বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে পর্যাপ্ত বই না থাকায় লেখাপড়ায় নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন জগন্নাথের শিক্ষার্থীরা। গ্রন্থাগারে বই তাকে না রেখে রাখা হয়েছে লাইব্রেরির পেছনের দিকে এক বদ্ধ কক্ষে।শিক্ষার্থীকে বই পড়তে হলে গ্রন্থাগারের সামনের দিকের ছোট ছোট বাক্সে রাখা তালিকা দেখে বইয়ের নাম এবং ক্রমিক নং খুঁজে বের করে তা দিতে হয় সহযোগীর কাছে। তিনি খুঁজে বের করে বই হস্তান্তর করেন শিক্ষর্থীর হাতে। আর একজন শিক্ষার্থী একত্রে দুটির বেশি বই নিতে পারেন না। বই খুঁজে বের করাটা অনেক কষ্টসাধ্য বলেও অনেকে অভিযোগ করেন। বই খোঁজার ঝামেলার কারণেও গ্রন্থাগারে এসে বই পড়তে চান না বলেও জানালেন অনেক শিক্ষার্থী।
গ্রন্থাগারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বই পড়ার জন্য এই ব্যবস্থা করার মূল কারণ হলো শিক্ষার্থীরা বই পড়ার ফাঁকে বইয়ের পাতা কেটে নিয়ে যান। আর তাই এ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
গ্রন্থাগারের পাঠকক্ষে নেই পর্যাপ্তসংখ্যক বই, তারপর সেখানে নেই কোনো ফটোকপি মেশিন এবং নেই বই ইস্যু করার সুবিধা। ফলে অধ্যয়ন করতে আসা শিক্ষার্থীদের একমাত্র অবলম্বন হাতে করা নোট। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকে সকাল আটটা বিকেল চারটা পর্যন্ত।
এর মধ্যে বিভিন্ন সময় থাকে বিভিন্ন ক্লাস ও পরীক্ষা। ফলে গ্রন্থাগারে এসে পড়াশোনার সুযোগটা সব সময় হয়ে ওঠে না সবার। এ বিষয়ে এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কোনো আবাসিক সুবিধা। ফলে যাতায়াতেই চলে যাচ্ছে দিনের বেশিরভাগ সময় আর ক্লাস করতে গেলে গ্রন্থাগারে আসার সুযোগই হয় না।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অশোক কুমার শাহা বলেন, “পৃথিবীর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন গ্রন্থাগার রয়েছে বলে আমার জানা নেই, শিক্ষার্থীরা বই পড়বে বইয়ের তাক থেকে বই নিয়ে এবং যত খুশি তত বই তারা পড়বে। যদি গ্রন্থাগারের বই পড়ার সুবিধার জন্য কিংবা বইয়ের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আরো কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিয়োগের দরকার হয় তবে সেটা করতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “একটা বিশ্ববিদ্যালয় তখনই প্রকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ওঠে যখন তার গ্রন্থাগার সমৃদ্ধ হয় এবং যত দিন না পর্যন্ত ছাত্র-শিক্ষকরা লাইব্রেরিমুখী না হবেন ততদিন পর্যন্ত পড়াশোনার মান বাড়বে না। তাই গ্রন্থাগারকে যাতে করে ছাত্র-শিক্ষক সবার জন্য পড়ার উপযোগী করে তোলা যায় সেই ব্যবস্থা খুব দ্রুতই নেয়া উচিত। এ লক্ষ্যে গ্রন্থাগারে বইয়ের সরবরাহ বাড়াতে হবে এবং বই ইস্যুর ব্যবস্থা করতে হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর যেসব বিভাগ খোলা হয়েছে তার বেশিরভাগ বিভাগেই নেই সেমিনার লাইব্রেরি। সেমিনার না থাকা বিভাগগুলো হলো, ল, নৃবিজ্ঞান, মাইক্রোবাইওলোজি, ফার্মেসি এবং সিএসই। এসব বিভাগের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করতে হলে বাধ্য হয়েই যেতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো এসব বিভাগের হাতেগোনা কিছু বই ছাড়া তেমন কোনো বই নেই কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, “প্রতি বিভাগে কমপক্ষে ৫০ হাজার করে ১৫ লাখ টাকা বই কেনার জন্য বাজেট দেয়া হয়েছে।”
এই স্বল্প বাজেটে কতটুকু বইয়ের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “চাহিদার তুলনায় এই বাজেট নিতান্তই ক্ষুদ্র তবে যদি প্রতিবছর এরূপভাবে কিছু কিছু বই কেনা সম্ভব হয় তবে এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে।”
গ্রন্থাগারের সময়সীমা বাড়ানোর ব্যাপারে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন এমবিএ কোর্স খোলা হয়েছে, যার ফলে গ্রন্থাগার কিছুদিনের মধ্যেই দুই বেলাই খোলা রাখা হবে।”
বই ইস্যুর ব্যাপারে তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন বই খোঁজার জন্য ডিজিটাল পদ্ধতি চালু আছে, সেই ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে এবং অবশ্যই বই ইস্যুর ব্যবস্থা থাকা উচিত।”
বাংলাদেশ সময়: ১৪:০০:১১ ৫৮৯ বার পঠিত