সুখকাঁটা-আল রিআন

Home Page » সাহিত্য » সুখকাঁটা-আল রিআন
বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০১৪



untvvvvvigfgtledthumbnailjpg.png

চতুর্থ পর্ব শুরু—ধনী হলেও তাহার পোষাক পরিচ্ছেদ কিন্তু ততটা উন্নত নয়। কদম আলী একটা লুঙ্গি ও একটা সাদা গেঞ্জি পড়েন। তবে কোথাও বেড়াতে গেলে কিংবা ভাল কোন দাওয়াত পেলে লুঙ্গির উপড় একটা সাদা পাঞ্জাবি পড়েন। তবে অধিকাংশ গ্রামের মানুষই খালি পায়ে থাকেন। রাতে ঘুমাতে যাবার আগে পুকুর হতে পা ধুয়ে ঘরে প্রবেশ করে। তাদের এই সাদা মাঠা জীবনে কোন উচ্চ বিলাসী সখ নেই বললেই চলে। তাদের স্বপ্ন দু’বেলা দু মুঠো ডাল ভাত খেয়ে, তাতের দুটো কাপড় পড়ে জীবনটাকে উপভোগ করা।
আলতাব মাষ্টার এরচেয়েও সাধাসিধে একজন মানুষ। তাহর মত ভাল মানুষ এই গ্রামে দ্বিতীয়টি আর খুঁজে পাওয়া যাবেনা। তাহার জীবনে আপন বলতে কেহ নাই। এক কথায় গ্রামবাসীদের কাছে আলতাব মাষ্টার একজন মাটির মানুষ। তিনি এ গ্রামের মানুষ না হলেও সবাই তাহাকে ভালবাসে। এ গাঁয়ের মানুষ জীবনে কোন দিন স্কুলের বারান্দায়ও পা রাখে নায়। কারণ পুরো গ্রামের মধ্যে স্কুল মাদ্রাসা একটিও নাই। আলতাব মাষ্টার খোলা মাঠের মধ্যে একটি পুরাতন বট গাছের নীচে আঞ্জু-রঞ্জু নামে একটি পাঠশালা খুলেছে। সে পাঠশালায় গ্রামের ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষা দিয়ে থাকেন। আলতাব মাষ্টার কোন গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন তা সে নিজেও জানেনা। বহু দূরের পথ পেরিয়ে এসেছেন সেটা তাহার মনে আছে। পাকিস্তান আমলে তিনি মাত্র ফাইভ পাস নিয়ে একটি স্কুলে মাষ্টারি করতেন। এমন কিছু পুরাতন কাহিনী তাহার মনে আছে। ১৯৭১ সালে যখন স্বাধীনতার যুদ্ধ আরম্ভ হয় তখনও সে একটি প্রাইমারি স্কুলে মাষ্টারি করত। কিন্তু আলতাব একদিন স্কুল থেকে বাড়ী ফিরে দেখে তাহার দুই শিশু সন্তানকে পাক বাহিনীরা আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে। তার ঘর বাড়ী সব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। তাহার স্ত্রী ফুলমতি কোথায় যে হারিয়ে গেছে তাহা সে নিজেও জানেনা। এর কিছুদিন পর আলতাব মুুক্তি বাহিনীতে যোগ দেন। সামান্য ট্রেনিং নিয়ে শত্র”র উপর ঝাপিয়ে পরে। ছয় সাত মাসে অনেক পাক বাহিনীর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে আলতাব। একদিন সন্ধ্যায় আলতাবের পুরো ইউনিট ব্রিজ ধ্বংশের অপারেশনে বের হল। প্রত্যেকের হাতে বড় বড় বোমা আর বন্দুক। ঐ ব্রিজের ওপড়ই পাক বাহিনীর ঘাঁটি। এই ব্রিজটা নাশ করতে পারলেই পাক বাহিনীরা আর এই গ্রামের মধ্যে