতে ফিরে
ততই যাই সবুজ গাঁয়ের প্রেমে পড়ে
মন যে আমার মানে নারে
সকল কিছু ফেলে আমি
যাই যে ছুটে ঐ গাঁয়েরই মায়ার টানে
সকল কিছু যাই যে ভুলে
পল্লী সুরের গানে গানে
রাত পোহালেই পহেলা আশ্বিন ও শুক্রবার। রাতের বেলাতেও সব পরিবারগুলো হিসাব নিকাশ নিয়ে বেশ ব্যস্ত। শুক্রবার মানেই তো হাটবার দিন। সাত দিনের বাজার একত্রে করতে হবে। গ্রামের সব পরিবারগুলো হাটে যাবে। কিন্তু সবাই হাটে যাবে বাজার করতে নয়, কেহ কেহ বেঁচতেও যাবে। অনেকেই নিজের ক্ষেতের শাক সবজি, হাঁস মুরগি এমনকি গাই গরুর দুধও বাজারে নিয়ে যাবে বিক্রি করার জন্য। এসব বিক্রি করে তারা তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় বাজার তেল নুন ইত্যাদি কিনবে। অনেকে আবার বরজ থেকে পান নিয়ে আসবে বেঁচতে। পান সুপাড়ি এসব সাধারণত হিন্দুরাই চাষ করে থাকে। পিংড়ী গ্রামের এক পাশে সব হিন্দুুরা থাকে। এক কথায় হিন্দুরা যে পাড়ায় থাকে তাকে হিন্দু পাড়া বলে। এ গ্রামে হিন্দু মুসলমানে কোন বিবাধ নেই। হিন্দুরাও হাটে বাজারে আসে। মুসলমানদের মত চাষাবাদ করে। মুসলমানরা লুঙ্গি পড়লেও হিন্দুরা কিন্তু ধূতি আর গলায় পৈতা ব্যবহার করে। তবে এটা সত্য যে সংখ্যা গরিষ্টতা কম বলে সকল কিছুতে মুসলমানদের উপড় নির্বরশীল হতে হয়। সেই সুযোগে তাদের অনেক জ্বালা পোহাতে হয় বটে। হাঁস-মুরগি বা গৃহপালিত পশু গরু কিংবা ছাগল চুরি তাদের সর্বনাশ করে। জলমিয়া ছাড়া এই কাজ আর কেহ করে না বললেই চলে। পুরো গাঁয়ের মানুষ তাকে এক নামে চিনে। তাহার ভাল নাম যে কি তাহা কেহই জানেনা। তাকে তার নাম জিজ্ঞাসা করলে সে উত্তর দেয় “আমার নাম জলমিয়া”
প্রত্যেক পিতামাতা নিশ্চই তার সন্তানের নাম ভাল রাখতে চায়। জলমিয়ার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম ঘটেনি। সে দেখতে খুবই খাটো, গায়ের রং কালো এবং তোতলা স্বভাবের সহ অশিক্ষিত ও যথেষ্ট বোকা বলেই হয়তো গাঁয়ের মানুষ জলিল নামটিকে বিকৃত করে জলমিয়া পর্যন্ত নিয়ে এসেছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৩৭:০৫ ৫১৫ বার পঠিত