গোদাগাড়ী (রাজশাহী) প্রতিনিধি: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (প্রেমতলী) স্বাস্থ্য সেবার সকল সুযোগ সুবিধা থাকলেও অসাধু ডাক্তার ও স্টাফদের কারনে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই উপজেলার সহজ সরল সাধারণ মানুষ। স্বাস্থ্য সেবাকে নিশ্চিত করার জন্য এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১শয্য থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করে গত দুই মাস আগে কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এছাড়াও প্যথোলজী বিভাগ, অপারেশন থিয়েটার, এ-ক্সরে মেশিন, অভিজ্ঞ ডাক্তার, ৩০ বছরের উর্ধে মহিলাদের জরায়ুর ক্যান্সার ও ক্ষত, কালাজ্বরের এম্বিজোমির মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান সহ সকল সুযোগ সুবিধা থাকলেও আসাধু ডাক্তার কামরুজ্জামান রানা, সিনিয়র ষ্টাফ নার্স আনসারী ও আনসারীর স্ত্রী সিনিয়র স্টাফ নার্স কারীমা খাতুন এদের কারনে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার সাধারণ মানুষ। শুধু তাই নয় আনেককে দিতে হচ্ছে জীবন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এক যুগেরও বেশি সময় আগে ডা. কামারুজ্জামান রানা গোদাগাড়ী উপজেলা (প্রেমতলী) স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) পদে যোগ দেন। দীর্ঘদিন আগে তাকে প্রথমে পাকড়ি ও পরে মান্ডইল সুন্দরপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাগজে কলমে পাঠানো হলেও এই সমস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে তিনি যাননি একদিনও। ১২ বছর ধরে ডেপুটেশন নিয়ে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সপ্তাহে দু’দিন দায়িত্ব পালন করেন। সপ্তাহের প্রতি শুক্র ও মঙ্গলবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিনামূল্য হাজার হাজার রোগীকে চিকিৎসা দেন। এসময় তার সঙ্গে থাকেন সিনিয়র স্টাফ নার্স আনসারী। বিনা মূল্যে চিকিৎসার আড়ালে তিনি রোগীদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেওয়া থেকে সরিয়ে নিয়ে পাঠিয়ে দেন তার চুক্তিকৃত রাজশাহী শহরের ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে। এছাড়াও তিনি রোগীদের ডেকে নেন উপজেলার বিদিপুর হাটে অবস্থিত সেবা ফার্মেসিতে। এই ফার্মেসিতে তিনি সপ্তাহে দুই দিন রবি ও বুধবার টাকার বিনিময়ে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেন। এমনকি তিনি ঐ সকল রোগীদের কারনে অকারনে পাঠিয়ে দেন বিভিন্ন পরীক্ষার অজুহাতে রাজশাহীতে চুক্তিকৃত ক্লিনিক ও ডায়গনষ্টিক সেন্টারে।
এদিকে সিনিয়র স্টাফ নার্স আনসারির বসন্তপুর এলাকায় তার নিজস্ব ঔষুধের ফার্মেসী আছে। ওই ফার্মেসীতেও ডা: কামরুজ্জামান রানা আনসারীকে সহযোগীতা করার জন্য টাকার বিনিময়ে রোগী দেখেন। এছাড়াও ডা: কামরুজ্জামান রানার বিরুদ্ধে তার চুক্তিকৃত ক্লিনিকে এই উপজেলার সহজ সরল রোগীদের নিয়ে গিয়ে অপেরেশন এর নামে রোগীদের সাথে প্রতারনা করে থাকেন। এমনকি তার বিরুদ্ধে রাজশাহীর ক্লিনিকে রোগী অপেরেশন করতে গিয়ে রোগী মেরে ফেলার অভিযোগ রয়েছে। তার কন্ট্রক্টকৃত পদ্মা ক্লিনিকে নিজ হাতে অপারেশনকৃত রোগী গোগ্রাম ইউনিয়নের আদিবাসী ইদোলপুর কান্তপাসার সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বাবুলাল গত মঙ্গলবার রাতে মারা যান। তিনি গত মাসের ২৪ তারিখে পদ্মা ক্লিনিকে শিক্ষক বাবুলালের অস্ত্রপাচার করেন। অস্ত্রপাচারর পরেই বাবুলারের অবস্থা আশংকা হলে কৌশলে তাকে পদ্মা ক্লিনিক থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও প্রায় চার বছর আগে উপজেলার প্রেমতলী খেতুর গ্রামের রোগী আব্দুর রশিদকে রাজশাহীর পদ্মা ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে ফিসচুলা অপারেশন করার কিছুদিন পর ওই রোগী সুস্থ্য না হয়ে মারা যান। এদিকে সিনিয়র স্টাফ নার্স কারীমা খাতুন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তিকৃত রোগীদের ডাক্তার কারুজ্জামানের কাছে চিকিৎসার জন্য কৌশলে পাঠিয়ে দেন। যে সকল রোগী ডা: কামরুজ্জামানের রানার কাছে চিকিৎসা নিতে যায়না সে সকল রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে শিক্ষক বাবুলালের মৃত্যুতে গোদাগাড়ীবাসী ডা: কামরুজ্জামানের শাস্তির জোর দাবী তুলেছেন।
ডা: কামরুজ্জামান রানা তার কর্মস্থল ছেড়ে দিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে রোগীদের সাথে প্রতারনা করার বিষয়ে উপজেলা প:প ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. হোসেন আলী বলেন, এক বছর আগে তিনি গোদাগাড়ীতে যোগদান করে দেখলেন, ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. কামারুজ্জামান রানাসহ কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার শুকুর উদ্দীন দুজনেই ডেপুটেশনে। এ অবস্থায় ওই এলাকার অসহায় রোগিদের কথা ভেবে তিনি শুকুর উদ্দীনের ডেপুটেশন বাতিলের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত ডা. রানা ডেপুটেশনেই আছেন। কিন্তু কেনÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রেমতলীর কিছু কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ডাক্তার রানার পক্ষে আছেন। এ কারণে তাঁর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হলেও তা কার্যকর সম্ভব হয় না
বাংলাদেশ সময়: ১১:১৬:২৭ ৩২৮ বার পঠিত