আসতে পারবেনা। আলতাব সহ আরো তিন জন ব্রিজে বোমা স্থাপন করে দূরে একটি টিলার উপর অপেক্ষা করিতে ছিলো। বেশ কিছুক্ষণ পর তুমুল গর্জনে বোমাটি ফেটে ব্রিজটি ধ্বংশ হলো এবং, অনেক পাক বাহিনীর প্রাণও নাশ হলো। কিন্তু আলতাবের চোখ গেল নদীর মধ্যে একটি কচুরি পানার উপর একটি শিশু বাচ্চার দিকে। তাদেরই বোমার আঘাতে নদী পথে যাওয়া একটি নৌকার উপর সে বোমার আগুন পরে সে নৌকার সব যাত্রী মারা যায় কিন্তু ঐ শিশু বাচ্চাটি কেমন করে যেন বেঁচে আছে। সে বাচ্চাটির কান্না দেখে আলতাবের নিজের বাচ্চাদের কথা মনে পরে। তখনি আলতাব বাচ্চাটিকে আনার জন্য ব্রিজের নিচে ছুটে যেতে চায় কিন্তু তার সঙ্গীরা তাকে বাধা দিয়ে বলে “না মাষ্টার, তুমি এমন কাম কইরনা। ব্রিজের নিচে এহন পাক বাহিনী আছে। তুমি গ্যলে ধরা পরবা।”
“ছবুর বাই, আমরা কারার জন্নি যুদ্ধ করি কইবার পারো ? ওই অতটুকো বাচ্চারা যদি না বাঁচে। আমরা দ্যশ স্বাধীন করমু কারার জন্নি। আমাদের জীবন তো শ্যাষ, আমাগো পোলা পানগো জন্নিতো আমরা যুদ্ধ করতাছি, আমার চোখের সামনে অতটুকো বাচ্চারে আমি মরতে দিতে পারমুনা। তাইলে আমি আমারে কোন দিন ক্ষমা করতে পারমুনা। ছবুর বাই, আমি যদি বাচ্চাটারে আনতে গিয়া, পাক বাহিনীর কাছে ধরা পরি, তাইলে তোমরা আমারে বাঁচানোর জন্নি তোমরা তোমাদের জীবন দিবানা। তোমাদের কাছে একটাই দাবি। আমার বাংলাদেশটারে স্বাধীন করবা।”
এইবলে আলতাব মাষ্টার তার সহযোগীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঐ বাচ্চটিকে বাঁচানোর জন্য ছুটে চলে যায়। পানির মধ্যে দিয়ে সাতার দিয়ে বাচ্চাটাকে নিয়ে কূলে আসা মাত্রই আলতাবকে চার পাশ থেকে পাকিস্তানী নর পিচাশ বাহিনীরা ঘিরে ধরে। বাচ্চাটিকে আলতাবের কোল থেকে টেনে নিয়ে পানির মধ্যে ফেলে দিয়ে অমন ভেজা অবস্থায় পাক বাহিনীর জীপে করে তুলে নিয়ে গেল তাদের ক্যাম্পে। তিন দিন অনাহারে রাখার পর বেশ ক’জন মুক্তিযোদ্ধাকে ধান সিঁড়ি নদীর তীরে নিয়ে চোখ বেধে হাটু র্পযন্ত পানিতে দাঁড় করিয়ে পাকিস্তনীরা গুলি করতে থাকে। তখন আলতাব একটু চালাকি করে ঘুড়ে দাঁড়ায়, যার ফলে আলতারেব গুলিটা ঠিক মাথায় না লেগে বুকের এক পাশে লেগেছে। কিন্তু বোকা মিলিটিরিরা সে ব্যাপারটি বুঝতে না পেরে চলে গেল। কিন্তু আলতাব গুরুতর আহত হল সেটি সত্য। প্রায় দুই দিন পর আলতাবের হুশ ফিরে দেখে আলতাব পিংড়ী গ্রামের এক ঘরে আশ্রয় পেয়েছে। স্বধীনতার পর আর এই গ্রাম ছাড়েনি। পুড়ো গ্রামে স্কুল না থাকায় তিনি এক দেড়শো বছরের একটি পুরানো বট গাছের নিচে আঞ্জু-রঞ্জু নামে একটি পাঠশালা খুলেছে। আঞ্জু-রঞ্জু হয়তো তার মৃত ছেলে মেয়ের নাম হবে।

