বঙ্গ-নিউজ:এবার ধর্মীয় অনুভূতির উপর আঘাত করলেন সরকারের টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। তিনি সরাসরি মুসলমানদের পবিত্র হজের বিরুদ্ধে কথা বললেন। বলেছেন, আমি হজ আর তাবলীগ জামাতের দুটির ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীর বিরোধী। তার চেয়েও হজ ও তাবলীগ জামাতের বেশি বিরোধী।রোববার বিকেলে নিউ ইয়র্কে জ্যাকসন হাইটসের একটি হোটেলে নিউ ইয়র্কস্থ টাঙ্গাইলবাসীদের সাথে এক মতবিনিময়কালে একথা বলেন। তিনি তার বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তনয় সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিষয়ে মন্তব্য করেন। তিনি প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্দেশ্যে বলেন, কথায় কথায় আপনারা জয়কে টানেন কেন। ‘জয় ভাই‘ কে? জয় বাংলাদেশ সরকারের কেউ নয়। তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ারও কেউ নন। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিশনে অনুষ্ঠিত ‘টক্ শো’রও সমালোচনা করেন। মন্ত্রীর পবিত্র হজের বিরুদ্ধে এ ধরনের বক্তব্য রাখার পর স্থানীয় প্রবাসীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সংবাদটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষুব্ধ প্রবাসীদের অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, এর আগেও এ মন্ত্রী একাধিকবার অসংলগ্ন কথা বলেছেন। তাকে এখনো মন্ত্রিসভায় রাখায় তারা প্রশ্ন তুলেছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতেই সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে মন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্যে বিস্মিত দলের কর্মী ও সমর্থকরা। সভাস্থলেই অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করলে একপর্যায়ে মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে নিউ ইয়র্ক সফর করছেন ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী।
তার চেয়েও হজ ও তাবলীগ জামাতের বেশি বিরোধী। তিনি বলেন, এ হজে যে কত ম্যানপাওয়ার নষ্ট হয়। হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গিয়েছে। এদের কোনো কাম নাই। এদের কোনো প্রডাকশন নাই। শুধু রিডাকশন দিচ্ছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা দিয়ে আসছে। মন্ত্রী বলেন, এভারেজে যদি বাংলাদেশ থেকে এক লাখ লোক হজে যায় প্রত্যেকের ৫ হাজার টাকা করে ৫০০ কোটি টাকা খরচ হয়। তিনি হজের শুরু প্রসঙ্গে বলেন, আব্দুল্লাহর পুত্র মোহাম্মদ চিন্তা করল এ জাজিরাতুল আরবের লোকেরা কিভাবে চলবে। তারা তো ছিল ডাকাত। তখন একটা ব্যবস্থা করলো যে আমার অনুসারিরা প্রতিবছর একবার একসাথে মিলিত হবে। এরমধ্য দিয়ে একটা আয়-ইনকামের ব্যবস্থা হবে।
তাবলীগ জামাতের সমালোচনা করে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, তাবলীগ জামাত প্রতি বছর ২০ লাখ লোকের জমায়েত করে। নিজেদেরতো কোনো কাজ নেই। সারাদেশের গাড়িঘোড়া তারা বন্ধ করে দেয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত একজন প্রবাসী মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন কারণ বাংলাদেশের কম্পিউটার ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক কানেকটিভিটি কোন পর্যায়ে। আমরা জানতে পেরেছি এ ব্যাপারে জয় ভাই ইন্টারনেটের কানেকশনের কাজ করছেন। এসময় কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে দেখা যায় মন্ত্রি আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে। তিনি এসময় বলেন, জয় ভাইকে। পাশ থেকে এসময় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বলে উঠেন, ‘সজীব ওয়াজেদ জয়’। মন্ত্রী বলে উঠেন, সে করার কে? এসময় প্রশ্নকর্তা বলেন, তার তো এ ব্যাপারে প্ল্যান রয়েছেই। মন্ত্রী এবার বলেন, ও সেটা বলেন, ওনার একটা প্ল্যান আছে। এসময় মন্ত্রী তার ডান পাশে উপবিষ্ট যুক্তরাষ্ট্র সভাপতি এবং একজন প্রবাসীকে দেখিয়ে বলেন, এ ধরনের প্ল্যান সিদ্দিকুর রহমান করতে পারে, সে-ও করতে পারে। জয় কম্পিউটার বা ইনফরমেশন টেকনোলজি সায়েন্টিস্ট। তার নিজস্ব পরিকল্পনা আছে। সরকার জনগণের। জয় বাংলাদেশ সরকারের কেউ নয়। তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ারও কেউ নন। তিনি তার মায়ের তথ্য উপদেষ্টা। এটাও ঠিক আছে। তিনি শিক্ষক সেটাও ঠিক আছে। তিনি কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন না। সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সরকার। কার্যকর করেন মন্ত্রী। ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় যা কিছু তার দায় মন্ত্রীর। বর্তমান মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর দায়িত্ব। এখানে জয়ের কিছু নাই। মন্ত্রী বলেন, একজন একটি বই লিখেছেন। সে বইয়ের লেখকের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। যিনি পড়াচ্ছেন এবং পড়ছেন দায়-দায়িত্ব তাদের। প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে এসময় মন্ত্রী বলেন, কথায় কথায় আপনারা জয়কে টানেন কেন।
মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী প্রবাসীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা বিদেশে এসেছেন কামলা দিতে এবং সবসময় কামলাই দিবেন। রাজনীতি করার দরকার কি? টিভির টক শো’র সমালোচনা করেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা রাগ হলে দেশে একটা গালি দেই চু..নি (অশ্রাব্য একটি গালি)। এসময় হলভর্তি প্রবাসীদের বিস্মিত পিনপতন নীরবতা। মন্ত্রী ওই গালির সাথে মিল রেখে টকশোতে অংশগ্রহণকারিদের ‘টক মারানি’ বলে আখ্যায়িত করেন। মন্ত্রী বলেন, ওয়ান এলিভেনের পর আমি যাদের কাছে চার লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিলাম। এক লাখ পেয়েছি। তাদের কোনো তদবির আমি এখন রক্ষা করি না।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৩৯:১১ ৩৪৫ বার পঠিত