তমালঃনিজস্ব প্রতিবেদক :নেত্রকোণার দুর্গাপুরে প্রাবন্ধিক শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকারের আবক্ষ ভাস্কর্য উম্মোচন করা হয়েছে।
শনিবার বিকালে উপজেলার বিরিশিরি ইউনিয়নের গাভিনা গ্রামের জলসিঁড়ি প্রাঙ্গনে শারদ সম্মিলনীতে এই আবক্ষ ভাস্কর্য উম্মোচন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাস।
জলসিঁড়ি কাগজ ও পাঠাগারের সম্পাদক দীপক সরকার জানান, ২০০২ সাল থেকে সাহিত্য- সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক কাগজ জলসিঁড়ি প্রকাশ হয়ে আসছে। পরে কাগজটি এবছরের জানুয়ারিতে স্থাপন করে পাঠাগার। এখানে নিয়মিত সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চাও হয়।
তিনি জানান, ভাস্কর অখিল পাল তিন ফুট তিন ইঞ্চি উচ্চতার এই আবক্ষ ভাস্কর্যটি নির্মান করেন। অস্থায়ীভাবে ভাস্কর্যটি এখন পাঠাগারে রাখা আছে। পরে পাঠাগার প্রাঙ্গণে রবীন্দ্র-নজরুল মঞ্চের পাশে স্থায়ীভাবে স্থাপন করা হবে।
এর আগে এ বছরের ১৪ জানুয়ারি কবি নির্মলেন্দু গুণের আবক্ষ ভাস্কর্য স্থাপন করা হয় জলসিঁড়িতে জানান দীপক সরকার ।
তিনি আরো জানান, জলসিঁড়ি প্রাঙ্গণে রবীন্দ্র ও নজরুলেরও আবক্ষ ভাস্কর্য স্থাপনে কাজ চলছে।
রবীন্দ্র-নজরুল মঞ্চে জলসিঁিড়ি পাঠাগার সভাপতি মানেশ সাহার সভাপতিত্বে শারদ সম্মিলনীতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, শহীদ খান, রেখা বিশ্বাস, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রুহুল আমীন চুন্নু, রতন সাহা, আব্দুল্লাহ হক, কামাল পাশা, আদিত্য ফাল্গুনী , ভাস্কর অখিল পাল ।
ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে দীপক সরকার বলেন, নতুন প্রজন্মকে সাহিত্য-সংস্কৃতিতে উৎসাহিত এবং তাদের মাঝে এই মণীষীদের জীবনাদর্শ ছড়িয়ে দিতেই এই উদ্যেগ নেয়া হয়েছে।
মঙ্গলব্রতী মানুষ যতীন সরকার:
সংস্কৃতির ধারবাহিক সংগ্রামের এক অনির্বাণ যোদ্ধা অধ্যাপক যতীন সরকার।
সাম্যবাদী ও মানবতাবাদী লেখক , প্রাবন্ধিক যতীন সরকার রাষ্ট্রের সর্ব্বোচ্চ সম্মান স্বাধীনতা পুরষ্কার ,বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরষ্কার,রবীন্দ্র পদকসহ অসংখ্য পুরস্কার ,পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন ।
নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম চন্দ পাড়ায় ১৯৩৬ সালের ১৮ আগষ্ট এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম যতীন সরকারের। পরিবারটিতে অভাব-অনটন থাকলেও গ্রামীন সম্ভ্রান্ত শিক্ষিত পরিবার হওয়ায় শৈশবেই শিখেছিলেন সংস্কৃত সাহিত্যের পাঠ। শিক্ষাব্রতী ঠাকুরদা রাম দয়াল সরকারের কাছ থেকে নিয়েছেন রামায়ন, মহাভারত ,বিকেকান্দের জীবনী , রাম কৃষ্ণের কথা মৃত পাঠ। আর্থিক দূরাবস্থার কারনে শিক্ষা জীবনকে টেনে নিতে টিউশন , শিক্ষকতা থেকে শুরু করে পান সিগারেটের দোকানদারী তিনি করেছেন । এভাবেই ১৯৫৪ সালে মেট্রিকুলেশন এবং ১৯৬৩ সালে রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এম এ পাশ করেন। পরে তিনি ১৯৬৪ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ময়মনসিংহ নাসিরাবাদ কলেজে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন। বর্তমানে তিনি সহধর্মীনি কাননবালা সরকার সহ নেত্রকোনা পৌর শহরের সাতপাই এলাকায় বান প্রস্থ বাসভবনে বসবাস করছেন।
পঞ্চাশ এর দশকে মার্কস বাদের দীক্ষা নেন কমরেড জ্যোতিষ বোস ও অজয় রায়ের কাছ থেকে। শান্তি ও মানবতার পক্ষে বাল্যকাল থেকেই গড়ে উঠা তার জীবন দর্শন হচেছ সংগ্রামের , সহজের সাধনার। এভাবেই কবি গুরুর সহজ জীবনদর্শনের পথে এসে মিলে গেছে যতীন সরকারের পথ।
সমাজ প্রগতির ধারাকে মুক্তির সমুদ্রে পৌছে দিতে অন্তহীন চেষ্টার এই মানুষটি রত্ন সন্ধানীর চোখে স্বদেশের ঐতিহ্যের গভীরে তাকিয়েছেন। চিরায়ত ধ্রুব তারা যতীন সরকার ইতিহাস আর সাহিত্যের আলোচনায় মস্তিষ্ক ভিত্তিক মনোবিজ্ঞানের সৃজনশীল প্রয়োগ ঘটিয়ে মধ্য বিত্ত ও কৃষক চৈতন্যের অনেক অজানা দিক তুলে ধরেছেন। সংস্কৃতিকে সকল মানবিক কর্মকান্ডের লক্ষ্যবিন্দু এবং রাজনীতিকে সে লক্ষ্যবিন্দুতে পৌছার পথ হিসেবে দেখেছেন।
সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা,পাকিস্থানের জন্ম -মৃত্যু দর্শন , মানবধর্ম ও সমাজ বিপ্লব ,নিয়তীবাদ ও বিজ্ঞান চেতনাসহ আত্মজীবনী মূলক রচনা, জীবনী গ্রন্থ,সম্পাদিত গ্রন্থসহ প্রবন্ধে ৩৬টি বই তার প্রকাশিত হয়েছে।
ধর্মতন্ত্র, মৌলবাদ, অসাম্য আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে ৭৯ বছরের মঙ্গলব্রতী মানুষ যতীন সরকার দিশা দেখিয়ে চলেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ৮:৫৬:৫৭ ৩৯৮ বার পঠিত