সুখকাঁটা-৩

চান্দু হুজুর তার বাড়ীতে বসে গোলাপীর গর্ভের বাচ্চা নষ্ট করার জন্য এক প্রকার বন্য লতা পাতা দিয়ে কবিরাজী ঔষধ তৈরী করছে। এসব করার পিছনে চান্দুর একটা বদ উদ্দেশ্য আছে বটে। এই ঔষধ খেয়ে যদি গোলাপীর কোন কারণে মৃত সন্তান হয় তবে সে তার স্বামীর সোহাগ থেকে বঞ্চিত হবে। স্বামী আগের মত আর তাহাকে আর ভালবাসবেনা। হয়তো বা মৃত সন্তান হলে তখন বাবুলের কানে কু বুদ্ধি ঢাললে বাবুল ভাল মন্দ বিচার না করে রাগের মাথায় বউকে তালাকও দিয়ে দিতে পারে। স্বামী কতৃর্ক তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীদের আমাদের সমাজে খুব একটা দাম দেয়া হয়না। তখন সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে গোলাপির সাথে একটা সম্পর্ক তৈরী করে নেয়া যাবে। বাবুলের বউ এর মত অমন সুন্দরী মেয়ে মানুষের সাথে দুটো মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতে কার না মনে চাইবে। হুজুর হয়েছি বলে কি মনে কোন স্বাদ্ আল্লাদ নাই। শত হলেও এখন আমার ভরা যৌবন কাল।
চান্দু হুজুরের স্ত্রী কিন্তু তার স্বামীর মত নয়। সে ভরা যৌবনে তার স্বামীর মত চরিত্রহীনা হতে চায়না। শিউলি অন্য আট দশটা মেয়ের মত স্বামীর সোহাগে সোহাগী হয়ে সুখে সংসার করতে চায়। তাই স্বামীকে সে খুব ভালবাসে এবং সব সময় স্বামীর ভাল মন্দের দিকে খেয়াল রাখে। আজও স্বামীর পছন্দের খাবার রান্না করে স্বামীকে ডেকে বলে “কি গো নাইতে যাইবানা। দুফারতো অইয়া গ্যলো। আমার রান্দা ভাঢ়া তো সব শ্যাষ। যাও গাঙ্গে গিয়া দুইডা ডুব দিয়া আও। আইজ তোমার পছন্দের সালুন ডাইল দিয়া সাজনা রানছি।”
চান্দু তার ঔষধ বানানোর কাজে অত্যান্ত ব্যস্ত। সে শিউলির কথায় কেবলি বিরক্ত হচ্ছে। দোস্তের বউরে পাবার আগেই নিজের বউরে ভাল চোখে দেখে না চান্দু হুজুর। অনেকক্ষণ পর শিউলির কথায় উত্তর করে বলল “তোর রান্দা তুই খা গিয়া। তোর রান্দা মানষে খায়, ওয়াক থু।”
“তুমি আমার লগে এমন কইরা কতা কও ক্যান। আমি কি করছি।”
“এ কি ঢং! যা কামে যা ত্যাক্ত করিশ না। দ্যহোনা পত্ত বানাইতাছি।”
স্বামীর ব্যবহারে শিউলি দুঃখ পেয়ে চলে যাবার উদ্দেশ্যে দুই কদম হাঁটা মাত্রই চান্দু যে পিড়িঁতে বসে ঔষধ তৈরী করছে তার পিছনে কিছু লতা পাতা দেখিতে পাইলো যে পাতাগুলো শিউলির অচেনা নয়। যে পাতা রস কোন গর্ভবতী নারীকে খাওয়াইলে সে নারী মৃত সন্তান প্রসব করবে। শিউলি বিন্দু সময় অপেক্ষা করে তার স্বামীকে বলল “তুমি কইলা পত্ত বানাইতাছো। এইডা কি পত্ত না বিষ হেইডা আমি ভালাই জানি। কোন মায়ের আবার এ্যমন সব্বনাস করতাছো কও দেহি। তুমি ক্যন এ্যমন পাপ করো, কতো সাধনায় নিজেগোই একটা সাওয়াল পাওয়াল অয়না। তুমি আল্লার লগে কান্দা কাডি কইরা মাপ চাও। আর অক্ষণ এই পাতার রস ফালাইয়া দিবা।”
“তোর কতা মতো আমি চলমু। বেশি করলে তালাক দিয়া দিমু কইলাম।”
“তালাকের ঢড় দ্যখাইয়া আমার মুক তুমি বন্ধ রাকতে পারবানা। আমি একটা মাইয়া মানু অইয়া আর একটা মাইয়া মানষের ক্ষ্যাতি অইতে দিমুনা। আমি গেরামের ব্যবাক মানষেরে কইয়া দিমু।”
শিউলির সাহস দেখিয়া চান্দু বেশ নরম হয়ে বলিল “বৌ, আগে আমার কতাডা তো হুনবা, কি অইছে না অইছে। না জাইন্না আগেই আমার মতো একটা নিস্পাপ মানষের নামে আন্দো-মোন্দা কতা। আর ভাল লাগেনা।”
“কি কইবা কও ?”
“আমি হুজুর মানু। আমি কি কেউর ক্ষ্যাতি করতে পারি কও। আমাগো পাশের বাড়ীর জলমেয়া কয় দিন আগে একটা মাইয়ার লগে একটু ইয়ে করছিলো। আর ঐ মাইয়ায় পোয়াতি হইয়া এহন একটু পর পর বমি করে। আর জলমেয়ার তো ঘরে বউ আছে। হে চাইলেই নিকা করতে পারবোনা। তয় ঐ মাইয়াডার এহন কি অইবো। তারারে কেডা নিকা করবো কও! হের লাই¹া জলমিয়া আমারে হাতে পায় ধইরা কইলো এই পত্ত বানাইতে। তুমিতো জানো আমি আবার মানষের দুঃখ সইতে পারিনা। আর এই পত্ত ওই মাইয়াডার লাই¹া বানাইতেছি।”
“কি কইলা। জলমেয়া ! আমরার জলমেয়া !! গজাল জলমেয়া !!!”
“হ। তুমি য্যন আবার ওর বউরে কতায় কতায় কইয়া না দ্যও।”
শিউলি তার স্বামীর কথা গুলো খুব সহজে বিশ্বাস করে নিলো। এবং বারান্দার বাঁশের আড়া থেকে কাপড় নিয়ে পুকুড় ঘাটে গোসলের জন্য চলে গেল। ঘাড় থেকে বোঝা নামানোর মতো করে স্বস্তি ফেলে চান্দু হুজুর বলল “বেকুব মাইয়া মানু।”
কিছুক্ষণ পর ঔষধ তৈরী হলে চান্দু তারাতারি করে বাবুলের বাড়ী ঔষধটি পাঠিয়ে দিয়ে আসে। গোলাপি গত কালের চেয়ে আজ একটু সুস্থ তবে চান্দু তাকে যে পরামর্শ দিয়াছে তাতে করে মনে হয়না সে আর কোন দিন সুস্থ হবে।

আজ বৃহস্পতি বার। আগামী কাল শুক্রবার। এ গাঁয়ের হাট বার দিন। সপ্তাহের এই শেষের দু তিন টা দিন গাঁয়ের মানুষের ঘড়ে ঘড়ে বেশ অভাব লক্ষ্য করা যায়। কারণ এদের সপ্তাহে একটি দিনই সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় বাজার করতে হয়। হাটবারের প্রথম কয়েকটা দিন বেশ ভালই যায় কিন্তু শেষের দুটি দিন ধার দেনার মধ্যে দিয়েই পার করতে হয়। এর ঘরে তেল নেই তো ওর ঘরে নূন নেই। তবে নেই বলে এরা কিন্তু না খেয়ে উপোস করে না কিংবা তেল নূন ছাড়াই তরকারি রাঁধেনা। আসে পাশের ঘর থেকে একটি নিদিষ্ট পরিমান বাটিতে মেপে তেল বা নূন হাওলাত করে থাকে। হাটবারের পরের দিন ঐবাটিতেই মেপে আবার তা পরিশোধ করে। এমনি ভাবে টানা হেছড়া ও দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে চলে প্রত্যেকটি কৃষক পরিবার সহ অন্নান্য গেরস্থ পরিবারগুলো ।

পরী সেজে গুজে বাঁশ বাগানে মানিকের জন্য অপেক্ষা করিতেছে। পরীর অপেক্ষার ঘড়ির কাটা যেন পাল্লা দিয়ে চলিতেছে। এদিকে বিকাল হয়ে এলো তারাতারি বাড়ী ফিরতে হবে। তখন এমন একটা অস্থিরতা তার মধ্যে চলমান ছিল। অবশেষে পরী বাড়ি চলিয়া যাবার সিধান্ত নিবে এমন সময়ই পশ্চিম দিক থেকে মানিক হাটিয়া আসিতেছে। মানিকও একটু সাজিয়া আসিবার চেষ্টা করিলো। তাদের মত লোকের সাজা মানে লুঙ্গি ও একটা র্শাট পরিধান করে মুখে, মাথায় সরিষার তেল ব্যবহার করা। হাতে মুখে তেল দিলে চেহারাটা একটু চকচক করে বৈকি ! মানিককে বাঁশ বাগানের অতি নিকটে দেখে পরী অন্য দিকে ফিরিয়া তাকিয়ে রইলো। মানিক এদিক ওদিক তাকিয়ে হলুদ সেলোয়ার পড়া একটা মেয়েকে দেখে বলল “আফনে আইছেন। পরী কইছিলো আফনে আইবেন। দ্যখেন আমি গরিব ও দুঃখী মানু। আমার আছে এক বুক কষ্ট। আমারে ভালাবাইসা কোন দিন সুখী অইতে পারবেন না। আমারে মাফ কইরা দিয়েন কারণ, আমি এক জনরে খুবি ভালাবাসি, হে আমার ছোড ব্যলার বন্ধু। কিন্তু আমি তারে হয়তো কোন দিন ই এ কতাডা কইতে পারমুনা। তারপরও…। সে আফনার সই পরী। আমি তারারেই ভালাবাসি।”
মানিক এত কথা বলার পরও মেয়েটি মানিকের দিকে একবার ফিরে তাকালো না। মানিক জানেনা সে যার সাথে কথা বলছে সেই পরী। এরপর মানিক আর কিছু না বলে চলে যাবার জন্য হাটা আরম্ভ করলে পরী পিছন ফিরে মানিককে বলল ” কি গো চাষী, তুমি তো খুব পাষান। এই দিনে দুপুরে ডাকাইতের মতন আমার মনটারে নিয়া যাইতাছো।”
কন্ঠটি খুবই পরিচিত মনে হবার কারণে হাটা থামিয়ে মানিক পিছন ফিরে তাকিয়ে প্রথমেই পরীকে দেখতে পেয়ে মানিক লজ্জায় নিজের জিব্বায় কামর কেটে নিচের দিকে দৃষ্টি করে রইলো। এরপর দুজনেই চুপচাপ। অনেকক্ষণ কোন কথা নাই। এরপর পরী আবার বলল “তুমি আমারে ভালাবাসো আগেতো কোন দিন কওনায়। আমিও তোমারে ম্যালা ভালবাসি। সেই কতাডা তোমারে কোন দিন কইতে সাহস পাই নাই। ম্যাঘ না চাইতেই দ্যওই পাইলাম। আইজ আমার এত খুশি লাগতাছে আমি তোমারে বুঝাইতে পারমুনা।”
“আল্লার দারে আমারও আর কিছু চাওনের নাই। আমি ভাবতাম আমার জীবনে কোন দিন সুখ আইবনা। পরী তুমি সারাডা জীবন আমার পাশে থাইক্ক।”
“আইজ সন্ধ্যায় আমুনে, দিনের ব্যালা কে কোন জায়গাইদ্দা দেইখা ফালাইবো পরে সব্বনাস অইয়া যাইবো।”
পরী মহা আনন্দে বাড়ী ফিরলো। মানিক পরীর সামনে এতই লজ্জা পেয়েছে যে তখন সে কথা বলার ভাষা খুঁজে পায়নি। তবে পরী চলে যাবার পরে নিজের সাথে খুব রাগ করে বলল “ইস পরীরে এত কাছে পাইয়াও আর কিছু মিষ্টি মিষ্টি কতা কইতে পারলাম না।”
যৌবন নদীতে র্দীঘ কাল তরী ভাসাইবার পর তারা দুজনই আজ নৌকা ভিরাইবার ঘাট খুঁজিয়া পাইয়াছে। দুটি মন আজ প্রেমের সন্ধান পেয়েছে। প্রেমের অনুভুতি গুলো যে ভাবে পরীর মধ্যে ফুটিয়া উঠেছিল যেন বিশাল সমুদ্রের মধ্যে একটি পদ্ম ফুটিয়া আছে। তবে মানিকের খুশিটা ফুটে না উঠলেও তার চেহারায় তা অনুভব করা যায়।

দলু মিয়া আদার ব্যাপারির হাতে মার খেয়ে ক,দিন থেকে অসুস্থ। তাই সে কাজে যেতে পারছেনা। দলু মিয়া যাদের কাজ করে তারা প্রত্যেক দিন এসে দলু মিয়ার সাথে রাগারাগি করে যায়। দলু মিয়া পেশায় কৃষক নয়। সে মূলত মানুষের বাড়ী থেকে গাভীর দুধ সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করে এবং মাস শেষে গাভীর মালিককে শতকরা সত্তর ভাগ টাকা দিতে হয়। এরপর বাকি সময় তিনি বিভিন্ন কাজ করে থাকেন। কারো বাড়ীতে খড়ি কাটা, কারো বাড়ীতে নারিকেল গাছ পরিস্কার করা, আবার কারো পুকুড় সেচে মাছ ধরার কাজ করে থাকে। তবে দলু যাই করে না কেন সব কাজ থেকেই তার আয় হয়। দলুর স্ত্রী অনেক আগেই মারা গিয়াছে। আর সন্তান বলতে আছে একমাত্র কন্যা কইতুরী। সামান্য আয়ের এই দলু মিয়া অনেক ধার দেনা করে তার কন্যা কে গত বছর পাশের গ্রামের এক মাঝি ছেলের কাছে বিবাহ দিয়েছিল। মহা পরিতাপের বিষয় কইতুরী পাঁচ মাস স্বামীর সংসার করতে না করতেই তার স্বামী যক্ষা ব্যাধিতে ইন্তেকাল করেন। বিধবা কন্যাকে শ্বশুড় বাড়ীর লোকজন আর

বাংলাদেশ সময়: ১৫:৫৫:৪২   ৫৮৬ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সাহিত্য’র আরও খবর


সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন: স্বপন চক্রবর্তী
ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা “আমি তো গাঁয়ের মেয়ে ”
৫০ বছরের গৌরব নিয়ে জাবির বাংলা বিভাগ বিশাল ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উৎসব আয়োজন করেছে
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা- ‘তোমার খোঁজে ‘
অতুলপ্রসাদ সেন: ৩য় (শেষ ) পর্ব-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন;পর্ব ২-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন-স্বপন চক্রবর্তী
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা ” যাবে দাদু ভাই ?”
বাদল দিনে- হাসান মিয়া
ইমাম শিকদারের কবিতা ‘ছোট্ট শিশু’

আর্কাইভ